ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রবৃদ্ধি হবে সাড়ে ৬ থেকে ৭ শতাংশ ॥ পরিকল্পনামন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১৬ এপ্রিল ২০১৫

প্রবৃদ্ধি হবে সাড়ে ৬ থেকে ৭ শতাংশ ॥ পরিকল্পনামন্ত্রী

অর্থনেতিক রিপোর্টার ॥ পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছেন, বিশ্বব্যাংকের দেয়া পূর্বাভাস সঠিক নয়। চলতি অর্থবছরে মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি হবে সাড়ে ৬ থেকে ৭ শতাংশের মধ্যেই। কেননা ইতোমধ্যেই গত নয় মাসে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। কয়েক মাসের পরিস্থিতি মোকাবেলা করেই অর্থনীতি এগিয়ে যাবে। এ ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাংকের যে পূর্বাভাসÑ প্রবৃদ্ধি হবে ৫ দশমিক ৬ শতাংশ, সেটি ঠিক নয়। তারা অনুমান করে বলতে পারে। কিন্তু আমাদের হাতে তথ্য আছে। বুধবার রাজধানীর শেরেবাংলানগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। এ সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সিনিয়র সদস্য ড. শামসুল আলম, পরিকল্পনা সচিব শফিকুল আযম, শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য গোলাম ফারুক, আর্র্থ-সামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য হুমায়ুন খালিদ এবং পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব কানিজ ফাতেমাসহ উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। তথ্য উপস্থাপন করে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, আমাদের অর্থনৈতিক সূচকগুলো অনেক ভাল। এ ক্ষেত্রে কৃষি ক্ষেত্রে আউশ ধানের উৎপাদন গত অর্থবছর ছিল ২৩ দশমিক ২৬ লাখ টন, চলতি বছরে হয়েছে ২৩ দশমিক ২৮ লাখ টন। আমন উৎপাদন হয়েছে গত বছর ১৩০ দশমিক ২৩ লাখ টন, যা চলতি বছরে হয়েছে ১৩১ দশমিক ৯০ লাখ মেট্রিক টন। পাট ১৩ দশমিক ৪৯ লাখ টন উৎপাদন হয়েছে, চলতি বছর হয়েছে ১৩ দশমিক ৬১ লাখ টন। এ ছাড়া বোরো ধান, গম ও আলুর বর্তমান বছরের হিসাব এখনও পাওয়া যায়নি। তবে গত অর্থবছরের চেয়ে অনেক বেশি উৎপাদন হবে বলে আশা করছি। শিল্প খাতে-গত অর্থবছরে জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত (বড় ও মাঝারি শিল্প) প্রবৃদ্ধির ইনডেস্ক ছিল ২০৬ দশমিক ৩৭, যা চলতি অর্থবছরের একই সময়ে হয়েছে ইনডেস্ক ২২৫ দশমিক ৭২। ছোট ছোট শিল্পের ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধির হার হচ্ছে গত অর্থবছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ছিল ৩ দশমিক ৭১ শতাংশ, যা চলতি অর্থবছরের একই সময়ে হয়েছে ১০ দশমিক ৫৬ শতাংশ। একইভাবে রাজস্ব আয় বেড়েছে। গত অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রাজস্ব আয় ছিল এনবিআর-এর ৯ দশমিক ২৩ মিলিয়ন টাকা, যা চলতি অর্থবছরের একই সময়ে হয়েছে ১৬ দশমিক ৪২ মিলিয়ন টাকা। তাছাড়া রেমিটেন্স বাড়ছে, রিজার্ভ গত পরশুদিন পর্যন্ত ২৩ দশমিক ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে। তিনি জানান, আগামী বছর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি) হবে এক লাখ কোটি টাকার। এ জন্য আমাদের এডিপি বাস্তবায়নের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। এডিপি বাস্তবায়ন সঠিক করতে প্রকল্প পরিচালকদের যোগ্যতা অনুযায়ী দায়িত্ব দেয়া হবে। মন্ত্রী বলেন, ফাস্ট ট্রাক প্রকল্পগুলো আগামী বছর দৃশ্যমান হবে। তিনি জানান, বাগেরহাটে তৈরি হচ্ছে খানজাহান আলী বিমানবন্দর। কেননা খুলনা-বাগেরহাটসহ ওই অঞ্চল মিলে অর্থনৈতিক হাব তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি জানান, রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্রের কাজ এগিয়ে চলছে। পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর তৈরির কাজও চলছে। ওই এলাকায় কয়েকটি বড় বিদ্যুত কেন্দ্র হচ্ছে। স্পেশাল ইকোনমিক জোন হচ্ছে। সেখানে দেশী-বিদেশী লোকরা যাতায়াত করবে, যাতে সহজেই যেতে পারে সেজন্য বিমানবন্দর গুরুত্বপূর্ণ। এক প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, কালো টাকা আমি ও আমরাই সবচেয়ে বেশি তৈরি করি। কেননা গুলশানে যখন একটি জমি কেউ বিক্রি করে তখন কয়েক কোটি টাকা হলেও রেজিস্ট্রি করার সময় দেখানো হয় কয়েক লাখ টাকা। ফলে বাড়তি টাকাটা কালো টাকা হয়ে যায়। এ জন্য যদি সরকারের সন্দেহ হয় তাহলে ওই জমি নিজেই নিয়ে নিতে পারে। এ বিষয়ে আমি বার বার বলছি, কিন্তু কাজ হচ্ছে না। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রাজনৈতিক অস্থিরতায় বাংলাদেশের খুব বেশি ক্ষতি হয়নি। কেননা ওই সময়ে কল-কারখানা বন্ধ ছিল না, কৃষি কাজ বন্ধ ছিল না। আমদানি ও রফতানিতে কোন সমস্যা হয়নি। তাহলে ক্ষতি হলো কিভাবে। শুধু পরিবহন খাতে কিছুটা ক্ষতি হয়েছে। তাছাড়া বহির্বিশ্বে আমাদের ইমেজের বিষয়ে কিছুটা প্রভাব পড়েছে। আশা করছি তা ঠিক হয়ে যাবে। তিনি আরও বলেন, রেলগাড়ি যখন একবার ট্র্যাকে উঠে যায় তখন সে এমনিতেই চলতে পারে। তেমনি বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন এমন একপর্যায় গেছে, যা সামান্য কোন ধাক্কায় ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এসএমই পদ্ধতি ব্যবহার করে পরিসংখ্যান ব্যুরো জিডিপির হিসাব প্রাক্কলন করে থাকে। কাজেই এটি ভুল হওয়ার সম্ভাবনা নেই। আপনারা যে কোন অর্থনৈতিক পূর্বাভাস শুনে বিভ্রান্ত হবেন না, জাতিকে বিভ্রান্তি করবেন না। আগামী বছর জাতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে। কেননা এতগুলো মেগা প্রকল্পের আগে কখনও একসঙ্গে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বাস্তবায়ন হতে কেউ দেখেনি। আগামী বছরই ফাস্টট্র্যাকভুক্ত প্রকল্পগুলোর বাস্তব অগ্রগতি চোখে পড়বে।
×