ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বর্ষবরণে মানুষের ঢল

প্রকাশিত: ০৪:২২, ১৬ এপ্রিল ২০১৫

বর্ষবরণে মানুষের ঢল

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ বাংলা নববর্ষকে বরণ করতে পয়লা বৈশাখ মঙ্গলবার দেশের সর্বত্র নামে মানুষের ঢল। শিশু-কিশোর থেকে শুরু করে আবাল-বৃদ্ধবণিতা এ উৎসবে মেতে ওঠেন। মঙ্গল শোভাযাত্রা, র‌্যালি, পান্তা ইলিশ, বৈশাখী মেলাসহ নানা আয়োজনে উদ্যাপন করা হয় পয়লা বৈশাখ। খবর স্টাফ রিপোর্টারের। খুলনা ॥ খুলনায় সর্বস্তরের মানুষের ঢল নেমেছিল। বর্ষবরণ ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বৈশাখী মেলা এবং বিনোদন স্পটকে ঘিরে নারী, শিশুসহ নানা বয়সের অগণিত মানুষ আনন্দ উৎসবে মেতে ওঠে। মধ্য রাত পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন রাস্তা, রূপসা সেতু ও সংলগ্ন এলাকা মানুষের পদচারণায় মুখর ছিল। বিভিন্ন আলোচনা সভায় বক্তারা শুভ নববর্ষে অশুভ শক্তি মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। বর্ষবরণ উপলক্ষে সকাল ৭টায় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শিববাড়ী মোড় থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু হয়ে অফিসার্স ক্লাব পর্যন্ত গিয়ে শেষ হয়। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় শিববাড়ী মোড় থেকে ময়লাপোতা হয়ে রয়েল চত্বর পর্যন্ত এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের করে। খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সকালে পান্তা ইলিশসহ বর্ণাঢ্য আয়োজনে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান শুরু করে। বিকেলে জাতিসংঘ শিশু পার্কে আলোচনা সভা ও মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়ন (কেইউজে), সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট খুলনা, উদীচী খুলনা জেলা সংসদ, রূপান্তর ও বর্ষবরণ পর্ষদ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন, প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার পক্ষ থেকে র‌্যালি, পান্তাপর্ব, আলোচনা সভাসহ নানা অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। চট্টগ্রাম ॥ নববর্ষ বরণে নারী, পুরুষ, শিশু নির্বিশেষে বিভিন্ন বয়সের লাখো মানুষের ঢল নামে দৃষ্টিনন্দন ডিসি হিল, সিআরবি শিরিষতলা ও কর্ণফুলী নদীর তীরসহ বিভিন্ন স্থানে। রঙ-বেরঙের পোশাক আর ব্যানার ফেস্টুনে বাঁধভাঙ্গা স্রোত নামে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানগুলোতে। ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে আনন্দে মেতে উঠে মানুষ। চট্টগ্রামের ডিসি হিল ও সিআরবির শিরিষতলায়। ভোর থেকেই মানুষের ঢল নামতে শুরু করে। বেলা ১০টার মধ্যেই লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে পুরো এলাকা। লাখ লাখ মানুষ রাস্তায় নেমে আসে বর্ষবরণ উৎসবে মেতে উঠতে। শুধু বড় আয়োজনগুলোই নয়, নগরী ও জেলার বিভিন্ন স্থানে বসে অসংখ্য বৈশাখী মেলা। এ সব মেলায় সাধারণ মানুষের উপস্থিতি ছিল বেশ লক্ষণীয়। বিশেষ করে শিশু