ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের ৪ বছরের দ্বন্দ্ব নিরসন

এখন থেকে এডিপি বরাদ্দ ১৪ খাতে

প্রকাশিত: ০৪:২৭, ১৯ এপ্রিল ২০১৫

এখন থেকে এডিপি বরাদ্দ ১৪ খাতে

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ এতদিন ১৭টি খাতে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি) অর্থ বরাদ্দ দেয়া হলেও তা আর থাকছে না। আগামী ২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে খাত সংখ্যা কমিয়ে ১৪টিতে বরাদ্দ দেয়া হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা কমিশনের মোট ৩০টি খাতের মধ্যে সমন্বয় করতেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এর মধ্য দিয়ে ৩০-৪০ বছর ধরে চলতে থাকা দুই মন্ত্রণালয়ের মধ্যে খাত সংক্রান্ত জটিলতার অবসান হচ্ছে বলে আশা করছে সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল জনকণ্ঠকে বলেন, অর্থ ও পরিকল্পনা এই দুটো মন্ত্রণালয়ের আলাদা খাত রয়েছে। ফলে খাতভিত্তিক বিশ্লেষণ, অর্থ বরাদ্দ ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে কিছুটা জটিলতা দেখা দেয়। মূলত এসব জটিলতা দূর করতেই এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক আগামী অর্থবছর থেকে ১৪টি খাত ধরে উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হবে। অর্থ ও পরিকল্পনা উভয় মন্ত্রণালয়ই এটি অনুসরণ করবে। তবে খাতগুলোর অধীনে উপখাত এখনও নির্ধারিত হয়নি। এক্ষেত্রে আরও যাচাই-বাছাই করতে হবে। সূত্র জানায়, বর্তমানে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে (এডিপি) ১৭টি খাত রয়েছে। পরিকল্পনা কমিশন এসব খাত নির্ধারণ করে থাকে। অন্যদিকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনে খাত ১৩টি। উন্নয়ন কার্যক্রমের সুবিধার্থে এ খাতগুলোকে সমন্বয় করে ১৪টিতে নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। সম্প্রতি রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ বিষয়ে এক সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। নতুন নির্ধারিত অভিন্ন খাতগুলো হচ্ছে, জেনারেল পাবলিক সার্ভিসেস, প্রতিরক্ষা, জনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা, শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবা, কৃষি, বিদ্যুত ও জ্বালানি, পরিবহন ও যোগাযোগ, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন, পরিবেশ সুরক্ষা, গৃহায়ন, স্বাস্থ্য, বিনোদন, সংস্কৃতি ও ধর্ম, শিক্ষা ও প্রযুক্তি এবং সামাজিক নিরাপত্তা। পরিকল্পনা কমিশন জানায়, উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন, এর জন্য প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ এবং এ সংক্রান্ত প্রশাসনিক জটিলতা দূর করতে ‘রেশনালাইজেশন অব সেক্টরস ইন ডেভেলপমেন্ট প্ল্যানিং এ্যান্ড বাজেটিং’ শীর্ষক একটি মূল্যায়ন উপস্থাপন করে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)। এতে বলা হয়, অর্থনীতির খাতগুলোকে অর্থ মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় ভিন্ন ভিন্নভাবে সংজ্ঞায়ন ও নির্ধারণ করে থাকে। এর ফলে যে সমস্যা হয় তা হলো, পরিভাষাগত জটিলতা, একটি মন্ত্রণালয়ের একাধিক খাতে অন্তর্ভুক্ত হওয়া, একই ধরনের প্রকল্পের বিভিন্ন খাতে অন্তর্ভুক্ত হওয়া, এডিপি বাস্তবায়ন ও সম্পদ বরাদ্দ সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমে সমন্বয়ের ঘাটতি এবং প্রকল্প পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়নে জটিলতা। এ বিষয়ে খাত সমন্বয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম বলেন, দুই মন্ত্রণালয়ের খাতগুলোকে এক সঙ্গে করে মোট ১৪টি খাত করার প্রস্তাব দিয়েছি। বর্তমানে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর কার্যক্রমের ধরন এবং উন্নয়নের চাহিদা বিবেচনা করে এটা করা হয়েছে। কেননা দীর্ঘদিন ধরে দুই মন্ত্রণালয়ের খাত সংক্রান্ত অসামঞ্জস্যতা ছিল। বাজেটে বরাদ্দ দুইভাবে প্রতিফলিত হতো। যেমন কৃষি খাত যখন অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ধরা হতো তখন ৫টি মন্ত্রণালয়ের তথ্য থাকত। আবার একই কৃষি খাত যখন পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে ধরা হতো তখন ৯টি মন্ত্রণালয়ের তথ্য থাকত। ফলে প্রকৃত চিত্র উঠে আসত না। তাছাড়া বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফও দীর্ঘদিন ধরে তাগাদা দিচ্ছিল, যাতে আমরা খাত সমন্বয় করি। এসব দিক বিবেচনা করে খাতগুলো সমন্বয়ের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এতে একমত হয়ে একটি ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে দুই গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে (এডিপি) বর্তমানে পরিকল্পনা কমিশনের নির্ধারিত ১৭টি খাত হচ্ছে, কৃষি-পল্লী উন্নয়ন ও পল্লী প্রতিষ্ঠান, পানিসম্পদ, শিল্প, বিদ্যুত, তেল-গ্যাস ও প্রাকৃতিক সম্পদ, পরিবহন, যোগাযোগ, ভৌত পরিকল্পনা, পানি সরবরাহ ও গৃহায়ন, শিক্ষা ও ধর্ম, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, জনসংখ্যা ও পরিবার পরিকল্পনা, গণযোগাযোগ, সমাজকল্যাণ, নারী ও যুব উন্নয়ন, জনপ্রশাসন, বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান। অন্যদিকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের খাতগুলো হচ্ছে, পাবলিক সার্ভিস, স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন, প্রতিরক্ষা, জনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা, শিক্ষা ও প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণ, গৃহায়ন, বিনোদন, সংস্কৃতি ও ধর্ম, জ্বালানি, কৃষি, শিল্প ও অর্থনৈতিক সেবা এবং পরিবহন ও যোগাযোগ। এক প্রশ্নের জবাবে ড. আলম আরও বলেন, খাত সমন্বয় করতে গিয়ে কোন খাত বাদ পড়েনি। কেননা আমরা চেষ্টা করেছি দুই মন্ত্রণালয়ের খাতগুলোকে একখানে করে সমন্বিত করার। এর ফলে অর্থনৈতিক কর্মকা- আরও বেশি গতিশীল হবে। তাছাড়া ভবিষ্যতে খাতভিত্তিক পরিকল্পনাও প্রণয়ন করা যেতে পারে। যেটি আগে সম্ভব ছিল না। এখন সমন্বয়ের ফলে এ বিষয়ে চিন্তা ভাবনা করা হতে পারে। তিনি জানান, দীর্ঘদিনের এই সমস্যা সমাধানের মধ্য দিয়ে খাতভিত্তিক কার্যক্রম আরও সহজ ও গতিশীল হবে।
×