ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশের কাছে পাকিস্তান ৭৯ রানে পরাজিত ;###;জোড়া শতকে কুপোকাত ;###;১৬ বছর পর আবার জয় ;###;তিন উইকেট করে নিলেন সানি ও তাসকিন

মিরপুরে বাঘের গর্জন

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১৮ এপ্রিল ২০১৫

মিরপুরে বাঘের গর্জন

মিথুন আশরাফ ॥ ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়।’ বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হতেই যেন একই সুরে গাওয়ার অপেক্ষাতেই ছিলেন দেশবাসী। কখন হারবে, কখন হারবে পাকিস্তান; শুধু সেই সময়টুকুই গুনতে শুরু হয়ে যায়। আবারও হবে বাংলার জয়। হয়েই গেল। এত সহজভাবে জয় এলো যে সবার কণ্ঠে মনের এ গানটি আরও জোরেই শোনা গেল। পাকিস্তানের হারও হলো ৭৯ রানের বড় ব্যবধানেই। আবারও হলো বাংলার জয়। যদিও খেলাধুলার সঙ্গে যুদ্ধ বিষয়টি যায় না। এরপরও প্রতিপক্ষ দলটি যখন পাকিস্তান, তখন যুদ্ধভাবটি চলেই আসে। বাংলাদেশ ১৯৭১ সালের যুদ্ধে পাকিস্তানকে হারিয়ে স্বাধীন হয়েছে। এরপর আবারও ক্রিকেটে ২৮ বছর পর দ্বিতীয় জয়ের দেখা পেয়েছে বাংলাদেশ। ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে পাকিস্তানকে হারিয়েছে। দীর্ঘ প্রায় ১৬ বছর পর আবারও আরেকটি জয় ধরা দিল। সেই জয়টি এলো ক্রিকেটের মাধ্যমেই। সে কী আনন্দ! সে কী উল্লাস! বাঁধভাঙ্গা উল্লাস চলছেই চারদিকে। বিশ্বকাপের পর বাংলাদেশ আর পাকিস্তান ক্রিকেট দলের তুলনায় বাংলাদেশই ফেবারিট তকমা নিয়ে সিরিজ শুরু করে। প্রথম ওয়ানডে জিতে তার প্রমাণও দিল বাংলাদেশ। সাকিব যে বলেছিলেন, ‘আমরাই ফেবারিট। এবারই সুযোগ পাকিস্তানকে হারানোর।’ সত্যিই তো তাই হলো! সুযোগটি কাজে লাগিয়ে ফেলল বাংলাদেশ। এবার তামিম ইকবাল (১৩৫ বলে ১৩২ রান) ও মুশফিকুর রহীমের (৭৭ বলে ১০৬ রান) জোড়া শতকে আবারও টাইগারদের গর্জনে কুপোকাত হলো পাকিস্তান। ৩ উইকেট করে নেয়া আরাফাত সানি ও তাসকিন আহমেদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে সেই সঙ্গে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়েও গেল বাংলাদেশ। একদিকে বিশ্বকাপে দুর্দান্ত খেলা একটি দল বাংলাদেশ, আরেকদিকে খোঁড়াতে খোঁড়াতে কোয়ার্টার ফাইনাল পর্যন্ত খেলা দল পাকিস্তান। বিশ্বকাপ শেষে সিরিজে দুই দল মুখোমুখি। আবার ২০১১ সালের পর দুই দল কোন সিরিজ খেলছে। পাকিস্তান দলটি এবার বেশ ছন্নছাড়াও। তরুণ ক্রিকেটারদের আধিক্যে নতুনভাবে পথ চলার অঙ্গীকার ক্রিকেটারদের মনে। কিন্তু বাংলাদেশ কী ছাড় দেবে? সুযোগটি কী কাজে লাগাবে না? তা সুযোগ কাজেও লাগাল বাংলাদেশ। মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে টস জিতেই শুরুতে ব্যাট করল। রান করল ৫০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ৩২৯, যা কিনা বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসেরই সর্বোচ্চ স্কোর। শুধু কী তাই! তামিম-মুশফিক মিলে ১৭৮ রানের সর্বোচ্চ জুটি গড়লেন। প্রথমবার দুইজনই শতক করলেন। এক ম্যাচে যা কোনদিনই বাংলাদেশের ক্রিকেট দেখেনি। এতকিছু অর্জনের ম্যাচে কী আর বাংলাদেশ হারতে পারে! এবার দলে আফ্রিদি, মিসবাহ, শেহজাদদের মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটার নেই যে ২০১৪ সালের এশিয়া কাপের মতো ৩২৬ রান তাড়া করে ১ বল বাকি থাকতেও জিতে যাবে পাকিস্তান। এবার যিনি অধিনায়ক সেই আজহার আলীই খেলতে নেমেছেন ২ বছর পর! হঠাৎ করেই পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) আজহারকে অধিনায়ক করে যেন গলায় ফাঁস দিয়ে দিয়েছেন। দলকে তাই নেতৃত্ব দিয়ে কিছুই করতে পারলেন না। আবার দুই অভিজ্ঞ ক্রিকেটার আছেন, যারা শতাধিক ম্যাচ খেলেছেন। এদেরই একজন মোহাম্মদ হাফিজ, আরেকজন সাঈদ আজমল। আজমলকে খুঁজেই পাওয়া গেল না। বোলিং এ্যাকশন শুধরে যেন নিজেকেই হারাতে বসেছেন তিনি। হাফিজও থাকলেন নীরব। আর তাই আজহার শুধু দলকে হারতেই দেখলেন। ৪৫.২ ওভারে ২৫০ রান করতেই অলআউট হয়ে গেল পাকিস্তান। বাংলাদেশের ইনিংস শেষ হতেই যেন ‘জয়গান’ শুরু হয়ে যায়। একটু একটু করে পাকিস্তান এগিয়ে যেতে থাকে আর উইকেট পড়তে থাকে। পাকিস্তান যখনই ব্যাটিং একটু ভাল করেÑ আজহার (৭২), হারিস (৫১), রিজওয়ানরা (৬৭) এগিয়ে চলেন। তখন স্তব্ধ হয়ে পড়ে কানায় কানায় দর্শকদের দিয়ে পূর্ণ পুরো স্টেডিয়াম। যখনই কোন ব্যাটসম্যান আউট হন, আনন্দের বন্যা যেন বয়ে যায়। এমনই অবস্থা দাঁড় হয়, যেন এক উইকেট পড়তেই একটি করে জয় পেয়ে যান দর্শকরা! পাকিস্তান ইনিংস খোঁড়াতে খোঁড়াতেই এগিয়ে যায়। পাকিস্তানের ইনিংস যেখানে নিস্তব্ধতায় ভরা, সেখানে বাংলাদেশের ইনিংস সাজানো একেকটি রেকর্ড দিয়ে। একেকটি গৌরবময় ইনিংস দিয়ে। ‘ফর্ম ইজ টেম্পোরারি, ক্লাস ইজ পার্মানেন্ট’Ñ কথাটির যথার্থতা বুঝিয়ে দিলেন বাংলাদেশ ওপেনার তামিম ইকবাল। তাঁকে নিয়ে যে সমালোচনা চলছে, শতক করতেই দুই হাত দিয়ে সবার মুখ বন্ধ রাখার ইঙ্গিত দিলেন। তা বন্ধ হয়েই গেল। বিশ্বকাপে শুধু স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে ৯৫ রান করা ছাড়া আর কিছুই দিতে পারেননি তামিম। তাতেই তামিমকে নিয়ে সেই কী আলোচনাÑসমালোচনা। দুই বছর পর আবার ওয়ানডেতে শতক পেলেন তামিম। ক্যারিয়ারের পঞ্চম শতক করে ফেললেন। তামিমের সঙ্গে একবছর পর মুশফিকও শতক করলেন। ক্যারিয়ারের তৃতীয় শতক করলেন দলের এ নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান। এ দুইজন মিলেই (৬৭-২৪৫) যে সর্বোচ্চ জুটিটি গড়ে ফেলেন, সেখানেই বাংলাদেশ পেছনে ফেলে দেয় পাকিস্তানকে। এ দুইজনের পর সাকিব (৩১) ও ৭ বলেই ১৫ রান করা সাব্বিরের ইনিংসগুলোও যে স্কোর বাড়াতে ভূমিকা রাখে শেষপর্যন্ত সর্বোচ্চ স্কোরই গড়ে ফেলে বাংলাদেশ। সেই স্কোরই পাকিস্তানকে চাপে ফেলে দেয় এবং আবারও বাংলার জয় নিশ্চিতও যেন করে দেয়। শেষপর্যন্ত জয়ও পায় বাংলাদেশ। ম্যাচ শেষ হতেই সবার কণ্ঠে শোনাও যায়Ñ ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়।’ সংক্ষিপ্ত স্কোর ॥ বাংলাদেশ-পাকিস্তান প্রথম ওয়ানডে। বাংলাদেশ ইনিংস ৩২৯/৬; ৫০ ওভার (তামিম ১৩২, মুশফিক ১০৬, সাকিব ৩১, সৌম্য ২০, সাব্বির ১৫; ওয়াহাব ৪/৫৯)। পাকিস্তান ইনিংস ২৫০/১০; ৪৫.২ ওভার (আজহার ৭২, রিজওয়ান ৬৭, হারিস ৫১; তাসকিন ৩/৪২, আরাফাত ৩/৪৭)। ফল ॥ বাংলাদেশ ৭৯ রানে জয়ী। ম্যাচ সেরা ॥ মুশফিকুর রহীম (বাংলাদেশ)।
×