ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিদায় ১৪২১

প্রকাশিত: ০৬:৩১, ১৩ এপ্রিল ২০১৫

বিদায় ১৪২১

‘ঈশানের পুঞ্জমেঘ অন্ধবেগে ধেয়ে চলে আসে/বাধাবন্ধহারা/ গ্রামান্তের বেণুকুঞ্জে নীলাঞ্জনছায়া সঞ্চারিয়া/হানি দীর্ঘধারা।/বর্ষ হয়ে আসে শেষ, দিন হয়ে এল সমাপন,/চৈত্র অবসান/গাহিতে চাহিছে হিয়া/পুরাতন ক্লান্ত বরষের/সর্বশেষ গান।’ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের কথা এটি। এটি সেকালের কথা। আজ পুরাতন-ক্লান্ত বরষের সর্বশেষ গান একালে আমাদেরও গাইতে ইচ্ছে করছে। আজ পুরাতন বছরের শেষদিন। অনেক ঘটনা, অনেক স্মৃতি, হাসি-কান্না তথা আনন্দ-বেদনার স্মৃতিবিজড়িত বছরটি আজ চলে যাবে মহাকালের গর্ভে চিরকালের মতো। আর কোনদিন একে খুঁজে পাওয়া যাবে না। দিন পেরিয়ে রাত পোহালেই আসবে আরেকটি বছর, নতুন বাংলা বছর ১৪২২ বঙ্গাব্দ। নতুন বছরকে সবাই স্বাগত জানাবে। আনন্দে মাতবে দেশের মানুষ। বর্ষবরণ অনুষ্ঠান হবে সব স্থানে, বিশেষভাবে হবে রাজধানীতে। আমাদের দৈনন্দিন রাষ্ট্রীয়, সামাজিক এবং ব্যক্তিগত কাজে ইংরেজী বছর ব্যবহৃত হলেও বাংলা বছর প্রাণের বছর। অতীতে সব কাজই হতো বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে। আজও গ্রামীণ জীবনে, কৃষিসংশ্লিষ্ট নানা কাজে বাংলা সন-তারিখ অনুসরণ করা হয়। কথায় বলে সময় এবং স্রোত কারও জন্য অপেক্ষা করে না। সতত এগিয়েই চলে। মানুষেরও তেমনি সময়ের সঙ্গে এগিয়ে চলা উচিত। নইলে পিছিয়ে পড়তে হয়। গোটা বিশ্ব এগোচ্ছে। এগোচ্ছে মানুষের চিন্তা-ভাবনার গ-িও। দৃষ্টি প্রসারিত হচ্ছে মানুষের। তথ্য প্রযুক্তির এই যুগে বিশ্ব এখন হাতের মুঠোয়। মানুষের চোখ এখন অনেক বেশি প্রসারিত অনন্ত নীল আকাশের দিকে। মানুষ এগিয়েছে সমাজে, সংসারে এবং রাষ্ট্রীয় জীবনধারায়। বর্তমান সরকার তার ধারাবাহিকতার দ্বিতীয় মেয়াদ শুরুর দুই বছরে পা দিয়েছে। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় এই প্রথম কোন দল পরপর দুই মেয়াদ দায়িত্ব পালনের সুযোগ গেল। ইতোমধ্যে সরকার দেশের মানুষের মৌলিক অনেক দাবি পূরণ করেছে। নানা সমস্যা সত্ত্বেও গত বছরটি ভালভাবে পার করেছে সরকার। তবে গত ৫ জানুয়ারির পর থেকে আন্দোলনের নামে বিরোধী জোটের ব্যাপক তা-ব ও সহিংসতার কারণে দেশের সাধারণ মানুষ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এ সময় বিএনপি-জামায়াতের নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের টানা ৯২ দিনের অবরোধ, ৬৭ দিনের হরতাল, জোট নেত্রীর গুলশানের দলীয় কার্যালয়ে অবস্থান, সারাদেশে পেট্রোলবোমার আগুনে পুড়িয়ে ৭৫ জনসহ ১৩৬ জন মানুষকে হত্যা, ১ হাজার ২শ’ জনকে দগ্ধ ও আহত করাসহ এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতির সৃষ্টি করা হয়। আহত-নিহতরা বেশিরভাগই নিরীহ, নিরপরাধ, দরিদ্র, অসহায় পরিবারের লোকজন। শুধু তাই নয়, ২ হাজারেরও বেশি যানবাহনে আগুন দেয়া হয় ও সেসব ভাংচুর ও ক্ষতিগ্রস্ত করা হয়। এসব নাশকতায় দেশের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৪ হাজার ৯শ’ কোটি টাকা। তারপরও বাজারে খাদ্যপণ্যের মূল্য সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে চেষ্টা করছে সরকার। বিদ্যুতে এখন ১১ হাজারী ক্লাবের সদস্য বাংলাদেশ। গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি মহাসড়ক চার লেনে রূপান্তর, নতুন ফ্লাইওভার নির্মাণ, রাস্তা সংস্কারের মাধ্যমে যোগাযোগ খাতে ব্যাপক সাফল্য এসেছে। কৃষির সাফল্য এনে দিয়েছে খাদ্যে স্বংয়সম্পূর্ণতা। স্বাস্থ্য খাত, দেশী-বিদেশী কর্মসংস্থানসহ গ্রামীণ অবকাঠামোর উন্নয়নে ধারাবাহিক কাজ করে যাচ্ছে সরকার। কাজগুলো করার প্রধান দায়িত্ব সরকারের হলেও সকল রাজনৈতিক দলের সহযোগিতা বহু ক্ষেত্রে জরুরী ছিল, কিন্তু সেই সহযোগিতার বিপরীতে সরকারকে হরতাল-অবরোধের মতো নাশকতা মোকাবেলা করতে হয়েছে। ‘পুরাতন বছরের অবসান’ হতে যাচ্ছে আজ। বিগত বছরের দিকে তাকিয়ে সেখান থেকে ভুল-ত্রুটির শিক্ষা নিয়ে এগোতে হবে। এটাই সময়ের দাবি। মানুষ প্রত্যাশা করে আগামী বছরটি ভালোয় যাবে। এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। জাতীয় কবি নজরুলের কথায় বলতে হবে : ‘আমরা চলিব পশ্চাতে ফেলি পচা অতীত/গিরিগুহা ছাড়ি খোলা প্রান্তরে গাহিব গীত/সৃজিব নূতন ভবিষ্যৎ।’ নতুন ভবিষ্যত গড়ার প্রেরণা নিয়ে আসুক আগামী বছরটি। পুরনো বছরকে বিদায়।
×