ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

টিনশেড দেবে হত ১১

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ১৬ এপ্রিল ২০১৫

টিনশেড দেবে হত ১১

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর রামপুরার পূর্ব হাজীপাড়া নতুন রাস্তার বউ বাজার এলাকায় একটি টিনশেড ঘর দেবে যাওয়ার ঘটনায় একই পরিবারের ৩ জনসহ ১১ জন নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় এখনও ২০ জনের মতো নিখোঁজ রয়েছেন। তাদের উদ্বারের জন্য ফায়ার সার্ভিসের কর্মী ও ডুবুরিরা উদ্ধার তৎপরতা অব্যাহত রেখেছেন। এ ঘটনায় প্রধানমন্ত্রি গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেন। নিহতরা হলেনÑ বরগুনার নিজাম (৪৭), তার স্ত্রী কল্পনা বেগম (৪২), ছেলে সবুজের বউ রোকসানা (২২), রিক্সাচালক মিজানুর রহমান (৩০), স্থানীয় মুদি দোকানদার বরিশালের হারুণ অর রশিদ (৫৬), খলিলুর রহমানের ছোট ছেলে সাইফুল ইসলাম (১৪), ঝালকাঠির মাসুদের স্ত্রী সাজিদা (১৯) ফারজানা (৯) ও জাকির (৪০) জ্যোস্না বেগম (৪০) ও রুনা (১৪)। রামপুরা থানার পরিদর্শক আলমগীর হোসেন ৮ জন নিহত হওয়ার খবর নিশ্চিত করেছেন। এমন একটি কাঁচাবাড়ি রাজউকসহ স্থানীয় সরকারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের নজরে থাকা সত্ত্বেও কোন প্রকার সতর্কতামূলক ব্যবস্থা আগে নেয়া হয়নি। দিনের পর দিন এমন একটি ঝুঁকিপূর্ণ বাড়িতে শতাধিক লোকের বসবাস থাকলেও তাদেরকে কেউ কখনও সতর্ক করেনি। এমনটি ঘটতে পারে যে কোন সময় সে আশঙ্কা ছিল প্রতিবেশীদেরও। মতিঝিল বিভাগের ভারপ্রাপ্ত ডিসি আনোয়ার হোসেন ঘটনাস্থল থেকে বলেন, দুর্ঘটনার সংবাদ পেয়ে র‌্যাব-পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে নিরাপত্তা জোরদার করেছে। এছাড়া ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার কাজেও সহায়তা করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত সাতটি লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের পরিচয়ও নিশ্চিত করা হয়েছে। লাশগুলো ঢাকা মেডিক্যাল মর্গে পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। ডিসি আনোয়ার হোসেন বলেন, টিনশেডের ঘরগুলোর মালিক স্থানীয় যুবলীগ নেতা মনির চৌধুরীর। ঘটনার পর তিনি পলাতক রয়েছেন। ঘরগুলো বৈধ না অবৈধ বিষয়টি দেখার দায়িত্ব সিটি কর্পোরেশনের। যেহেতু হতাহতের ঘটনা ঘটেছে, সেহেতু আমরা আইন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। বরগুনার ২ নম্বর ইউনিয়নের মৃত নেসার আলীর ছেলে নিজাম খাঁ। তিনি হাজীপাড়া বড় বাজারে আখের রস বিক্রি করতেন। স্ত্রী কল্পনা আক্তার, ছেলের বউ রোকসানা আক্তারকে নিয়ে নিজাম খাঁ ঝিলের টিনশেড ঘরে থাকতেন। ঘর দেবে গেলে তারা পানিতে আটকা পড়েন। নিজাম খাঁ ঘটনাস্থলে মারা যান। আহত কল্পনা ও রোকসানাকে উদ্ধার করে রাজধানীর খিলগাঁও খিদমাহ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। মিজানুর রহমান ঝালকাঠির রাজাপুরের ছবিল খাঁর ছেলে। তিনি রিক্সা চালাতেন। স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ হাসান