ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

লাকসাম-চিনকি আস্তানা ডাবল রেললাইন সার্ভিস চালু আজ

প্রকাশিত: ০৪:৪০, ১৮ এপ্রিল ২০১৫

লাকসাম-চিনকি আস্তানা ডাবল রেললাইন সার্ভিস চালু আজ

মশিউর রহমান খান/মীর শাহ আলম, কুমিল্লা থেকে ॥ কুমিল্লার লাকসাম থেকে চট্টগ্রামের চিনকি আস্তানা পর্যন্ত ১৬০৭.৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬১ কিমি নবনির্মিত ডাবল রেলপথের আজ শনিবার বিকেল পাঁচটায় উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী এক ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ পথে ট্রেন সার্ভিসের উদ্বোধন করবেন। একই সময়ে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন ইয়ার্ড রিমডেলিং কাজের উদ্বোধন, প্রায় ৬ হাজার ৫০৫ কোটি টাকা ব্যয়ে লাকসাম থেকে আখাউড়া পর্যন্ত ডুয়েলগেজ ডাবল রেললাইন নির্মাণ এবং বিদ্যমান রেললাইনকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর কাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনও করবেন প্রধানমন্ত্রী। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেলপথমন্ত্রী মোঃ মুজিবুল হক বলেন, আধুনিক পদ্ধতিতে তৈরি এ রেললাইনটি চালু হলে যাত্রীদের ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যেতে কমপক্ষে ১ ঘণ্টা সময় কম লাগবে। এছাড়া মালবাহী ও যাত্রীবাহী ট্রেন চট্টগ্রাম থেকে লাকসাম পর্যন্ত আসতে কোথাও থামতে হবে না। তাছাড়া মালবাহী ট্রেন চলাচলে এক নতুন দিগন্ত তৈরি হবে। ফলে চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার জট আগের চেয়ে অনেকাংশে কমবে। পাশাপাশি ট্রেনে পণ্য পরিবহন আরও বৃদ্ধি পাবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে রেল মহাপরিকল্পনার অংশ হিসেবে সারাদেশের সকল লাইন ডাবল লাইন করা হচ্ছে। এটি চালুর ফলে এই রুটে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে মানুষ রেলপথকেই বেছে নেবে। এ কার্যক্রম বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এ লাইনটি চালু করা হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে দেশের সকল রেললাইনই ডাবল লাইনে উন্নীত করা হবে। এ বিষয়ে শুক্রবার রেলপথ মন্ত্রী মুজিবুল হক কুমিল্লার লাকসামে ডাবল রেললাইন পরিদর্শন করেন। শুক্রবার সকাল এগারোটায় মন্ত্রী লাকসাম রেলওয়ে জংশনে উপস্থিত থেকে এ কাজের সার্বিক পরিস্থিত পর্যালোচনা করেন। এ সময় স্থানীয় সংসদ সদস্য তাজুল ইসলাম, বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক আমজাদ হোসেনসহ বাংলাদেশ রেলওয়ে ও রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। এ বিষয়ে রেলপথ মন্ত্রী মুজিবুল হক মুজিব বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে আধুনিক ও যাত্রীসেবা উন্নয়নে নতুন নতুন উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে অনেক প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। চলমান প্রকল্পের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। পর্যায়ক্রমে পুরো রেলওয়ে ডাবল লাইন নির্মাণ করা হবে। মন্ত্রী বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথে প্রায় ৩২১ কিলোমিটার রেলপথের মধ্যে ২০৪ কিলোমিটার রেলপথে সিঙ্গেল লাইন রয়েছে। সিঙ্গেল লাইন থাকায় এ লাইনে প্রতিদিন ৩৬ জোড়া ট্রেন চলাচল করতে পারত। শনিবার ডাবল লাইন উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে এ লাইনে ৭০ জোড়া ট্রেন চলাচল করতে পারবে। ডাবল লাইনে উন্নীত হওয়ায় এখন থেকে দুর্ঘটনা বা অন্য কোন কারণে একটি লাইন বন্ধ থাকলেও ট্রেন চলাচল চালু রাখা সম্ভব হবে। রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ১৬০৭.৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে কুমিল্লার লাকসাম থেকে চট্টগ্রামের চিনকি আস্তানা পর্যন্ত ৬১ কিলোমিটার ডাবল লাইন নির্মাণের কাজ শেষ হয় চলতি বছরের ৩১ মার্চ। ২০১১ সালের ২ নবেম্বর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ ডাবল লাইনে উন্নীত হচ্ছে। ইতিমধ্যে ৬১ কিলোমিটার রেলপথের কাজ শেষ হয়েছে। তিনি বলেন, ওই পথে ৮ বড় সেতু, ৩৪ কালভার্ট এবং ১১ পাইপ কালভার্ট নির্মাণ করা হয়েছে। শর্শদী, গুণবতী, হাসানপুর ও চিনকি আস্তানায় চারটি স্টেশনে নতুন স্টেশন ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। আটটি স্টেশনে ফুটওভারব্রিজ, ৪ স্টেশনে ক্যানোপি এবং ১৩ নতুন প্ল্যাটফরম নির্মাণ করা হয়েছে। ১২ স্টেশনে টেলিকমিউনিকেশন ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ করা হয়েছে। জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) ও বাংলাদেশ সরকারের (জিওবি) অর্থায়নে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়। নতুন এ লাইন দিয়ে ১০০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চালানো সম্ভব। তবে অনুমোদিত স্পিড ৮০ কিলোমিটার নির্ধারণ করা হয়েছে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আজ চালু হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের লাকসাম চিনকি আস্তানা ডাবল রেললাইন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আজ বিকাল ৫টায় এ রেললাইনটি উদ্বোধন করবেন। ব্রিটিশ সরকার এ ডাবল রেললাইন তৈরির জন্য জমি অধিগ্রহণ করলেও লাইনটি নির্মাণ করতে পারেনি। বর্তমান সরকার ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের গুরুত্বের কথা বিবেচনা করে বিশেষ উদ্যোগে এটি নির্মাণ কাজ শুরু করে। শুক্রবার রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক শেষবারের মতো এ লাইনের নির্মাণ কাজ পরিদর্শন করেছেন। নির্মাণকাজে দুই দফা সময় বাড়ানোর পর ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নির্ধারিত সময়ের আগেই ৬১ কিলোমিটার দীর্ঘ আধুনিক সুবিধা সম্বলিত এ রেললাইনটি চালু করা হচ্ছে। ১ হাজার ৭৪৮ কোটি ৬৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথের ডাবল লাইন প্রকল্পের আওতায় এ লাইনটি নির্মাণ করা হয়েছে। এর ফলে দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রেলপথ ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে দ্রুত সময়ে যাত্রীবাহী ও মালবাহী ট্রেন চলাচলে নতুন গতি আসবে। বর্তমানে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামে যেতে যাত্রীবাহী আন্তঃনগর ট্রেনের সময় লাগে ৭-৮ ঘণ্টা। অন্যদিকে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ঢাকায় পণ্যবাহী ট্রেন পৌঁছতে সময় লাগে ১৫ থেকে ২২ ঘণ্টা। নতুন এ ডাবল লাইনটি চালু হলে এ রুটের প্রতিটি যাত্রীবাহী ট্রেন আগের চেয়ে কমপক্ষে ১ ঘণ্টা কম সময়ে ঢাকায় পৌঁছতে পারবে। এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেনার জট অনেকাংশে কমে আসবে। বর্তমানে যাত্রীবাহী ট্রেনকে চলাচলের জন্য সুযোগ দিতে অধিকাংশ সময় পণ্যবাহী ট্রেনকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বিভিন্ন স্টেশনে আটকে রাখা হয়। নতুন ডাবল লাইন চালু হলে এ ধরনের সমস্যা থাকবে না। ফলে অনেক কম সময়ে পণ্যবাহী ট্রেন ঢাকায় পৌঁছতে পারবে। তাছাড়া ডাবল লাইনে চলাচলরত ট্রেনগুলোর যাত্রাপথে বিরতির সময় কমে আসবে।
×