ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাবিতে যৌন হয়রানির তিন দিনেও জড়িত কেউ গ্রেফতার হয়নি

প্রকাশিত: ০৬:১১, ১৮ এপ্রিল ২০১৫

ঢাবিতে যৌন হয়রানির তিন দিনেও জড়িত কেউ গ্রেফতার হয়নি

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ বর্ষবরণের দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় নারীদের যৌন হয়রানির ঘটনার পর তিন দিন অতিবাহিত হলেও এসব ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। শুক্রবার এই ঘটনার প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদ কর্মসূচী পালিত হয়েছে। ঘটনার নিন্দা ও বিচারের দাবি জানিয়ে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ছাত্রসংগঠন বিবৃতি দিয়েছে। ঘটনার তদন্তে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি তদন্ত কাজ শুরু করেছে। মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাশে সন্ধ্যা ছয়টা থেকে সাড়ে সাতটা পর্যন্ত কয়েকজন নারীকে শ্লীলতাহানি করা হয় এবং এই ঘটনার প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে আহত হন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ঢাবি সভাপতি লিটন নন্দীসহ আরও চার-পাঁচ জন। সিসি টিভির ধারণ করা ফুটেজ থেকে চারজনকে শনাক্ত করা গেছে বলে দাবি করেছে পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর। এই ধরনের ঘটনা নতুন নয়। এর আগে ১৯৯৯ সালে থার্টিফার্স্ট নাইটে একদল মদ্যপ যুবকের হাতে লাঞ্ছিত হন বাঁধন নামে এক তরুণী। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে ২০১০ সালে রাজু ভাস্কর্যের সামনে আয়োজিত এক কনসার্টে। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার একই এলাকায় ঘটে একই রকমের ঘটনা। কিন্তু এসব ঘটনায় কোন দোষী ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। শুক্রবার সকালে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবি জানিয়ে মানববন্ধন করেছে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং একটি সামাজিক সংগঠন। বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে আয়োজিত ওই মানববন্ধনের পর একই স্থানে ভিন্ন ভিন্ন ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীবৃন্দ ও ইউনাইটেড ন্যাশনাল ইয়ুথ এ্যান্ড স্টুডেন্টস এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ নামের সংগঠন মানববন্ধন কর্মসূচী পালন করে। সকাল সাড়ে ১১দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীবৃন্দ ব্যানারে বৈশাখ উৎসবে বখাটেপনার বিরুদ্ধে কার্টুন মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের শিক্ষার্থীসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়। এতে যৌন হয়রানি নিয়ে বিভিন্ন চিত্র অঙ্কন করা পোস্টার প্রদর্শন করেন। মানববন্ধনে চারুকলা অনুষদের ছাপচিত্র বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী এস এম রাকিবুর রহমান বলেন, বর্ষবরণের দিন বিশ্ববিদ্যালয়ে চত্বরে যে ঘটনা ঘটেছে তা জাতির জন্য নিন্দনীয়। এ ঘটনা আমাদের সবাইকে মাথানত করে দিয়েছে। এই ঘটনার জন্য দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছি। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) নগর পরিকল্পনা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী মেহেদী হক বলেন, চিত্র মাধ্যমে আমরা প্রতিবাদ জানাই। এই ঘটনার আমরা প্রতিকার চাই। কারা করেছে তাদের চিহ্নিত করারও দাবি জানান তিনি। এদিন বিকেলে রাজু ভাস্কর্যে শিক্ষক-শিক্ষার্থী-জনতা প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন। এতে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক লাকি আক্তারের সঞ্চালনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের নেতা-কর্মীরা বক্তব্য রাখেন। লাকি আক্তার বলেন, এ দেশে নারীরা নিরাপদ নয়। নারী নির্যাতন ও শ্লীলতাহানির ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে কিন্তু বিচার হচ্ছে না। বিচারহীনতার সংস্কৃতি এবং প্রশাসনের দায়িত্বহীনতাই এসব ঘটনা ঘটার পরিবেশ সৃষ্টি করে দিচ্ছে। দেশের সব জায়গাতেই নারীরা নির্যাতিত। এখন সময় এসেছে প্রতিবাদ করার, প্রতিরোধ গড়ে তোলার। একই সময়ে শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে প্রতিবাদ জানিয়ে মানববন্ধন করে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন। এই ঘটনার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবি জানিয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে ব্লাস্ট (বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট), সম্মিলিত ইসলামী গবেষণা পরিষদ, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদসহ বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন। ছবি নিয়ে বিভ্রান্তি ॥ মঙ্গলবারের ওই ঘটনার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে কয়েকজন তরুণীর শ্লীলতাহানির শিকার হওয়ার ছবি প্রকাশ করায় দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়ে যায়। বৃহস্পতিবার বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত সংবাদ ও ছবি প্রকাশের পর পুলিশ প্রশাসন ও তৎপর হয়েছে। তবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ছবিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার বলে প্রচার করার বিষয়ে প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। একই দাবি করেছেন রমনা জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার আবদুল বাতেন। এ বিষয়ে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, গণমাধ্যমে ছয় তরুণীকে বিবস্ত্র করার তথ্য দিয়ে যে পরিবেশন করা হয়েছে সেগুলোর মধ্যে একটি ছবি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার নয়। ছবিটি পহেলা বৈশাখেরই। তবে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা থেকে তোলা। ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারে অগ্রগতি এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা বন্ধ করার পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রক্টর অধ্যাপক এম আমজাদ আলী জনকণ্ঠকে বলেন, এ রকম ঘটনার যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে, সেজন্য আগে থেকেই সতর্ক ছিলাম। নিরাপত্তা নিয়ে কয়েক দফা মিটিংও হয়েছে। তারপরও এ ধরনের অভিযোগের বিষয়টি আমরা গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি। তদন্তের পর যদি জড়িতদের গ্রেফতার করা যায় তাহলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×