ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

ওবামা-রাউল ক্যাস্ট্রো ॥ ইতিহাস গড়লেন

প্রকাশিত: ০৪:০৮, ১৪ এপ্রিল ২০১৫

ওবামা-রাউল ক্যাস্ট্রো ॥ ইতিহাস গড়লেন

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং কিউবার প্রেসিডেন্ট রাউল ক্যাস্ট্রো শনিবার পানামায় এক ঐতিহাসিক বৈঠক করেছেন। এটি দুই দেশের নেতার মধ্যে ৫০ বছরের বেশি সময়ের মধ্যে প্রথম মুখোমুখি বৈঠক। পানামা সিটিতে সামিট অব আমেরিকাসের সম্মেলন কেন্দ্রের ছোট একটি কক্ষে ক্যাস্ট্রোর সঙ্গে বৈঠককে ‘ঐতিহাসিক’ বৈঠক বলে অভিহিত করেছেন ওবামা। ওবামা বলেন, আমাদের সরকারগুলোর মধ্যে মতভেদ থাকবেই। তারপরও একই সময়ে আমরা আমাদের পারস্পারিক স্বার্থ এগিয়ে নিতে পদক্ষেপ গ্রহণে একমত হয়েছি। ক্যাস্ট্রোর সঙ্গে এই বৈঠককে ওবামা সাহসী ও ফলপ্রসূ বলেছেন। তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে গত ডিসেম্বরে তাঁর ঘোষণা করা লক্ষ্য নিয়ে কাজ অব্যাহত থাকবে। সন্ত্রাসবাদের রাষ্ট্রীয় মদতদাতা হিসেবে কিউবার নাম যুক্তরাষ্ট্রের তালিকা থেকে বাদ দেয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের ঘোষণা দেয়ার আগে তিনি বলেছেন, এ নিয়ে তিনি আরও আলোচনা করবেন। এদিকে, ক্যাস্ট্রো বলেছেন, দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘ ও জটিল ইতিহাস থাকা সত্ত্বেও তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নতুন সম্পর্ক গড়তে চান। তিনি বলেন, আমরা সব বিষয় নিয়ে কথা বলতে পারি। তবে আমাদের ধৈর্য ধরতে হবে। আমেরিকা সম্মেলনের ফাঁকে এই বৈঠক ওবামার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। কারণ তিনি কিউবার সঙ্গে সম্পর্ক সহজ করতে এবং একটি প্রজন্ম পুরনো বিতর্ক মিটিয়ে ফেলতে চান। আর এই বিষয়টি ওই অঞ্চলের অন্য দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্কে প্রভাব ফেলছে। কিউবার জন্য কিছু প্রস্তাব নিয়ে সম্পর্কের ধারা পরিবর্তনের সংকল্পে ওবামা এবারের সম্মেলনে যোগ দেন। আর ২০ বছরের বেশি সময় পর কিউবা প্রথমবারের মতো এই সম্মেলনে যোগ দেয় এবং শনিবারের বৈঠক ছিল দুই নেতার মধ্যে প্রথম পূর্ণাঙ্গ বৈঠক। ওবামা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র অতীত নিয়ে অবরুদ্ধ হয়ে থাকতে চায় না। আর আমার জন্মের আগের যুদ্ধ নিয়ে আমার কোন আগ্রহ নেই। আমরা এখন ভবিষ্যতের দিকে এগিয়ে যাব। এখন আমাদের সময় এসেছে নতুন কিছু করার। কিউবা বিষয়ে নীতির পরিবর্তন পুরো অঞ্চলের জন্য একটা টার্নিং পয়েন্ট হতে পারে। এদিকে, ক্যাস্ট্রো মার্কিন প্রেসিডেন্ট ওবামা সম্পর্কে অস্বাভাবিক রকম উষ্ণ স্বরে বক্তব্য রাখেন। তিনি কিউবা ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের ইতিহাস নিয়ে দীর্ঘ ভাষণ দেন। তবে ভেনিজুয়েলার মতো মিত্রদের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রেখেছে কিউবা। দক্ষিণ গোলার্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ঐতিহাসিক অবিচারের তীব্র সমালোচনা করেন তিনি। ক্যাস্ট্রো বলেছেন, তিনি ওবামার লেখা বইগুলো পড়েছেন। কিউবার ওপর আরোপিত বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে ওবামার নির্বাহী ক্ষমতা ব্যবহারের সিদ্ধান্তকে সাহসী বলে তিনি অভিবাদন জানিয়েছেন। তিনি তার দেশের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে এবং গুয়ানতানামো দ্বীপ ফিরিয়ে দিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানান। মার্কিন সেনাবাহিনী দ্বীপটি অবৈধভাবে দখল করে রেখেছে বলে তিনি মন্তব্য করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মার্কিন সিনিয়র প্রশাসনিক কর্মকর্তা বলেছেন, এই দুই নেতার ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক কিউবান, মার্কিন ও পুরো অঞ্চলের তাৎপর্যপূর্ণ মুহূর্তের প্রতিফলন। ওই বৈঠকে কোন উত্তেজনা ছিল না। তবে তাঁরা সব বিষয়ে একমত হননি। ৫০ বছরেরও বেশি সময় পর বৈরিতার অবসান ঘটিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও কিউবার কূটনৈতিক সম্পর্কের পথে এগোনোর এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন বিশ্বনেতারা। একে অপরের সম্পর্কে নতুন অধ্যায় শুরুর পট প্রস্তুতের প্রশংসা করেছেন লাতিন আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলোর নেতারা। সম্পর্কের সব জটিলতা জয় করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সৎসাহসের জন্য ওবামার পাশাপাশি ক্যাস্ট্রোকেও ‘উষ্ণ অভিনন্দন’ জানান পোপ। এদিকে, দীর্ঘদিনের বৈরী প্রতিবেশী কিউবার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক এবং আরেক বৈরী দেশ ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সঙ্গে সংক্ষিপ্ত সাক্ষাতের কারণে দেশে ফিরেই সমালোচনার মুখে পড়েন ওবামা। ২০১৬ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রিপাবলিকান দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী কিউবান-আমেরিকান টেড ক্রুজ ‘একজন কমিউনিস্ট একনায়কের কাছে মাথা নত’ করার দায়ে অভিযুক্ত করেন ওবামাকে। Ñইন্টারন্যাশনাল নিউইয়র্ক টাইমস
×