কিশোরদের আনন্দ ছিল চোখে পড়ার মতো। তাদের হাতে ছিল রঙ-বেরঙের বেলুন, বাঙালী সংস্কৃতির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কারুকার্যখচিত কাগজ, খেলনা, বাদ্যযন্ত্র। এছাড়া পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চারুকলা ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রাম প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট), বাংলাদেশ মহিলা সমিতি (বাওয়া) এবং নগরী ও জেলার বিভিন্ন স্থানে বর্ষবরণের জমজমাট আয়োজন ছিল। সঙ্গীত, আবৃত্তি, ঢোলবাদন ও বাঙালী সংস্কৃতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বাদ্যযন্ত্রের শব্দে মুখর হয় অনুষ্ঠানস্থল ও আশপাশের এলাকা। যশোর ॥ সকাল থেকেই বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন শহরে আয়োজন করে নাচ-গান, মিষ্টিমুখ অনুষ্ঠান ও পান্তা ইলিশের। সবচেয়ে বড় অনুষ্ঠান হয় পৌর পার্কে। এছাড়া শহরে বের করা হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। চারুপিঠ যশোর ও জেলা প্রশাসন যৌথভাবে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। কালেক্টরেট চত্বর থেকে বের হওয়া মঙ্গল শোভাযাত্রায় মানুষের ঢল নামে। যশোর পৌর উদ্যানে উদীচী নববর্ষ বরণ উৎসব আয়োজন করে। নাচ, গান, আবৃত্তিসহ বিনোদনের নানা অনুষঙ্গে এ আয়োজন মনোমুগ্ধ করেছে দর্শকদের। সকাল ৬টা ৩১ মিনিটে শুরু হয় যশোর উদীচীর বর্ষবরণ উৎসব। ‘মুক্ত মনের আলোকে, আঁধার কাটুক পলকে’ এ সেøাগানকে সামনে রেখে উদীচী যশোর এবার উদযাপন করেছে বাংলা নববর্ষ উদযাপনের চার দশক। নানা বয়সের হাজার হাজার নারী পুরুষের মিলন মেলায় পরিণত হয় পৌর উদ্যান। ‘নীরবতা ভেঙে ফেলি আপন আলোয়’- এ স্লোগানে সাংস্কৃতিক সংগঠন শিকড় অনুষ্ঠানের ডালিতে ছিল ৮টি পর্ব। একইসঙ্গে বর্ষবরণ আনন্দে নবকিশলয় স্কুল মাঠে উৎসব আয়োজন করে বিবর্তন ও সুরধুনী। শহরের ২৫টি স্পটে এবার বর্ণাঢ্য আয়োজনে পহেলা বৈশাখ উদ্যাপন করা হয়েছে। রাজশাহী ॥ পুরনো বছরের জীর্ণতাকে বিদায় দিয়ে নতুনকে বরণ করে নিতে উচ্ছ্বাসে মেতেছিলো রাজশাহীর উৎসবপ্রিয় মানুষ। মঙ্গলবার সকালে বর্ণাঢ্য আয়োজনে নেচে গেয়ে প্রাণের উচ্ছ্বাসে হাসি আর আনন্দে নতুন বছরের মঙ্গলযাত্রায় শামিল হন বিভিন্ন স্তরের নারী, পুরুষ ও শিশুরা। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্ষবরণে ছিল বর্ণাঢ্য আয়োজন। সার্বজনীন এ উৎসবের দিনে সবার মধ্যেই ছিল সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদকে রুখে দেয়ার দৃঢ় প্রত্যয়। এর মধ্যে দিয়ে বছরের প্রথম দিনে সবাই আরও একবার প্রকাশ করেন তাদের আবহমান চেতনার কথা। শিকড়ের সন্ধানে নববর্ষকে বরণ করতে রাজশাহী মহানগরী জুড়েই বাঙালী উৎসবের আমেজ ছিল দিনভর। বৈশাখের খরতাপ উপেক্ষা করে বর্ষবরণে মেতে ওঠে মানুষ। সাদা আর লাল রঙের আলোকচ্ছটায় রঙিন হয়ে ওঠে যান্ত্রিক নগরজীবন। বর্ণিল আনন্দের ঘনঘটায় বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পহেলা বৈশাখ উদ্যাপিত হচ্ছে রাজশাহী মহানগরী ও জেলাজুড়ে। বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী