ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন খালেদা জিয়া ॥ তোফায়েল

প্রকাশিত: ০৫:০৮, ১৮ এপ্রিল ২০১৫

নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন খালেদা জিয়া ॥ তোফায়েল

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের পক্ষে প্রচারে অংশ নিয়ে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন বলে অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য ও বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া দলীয় কার্যালয়ে পুলিশ প্রটোকলে নির্বাচনী প্রচার চালাচ্ছেন। সরকারী সুবিধা নিয়ে নির্বাচনী প্রচারে অংশগ্রহণ নির্বাচনী আচরণবিধির সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন। শুক্রবার সকালে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে ধানম-ির ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে তিনি এ অভিযোগ করেন। মুজিবনগর দিবসে দেশবাসীকে সকল সহিংসতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে তোফায়েল আহমেদ বলেন, সিটি নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। কেউ অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি এবং নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। তিনি বলেন, গত তিন মাসে বিএনপি আন্দোলনের নামে নাশকতা আর মানুষ হত্যা করেছে। আসন্ন তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জনগণ ব্যালটের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার জঙ্গী ও সন্ত্রাসী কর্মকা-ের সমুচিত জবাব দেবে। তিনি আরও বলেন, খালেদা জিয়া আদালতে গিয়ে আত্মসমর্পণ করলেন, কার্যালয় থেকে বাসভবনেও গেলেন। কিন্তু যারা হারিয়ে গেছে, যাদের অগ্নিদগ্ধ করে হত্যা করা হয়েছে- তাদের কি হবে? দেশের জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যে নেত্রী সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করে, নাশকতা সৃষ্টি করে দেশকে অরাজক পরিস্থিতির মধ্যে নিতে চেয়েছিল তার বিচার জনগণের আদালতে হবে। সিটি নির্বাচনে খালেদা জিয়ার মতলব আছে- সুরঞ্জিত ॥ আওয়ামী লীগের আরেক উপদেষ্টাম-লীর সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে কলুষিত করতে বিএনপি ষড়যন্ত্র করছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে খালেদা জিয়াকে নির্বাচনী প্রচার থেকে বিরত রাখতে হবে। ‘আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোটের নীরব বিপ্লব ঘটবে’ মর্মে সম্প্রতি খালেদা জিয়ার বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ভোট তো হয় প্রকাশ্যে ও উৎসবের মাধ্যমে। এটা নীরব হবে কেন? ভোট সব সময় সরবে ও প্রকাশ্যে হয়। তার মানে খালেদা জিয়ার এখানেও কোন মতলব রয়েছে। এতে মানুষের মনে সন্দেহ দেখা দিয়েছে এটা নীরবে হবে কেন? আবার কি কোন ষড়যন্ত্র আছে? এই নীরব বিপ্লবের আহ্বানে ষড়যন্ত্রের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে নৌকা সমর্থক গোষ্ঠী আয়োজিত চলমান রাজনীতি বিষয়ক আলোচনাসভায় তিনি এসব কথা বলেন। পহেলা বৈশাখে টিএসসিতে নারীদের শ্লীলতাহানির চেষ্টার ঘটনায় পুলিশের ভূমিকার সমালোচনা করে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, জনগণ আসামি হাতে ধরিয়ে দিল আর পুলিশ তাদের ছেড়ে দিয়ে মিডিয়াতে বললেন নির্দেশনা নেই। এই অজুহাত সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য ও ভিত্তিহীন। এই ঘটনা যারা ঘটিয়েছে, সে যেই হোক তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে শুধু বক্তব্য-বিবৃতি দিয়ে বসে থাকলে হবে না, দায়িত্ব নিতে হবে। ব্যবস্থার বিষয়ে স্পষ্ট বক্তব্য দিতে হবে। খালেদা জিয়াকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ৩-৪ মাস পরে হলেও আবার নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিতে ফিরে এসেছেন। তাই ধন্যবাদ। তবে ১৫৩ জন সাধারণ মানুষ পুড়িয়ে মেরেছেন। এটার বিচার হবে। বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। মনে রাখতে হবে বাঘে ধরলে ছাড়ে, শেখ হাসিনা ধরলে ছাড়ে না। নৌকা সমর্থক গোষ্ঠীর সভাপতি ডাঃ এমদাদুল হক সেলিমের সভাপতিত্বে সভায় বক্তব্য রাখেন মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই কানু, সাম্যবাদি দলের নেতা হারুন চৌধুরী প্রমুখ। সন্ত্রাসীদের নিয়ে প্রচার চালাচ্ছে বিএনপি- খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ॥ খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেছেন, আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করার জন্য সন্ত্রাসীদের সঙ্গে নিয়ে প্রচার চালাচ্ছে বিএনপি। মূলত সুন্দর পরিবেশ দূষিত করার ষড়যন্ত্রে তারা লিপ্ত। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে নির্বাচনী প্রচারে মাঠে নামতে না দিতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার নির্দেশে আন্দোলনের নামে অনেক মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছে। সিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মানুষ আর কোন সংঘাত দেখতে চায় না। শুক্রবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে বঙ্গমাতা পরিষদ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি আরও বলেন, সুষ্ঠুভাবে সিটি নির্বাচন সম্পন্ন করার জন্য সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। এ লক্ষ্যে সরকার সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, যারা মুজিবনগর সরকারকে স্বীকার করতে চান না, তারা বাংলাদেশকে স্বীকার করেন না। বিএনপি সরকারের সময় নতুন প্রজš§ প্রকৃত ইতিহাস জানতে পারেনি। বর্তমান সরকারের কারণে দেশের নতুন প্রজš§ মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস সম্পর্কে জানতে পারছে। এর আগে এই নতুন প্রজš§কে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানানো হয়নি। তাদের পঙ্গু করে রাখা হয়েছিল। কামরুল ইসলাম বলেন, ৯ মাস যুদ্ধের পর পাকিস্তানী হানাদাররা যে স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে আত্মসমর্পণ করে, সে স্থানটি মুছে ফেলার জন্য সেখানে শিশুপার্ক তৈরি করেছেন জিয়াউর রহমান। তার উদ্দেশ্য ছিল এই ঐতিহাসিক জায়গাটি সম্পর্কে নতুন প্রজš§ না জানুক। তিনি বলেন, পঁচাত্তরের পরে জিয়াউর রহমানের সব ধরনের কার্যক্রম প্রমাণ করে যে তিনি প্রকৃতপক্ষে মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না, ছিলেন একজন সিআইএ এজেন্ট। সংবিধান বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম বলেন, মুজিবনগর সরকার কোন বিপ্লবী বা অস্থায়ী সরকার নয়। এটিই বাংলাদেশের প্রথম সরকার। আয়োজক সংগঠনের সভাপতি মোজাফফর হোসেন পল্টুর সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক ড. হোসেন মনসুরসহ সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। সিটি নির্বাচনে ব্যালটের মাধ্যমে খালেদার বিচার করবে জনগণ ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা ভোলা থেকে জানান, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, খালেদা জিয়া দেশকে স্তব্ধ করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তিনি পরাজিত হয়ে আত্মসমর্পণ করেছেন। তাঁর বিচার হবে জনতার আদালতে। আগামী সিটি নির্বাচনে ব্যালটের মাধ্যমে খালেদা জিয়ার বিচার করবে জনগণ। যারা নির্মমভাবে মানুষ খুন করেছে, পুড়িয়ে মেরেছে, মায়ের বুক খালি করেছে তাদের ক্ষমা নেই। তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জনগণ তার জবাব দেবে। শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় ভোলা নতুন বাজার কবি মোজাম্মেল হক টাউন হলে জেলা প্রশাসনের আয়োজনে ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। বাণিজ্যমন্ত্রী আরও বলেন, খালেদা জিয়া আপনাকে জবাব দিতে হবে। ৯২ দিন তিনি গুলশান অফিসে বসেছিলেন। খালেদা বলেছিলেন, যতক্ষণ শেখ হাসিনার পতন হবে না ততক্ষণ তিনি অফিস থেকে বের হবেন না। কিন্তু তিনি নিজেই বের হয়েছেন। কোর্টে গিয়ে আত্মসর্মপণ করেছেন। তিনি কোর্ট থেকে বের হয়ে নিজেই বাসভবনে চলে গেলেন। তোফায়েল আহমেদ প্রশ্ন রাখেন, খালেদা জিয়া আপনি বাসভবনে গেলেন কিন্তু কোথায় হারিয়ে গেল আমার মায়ের ছেলেরা। কোথায় হারিয়ে গেল বাসের ড্রাইভার, কন্ডাক্টর। কোথায় হারিয়ে গেলে দিনমজুর। তিনি (খালেদা জিয়া) ঘরে ফিরে গেলেন অথচ আজ যারা হারিয়ে গেল তারা আর কোনদিন আসবে না। এসবের জন্য তিন সিটি নির্বাচনে ব্যালটের মাধ্যমে বিচার হবে হবেই। তোফায়েল আহমেদ বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিচারণ করে বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে গেলেও জিয়াউর রহমান দেশকে তছনছ করে স্বাধীনতার চেতনাকে ধ্বংস করেছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এখন সেই হারানো অর্জনগুলো পুনরুদ্ধার হয়েছে দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের মাধ্যমে। তোফায়েল আহমেদ স্থানীয় উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে বলেন, ভোলার মজুদকৃত গ্যাসের পরিমাণ নির্ধারণ হলেই দেশের মধ্যে ভোলা হবে একটি উন্নয়নশীল জেলা। এ জেলার নদীভাঙ্গন রোধকল্পে বেশকিছু প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। দেশী-বিদেশী কিছু কোম্পানি ভোলাতে শিল্পপ্রতিষ্ঠান স্থাপনের ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। তাই অচিরেই শিল্পকারখানা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এলাকার যুবকদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
×