আলী জানান, বাঁশ ও টিনের তৈরি ঘরগুলো দোতলা অবকাঠামোর ওপর নির্মিত। নিচতলা ও দোতলায় ২৮টি ঘর ছিল। কেউ পরিবার নিয়ে আবার কেউ ব্যাচেলর হিসেবে সেখানে থাকতেন। বাঁশের খুঁটি দিয়ে গড়া এ বাসস্থানটি দেবে যাওয়ার পর পরই হেলে পড়ে বলে জানান ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের ডিউটি অফিসার ইন্সপেক্টর মোঃ আলী। তিনি জানান, বুধবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ঘরগুলো দেবে যায়। ফায়ার সার্ভিসের একটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে উদ্ধার কাজ চালাচ্ছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকেলে ঝিলের ওপর বানানো একটি দোতলা টিনশেড ঘর পানিতে দেবে যায়। বাঁশের খুঁটি দিয়ে গড়া এ বাসস্থানটি পানিতে দেবে যাওয়ার পর পরই হেলে পড়ে বলে জানিয়েছেন ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের ডিউটি অফিসার ইন্সপেক্টর মোঃ আলী। নিহত নিজামের ছেলে সবুজ জানায়, তার বাবা গে-ারির রস বিক্রি করতেন। টিনশেড বাড়ি দেবে যাওয়ার সময় তাদের ঘরটিতে তার মা কল্পনা বেগম ও তার স্ত্রী রোকসানাও ছিল। তাদেরকে রামপুরার খিদমাহ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এদিকে, উদ্ধার তৎপরতায় যোগ দেয় ফায়ার সার্ভিসের ৪টি ইউনিট। ওই সারিতে ৩৬টি ঘর ছিল। রামপুরার হাজীপাড়া নতুন রাস্তার বউ বাজার এলাকায় দেবে যাওয়া টিনশেডের ঘরগুলো দুইবার চেষ্টা করেও অপসারণে ব্যর্থ হয়েছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স। উদ্ধার কাজে ব্যবহৃত ক্রেন দুইবারই ছিঁড়ে যায়। এদিকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা লোকজন উদ্ধার কাজে ধীরগতির অভিযোগ তুলেছেন। ঘর দেবে যাওয়ার ঘটনায় নিখোঁজ রীনার স্বামী আবদুল মালেক বলেন, ‘আমার স্ত্রী ভেতরে আটকা পড়েছে। সময়মতো উদ্ধার করতে পারলে তাকে হয়ত বাঁচানো যেত। কিন্তু ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার কাজের অগ্রগতি দেখছি না।’ ফায়ার সার্ভিস থেকে দাবি করা হচ্ছে, ছয়টি ইউনিট কাজ করছে। কিন্তু দুর্ঘটনাস্থলে মাত্র একটি ইউনিট রয়েছে। ইউনিটের সাত জন সদস্য টিন ও স্টিলের পাত কাটার কাজ করছেন। এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের ডেপুটি ডিরেক্টর নুরুল হক বলেন, ‘আমাদের ছয়টি ইউনিট কাজ করছে। ঘরগুলোর অবকাঠামো টিন ও স্টিলের পাত দিয়ে তৈরি হওয়ায় তা অপসারণ করা সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে টিন ও পাত কেটে আস্তে আস্তে তা সরাতে হবে। ইতোমধ্যে আমাদের লাইটিং ইউনিট রওয়ানা দিয়েছে। ইউনিট এলেই পুরোদমে উদ্ধার কাজ শুরু হবে।’ কত সময় লাগতে পারে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘উদ্ধার কাজে একটু সময় তো লাগবেই। তবে কতক্ষণ লাগবে তা নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব হচ্ছে না।’ প্রধানমন্ত্রীর শোক ॥ রামপুরা থানাধীন হাজীপাড়া এলাকায় টিনশেড ভবন দেবে যাওয়ার ঘটনায় হতাহতের ঘটনায় শোক ও গভীর সমবেদনা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
×