প্রতিষ্ঠান এবং সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের উদ্যোগে গ্রহণ করা হয় বর্ণিল কর্মসূচী। এ সব কর্মসূচীর মধ্যে ছিল, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পান্তা-ইলিশসহ বাঙালী খাবারের আয়োজন। মঙ্গলবার সকাল থেকে বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ, শিশু-কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীরা বাংলা নববর্ষকে স্বাগত জানাতে বাহারি পোশাক পরে বাইরে বেরিয়ে পড়ে। ভোরে সূর্যোদয়ের পর ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো... গানের মধ্যে দিয়ে নগরীর পদ্মা পাড়ের উন্মুক্ত মঞ্চে শুরু হয় বর্ষবরণের বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান। সেখানে আয়োজন করা হয়েছে পান্তা-ইলিশ উৎসবের। দিনব্যাপী অন্যান্য অনুষ্ঠানের মধ্যে ছিল সঙ্গীত পরিবেশন, নৃত্য, আবৃত্তি, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা, গ্রামীণ খেলা, গম্ভীরা ইত্যাদি। বগুড়া ॥ সকালে শহরের এ্যাডওয়ার্ড পার্কের একাংশে বগুড়া থিয়েটারের আয়োজনে পাঁচ দিনের বৈশাখী মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা শহর প্রদক্ষিণ করে। এ সময় বিভিন্ন সংগঠনের র‌্যালি একের পর এক শোভাযাত্রার সঙ্গে যোগ হতে থাকে। শহর পরিণত হয় বর্ণিল উৎসবের নগরীতে। বরিশাল ॥ জেলার দশটি উপজেলার শতাধিক গ্রামীণ জনপদে বৈশাখী মেলা শুরু হয়েছে। এ সব মেলা ঘিরে গ্রামীণ খেলাধুলার আয়োজন ছাড়াও প্রদর্শন করা হয় কবি গান, পালাগান, জারি গান, বায়োস্কোপ, যাদু প্রদর্শন ইত্যাদি। এছাড়া গৃহস্থালী বিভিন্ন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র, মসলা, খেলনাসহ এমনকিছু নেই যা এ মেলাগুলোতে পাওয়া যায় না। জানা গেছে, বিএম স্কুল মাঠে উদীচী শিল্পী গোষ্ঠীর আয়োজনে পহেলা বৈশাখ থেকে তিন দিনব্যাপী বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়। সোনারগাঁওয়ে বউ মেলা স্টাফ রিপোর্টার নারায়ণগঞ্জ থেকে জানান, সোনারগাঁওয়ে বসেছে বউ মেলা। চারশ’ বছরের পুরানো একটি বটবৃক্ষকে কেন্দ্র করে যুগ যুগ ধরে পালিত হচ্ছে এ বউ মেলা। বুধবার দুপুর থেকে সোনারগাঁও উপজেলা পরিষদ সংলগ্ন জয়রামপুর এলাকায় ভট্টপুর মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠের বটতলায় শুরু হয়েছে বউ মেলা। এ মেলায় সনাতন ধর্মাবলম্বী নারীরা এসে জড়ো হয়। তারা বটগাছের গোড়াতে পূজা করেন। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, এ বটবৃক্ষটি হয়ে উঠেছে পুণ্যের দেবতা। তাই সনাতন ধর্মাবলম্বী নারীরা সারাবছর অপেক্ষায় থাকে এ বউ মেলার জন্য। রেকাবি ভরা বৈশাখী ফলের ভোগ নিয়ে দলে দলে হিন্দু নারীরা হাজির হয় বউ মেলায়। পাশাপাশি দেবতার সন্তুষ্টির জন্য কবুতর উড়ানো ও পাঠা বলি দেয়া হয় বৃক্ষ দেবতার পদতলে। স্বামী সংসারের বাঁধন যেন অটুট থাকে, সারাবছর সুখ শান্তিতে যেন কাটে দাম্পত্য জীবনÑ এই কামনাতেই পূজার আয়োজন করে হিন্দু নারীরা। বুধবার দুপুর থেকে অগণিত রমণীর পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে বটতলার বউ মেলা।
×