ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নর্দাম্পটন স্মৃতির পুনরাবৃত্তির লড়াই শুরু, আজ ওয়ানডের নেতৃত্ব দেবেন সাকিব

পাকি বধের পণ টাইগারদের

প্রকাশিত: ০৪:০৮, ১৭ এপ্রিল ২০১৫

পাকি বধের পণ টাইগারদের

মিথুন আশরাফ ॥ ষোলো বছর আগের স্মৃতি। সঙ্গে ২৫ ম্যাচ আগের স্মৃতিও। নর্দাম্পটনে বিশ্বকাপের ম্যাচ হচ্ছে। ’৯৯ সালে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচ খেলতে নেমেছে বাংলাদেশ। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে খেলছে বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ ও পাকিস্তান। ম্যাচটিতে জিতে গেল সোনার ছেলেরা! সে কী আনন্দ। সে কী দেশে-বিদেশে বাংলাদেশী ক্রিকেটপ্রেমীদের উল্লাস! এরপর আর কোন জয় পাকিস্তানের বিপক্ষে মেলেনি। এবার আবারও সেই সুযোগ ধরা দিয়েছে। পাকিস্তান দল তরুণ, অনেকটাই অনভিজ্ঞও। আর তাই এবার পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডেতে জয়ের সম্ভাবনা দেখা হচ্ছে ভালভাবেই। আজ পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে দিয়ে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ শুরু হচ্ছে। এ সিরিজে নর্দাম্পটন স্মৃতির পুনরাবৃত্তি দেখছে সবাই। সেই মিশন আজ শুরুও হয়ে যাচ্ছে। মিরপুরে নর্দাম্পটন ফিরে আসবে, সেই প্রত্যাশাই এখন করা হচ্ছে। পারবে বাংলাদেশ তা করে দেখাতে? আজ মাশরাফি বিন মর্তুজা নন, দলের নেতৃত্ব দেবেন সাকিব আল হাসান। বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে ‘সেøা-ওভার’ রেটের জন্য এক ম্যাচ নিষিদ্ধ হয়েছিলেন ওয়ানডে দলের নিয়মিত অধিনায়ক মাশরাফি। আর তাই আজ খেলতে পারবেনই না। মাশরাফির অনুপস্থিতিতে সহঅধিনায়ক সাকিবই দলের অধিনায়ক থাকবেন। সাকিব আত্মবিশ্বাসী। শুধু আত্মবিশ্বাসীই নন, এমনভাবে কথাগুলো বলেছেন, বাংলাদেশ যে এখন কতটা ভাল দল তা বুঝিয়ে দিয়েছেন। বলেছেন, ‘আমরা জয়ের লক্ষ্য নিয়ে খেলতে এসেছি। ১৬ বছর হয়নি বলে কখনই হবে না! তাহলে তো বাংলাদেশের ক্রিকেট এখানেই থেমে যাবে। আমরা মনে করি আমরাই ফেবারিট। আমাদের দলটি পাকিস্তানকে হারানোর মতো দল।’ এরপর সাকিব যা বললেন, তাতে টগবগে, বিশ্বাসী ক্রিকেটারদের মনোভাবই ফুটে উঠল, ‘আমাদের ক্ষমতা আছে সিরিজ জেতারও।’ কেন এত আত্মবিশ্বাস মিলছে? বোঝাই যাচ্ছে, বিশ্বকাপে যে দল দুর্দান্ত খেলেছে, কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে; সেই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চাচ্ছে। তা রাখলেই তো অন্তত আজ প্রথম ওয়ানডে, ১৯ এপ্রিল দ্বিতীয় ওয়ানডে ও ২২ এপ্রিল যে তৃতীয় ওয়ানডে হবে, যে কোন একটিতে বাংলাদেশ জিততেই পারে। শুধু কী জেতা, যদি নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী এবার খেলা যায়, তাহলে তো সিরিজও জেতা সম্ভব! পাকিস্তান দলটি যে খেলবে, বলতে গেলে তরুণ দলই। মিসবাহ উল হক, শহীদ আফ্রিদিদের ছাড়া নতুনভাবেই শুরু করতে যাচ্ছে পাকিস্তান। বিশ্বকাপে বাজে ফলও সিরিজে প্রভাব পড়তে পারে। সেই সঙ্গে দলে যে তরুণ ক্রিকেটারদের মিলনমেলা, সেটিও বাংলাদেশকেই এগিয়ে রাখছে। পাকিস্তান অধিনায়ক আজহার আলী নিজেই তো খেলেছেন ১৪ ওয়ানডে। অভিষেক না হওয়া ক্রিকেটারদের মধ্যে আছেন সামি আসলাম, মোহাম্মদ রিজওয়ান, সাদ নাসিম। ১০০ ওয়ানডের বেশি খেলেছেন ২ জন, সাঈদ আজমল (১১১ ওয়ানডে) ও মোহাম্মদ হাফিজ (১৫৫ ওয়ানডে)। ৫০ ওয়ানডের বেশি খেলা ক্রিকেটোরের সংখ্যাও হাতে গোনা ২ জন- আসাদ শফিক (৫৩ ওয়ানডে), ওয়াহাব রিয়াজ (৫৪ ওয়ানডে)। বাকিদের মধ্যে কেউই ৫০ ওয়ানডেও খেলেননি। এমন যখন অবস্থা তখন সাকিব তো সিরিজ জেতার আশাও করতে পারেন। তাই তো জেতার কথা যে বলছেন, তরুণ ক্রিকেটারদের আধিক্য’র বিষয়টি সামনে তুলে ধরেছেন, ‘অবশ্যই এটা একটা কারণ।’ সঙ্গে দল যে দুর্দান্ত খেলছে সেটিও সাকিবকে আত্মবিশ্বাসী করছে, ‘সেই সঙ্গে আমরা ভাল খেলছি। ওরা (পাকিস্তান) হয়ত ওদের সেরা ফর্মে নেই। যা আমরা বিশ্বাস করি। তবে ওদের সঙ্গে জিততে হলে আমাদের সেরা খেলাটাই খেলতে হবে।’ পাকিস্তান যে দলটি নিয়ে এসেছে দলটিতে ব্যাটিংয়ে মোহাম্মদ হাফিজ, সরফরাজ আহমেদ, ফাওয়াদ আলম, বোলিংয়ে স্পিনার সাঈদ আজমল ও ওয়াহাব রিয়াজই মূল ভরসা। এ ভরসার মধ্যেই আবার পাকিস্তান প্রস্তুতি ম্যাচে হেরে গেছে। যেটি দলকে আরও দুর্বল করে তুলেছে। এমনিতেই বাংলাদেশ ক্রিকেটাররা যে বার বার ‘জিতব, জিতব’ বলে চলেছেন; তাতেই যেন ভেঙ্গে পড়েছে পাকিস্তান। আবার আজমল ৭ মাস পর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বল হাতে নেবেন। বোলিং এ্যাকশন শুধরে নেয়ার পর সেই ধার কী আর থাকবে? সেটিও তো পাকিস্তানকে ভোগাবে। বাংলাদেশকে দেবে জ্বালানি শক্তি। সেই শক্তি এখন কাজে লাগাতে পারলেই হয়। পাকিস্তান কোচ ওয়াকার ইউনুস অবশ্য তরুণ দলটিকে নিয়েই এগিয়ে যেতে চান। এমনকি সিরিজ জয়ের সম্ভাবনা এদের নিয়েই দেখছেন। তবে একটি বিষয় নিয়ে যেন কোনভাবেই কথা বলতে চান না ওয়াকার। সেই ১৯৯৯ সালের হারটি নিয়ে। তাই তো যখনই সেই ম্যাচের কথা উঠল, তা নিয়ে বলার আগে জানালেন, ‘তরুণ দল নিয়েই পাকিস্তান ভাল করবে।’ সঙ্গে নর্দাম্পটনের ম্যাচটি নিয়ে বললেন, ‘সেই স্মৃতি মনেই নেই।’ খুব অল্প ম্যাচ খেলেছেন, তাও আবার বাংলাদেশের বিপক্ষে ম্যাচটিতে ছিলেন। দেখেছেন দলকে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের কাছে হারতেও। সেই হার এখনও একমাত্র হার হয়েই আছে। দুই দলের মুখোমুখি লড়াইয়ে ৩২ ম্যাচের মধ্যে ১টিতেই হেরেছে পাকিস্তান। সেই হারের পর টানা ২৫ ম্যাচে জিতেছে। তাই ওয়াকার বলতে পারছেন, ‘সেই হার নিয়ে বিশদ কিছু মনে নেই। তবে এরপর টানা জিতেছি। সেই ধারাবাহিকতাই বজায় রাখতে হবে।’ সেই ধারাবাহিকতা এবার বোধ হয় আর বজায় থাকবে না পাকিস্তানের। এর আগে ১৯৯৯ সালে হারের পর প্রস্তুতি ম্যাচ কিংবা আন্তর্জাতিক ম্যাচ কোনটাতেই হারেনি পাকিস্তান। এবার হারল প্রস্তুতি ম্যাচে। এ হারটিই কী আজ বাংলাদেশ-পাকিস্তানের মধ্যকার শুরু হতে যাওয়া ওয়ানডে সিরিজে কী হতে পারে, সেই ফয়সালা করে দিল না? ইঙ্গিত দিয়ে দিল না? এখন শুধু অপেক্ষা মূল লড়াইয়ে প্রস্তুতি ম্যাচের পুনরাবৃত্তির। অন্তত তিন ওয়ানডের একটিতে হলেও নর্দাম্পটনের সুখস্মৃতির পুনরাবৃত্তি অপেক্ষা। হয়ে গেলেই, মিরপুরেই শুধু নয়, আবার পুরো বাংলাদেশেই আনন্দের বন্যা বয়ে যাবে। সেই স্মৃতির পুনরাবৃত্তির আশার মিশনই আজ শুরু করছে টাইগাররা।
×