ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

উন্নয়নশীল দেশ সম্পর্কে বিশ্বব্যাংকের গবেষণা সমীক্ষার তথ্য;###;এনবিআরের সঙ্গে তামাক কোম্পানিগুলোর বৈঠক ১৫ এপ্রিল

তামাক পণ্যের দাম ১০% বাড়ালে ব্যবহার কমে ৮ ভাগ

প্রকাশিত: ০৬:২৩, ১৩ এপ্রিল ২০১৫

তামাক পণ্যের দাম ১০% বাড়ালে ব্যবহার  কমে ৮ ভাগ

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ রাষ্ট্রীয় কর কাঠামোকে প্রভাবিত করে সুবিধাজনক কর অব্যাহতি পেতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনায় অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছে সিগারেট মেনুফ্যাকচারার্স এ্যাসোসিয়েশন। আগামী ১৫ এপ্রিল বুধবার সকাল ১০ টায় রাজস্ব বোর্ডের সভাকক্ষে এ সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এর আগে গত ২২ মার্চ বিএটিবির চেয়ারম্যানসহ তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করে আগামী ২০১৫-১৬ বাজেটে তামাকের বিদ্যমান কর কমানো, ধাপ পুনর্বিন্যাস ও বিদেশী সিগারেটের চোরাচালান বন্ধের দাবি জানিয়েছেন বলে জানা গেছে। তামাক কোম্পানির অপতৎপরতায় বাজেটে কর বিষয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা খোলামেলা আলোচনা করতে চাই। তবে রুদ্ধদ্বার বৈঠকের বিষয়টি ভেবে দেখিনি। কিভাবে বৈঠক হবে সেটি ভেবে দেখা হবে। তামাকের কর বৃদ্ধির বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ড. আতিউর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, আমি সব সময়ই তামাক কোম্পানির বিপক্ষে রয়েছি। আগামী বাজেটে তামাক পণ্যের ওপর কর বাড়ানো উচিত। গত বাজেটেও বাড়ানো হয়েছে। আশা করছি এবারও বাড়ানো হবে। সূত্র জানায়, গত বছর এপ্রিলে চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেটের আগে কর কমানোসহ নানাবিধ সুবিধা আদায়ের জন্য এ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধিবৃন্দ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তৎকালীন চেয়ারম্যানের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছিল। ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অব টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি) আর্টিক্যাল ৫.৩ ভঙ্গ করে তামাক কোম্পানিগুলো যাতে এবারও গোপন বৈঠক না করার দাবি জানিয়েছে তামাক নিয়ন্ত্রণে কাজ করা এনজিওসহ তামাকবিরোধী বিভিন্ন সংস্থা। এ বিষয়ে ক্যাম্পেন ফর ফ্রি কিডসের কান্ট্রি ডিরেক্টর তাইফুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, প্রতিবছর দামী সিগারেটের দাম কিছুটা বাড়ে। কিন্তু কমদামী সিগারেটের দাম খুব কম বেড়েছে। যেটুকুও বেড়েছে এতে লাভ হচ্ছে তামাক কোম্পানিগুলোর। সরকার কিছুই পাচ্ছে না। তাই সিগারেটের মূল্যস্তর প্রথা তুলে দিতে হবে। শুধু তামাকজাত পণ্যের মূল্যস্তর না বাড়িয়ে বরং এসব পণ্যেও ওপর সম্পূরক শুল্ক হার উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়িয়ে দাম বাড়াতে হবে। সূত্র জানায়, আইন প্রণয়নের পাশাপাশি তামাকপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি তামাক ব্যবহার হ্রাসের ক্ষেত্রে একটি অন্যতম কার্যকর পদ্ধতি। তামাক নিয়ন্ত্রণে তামাকপণ্যের ওপর করারোপের কার্যকারিতা এমনকি তামাক কোম্পানির দ্বারাও স্বীকৃত। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ তামাক কোম্পানি ফিলিপ মরিচের এক নথিতেও পাওয়া যায় এর প্রমাণ। এতে বলা হয়েছিল, তামাক নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত সব উদ্যোগের মধ্যে যেটি আমাদের সবচেয়ে বেশি শঙ্কিত করে তা হচ্ছে করারোপ। যদিও তামাকের বিজ্ঞাপন ও প্রচারের ওপর নিয়ন্ত্রণ এবং জনসমক্ষে ও পরোক্ষ ধূমপানের ওপর নিয়ন্ত্রণ ব্যবসা সঙ্কুুচিত করে, আমাদের অভিজ্ঞতা বলে তামাকপণ্যে করারোপ আরও ব্যাপকভাবে তামাকের ব্যবহার হ্রাস করে। অন্তত তিনটি বিবেচনায় তামাকপণ্যের ওপর অধিকমাত্রায় কারারোপ করা জরুরী বলে মনে করছে তামাকবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত সংগঠনর সংশ্লিষ্টরা। তা হচ্ছে প্রথমত, জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনায় তামাকের ব্যবহার কার্যকরভাবে কমানোর জন্য তামাকের প্রকৃত মূল্য বাড়ানোর জন্য। দ্বিতীয়ত, অর্থনৈতিক বিবেচনায় তামাকের কর ও মূল্যবৃদ্ধি লাভজনক এবং তৃতীয়ত ফ্রেকওয়ার্ক কনভেনশন্স অব টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি) সদস্য দেশ হিসেবে আইনগত বাধ্যবাধকতা। কারণ আন্তর্জাতিক এই চুক্তিতে তামাকের মূল্য বাড়ানোর জন্য যথাযথ রাজস্ব নীতি গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। তামাকের কর সংক্রান্ত এক বিশ্লেষণে দেখা যায়, তামাক পণ্যের ওপর ৭০ শতাংশ সম্পূরক শুল্কধার্য করা হলে এক বছরে বাংলাদেশে ১ হাজার ৩৬০ কোটি শলাকা সিগারেট ও বিড়ির ব্যবহার কমবে এবং তামাক খাত থেকে বাড়তি রাজস্ব অর্জিত হবে ১ হাজার ৫৮৮ কোটি টাকা। কিন্তু এ ধরনের কার্যকর পদক্ষেপ বাস্তবায়িত না হওয়া এবং প্রতিবছর সিগারেট ও বিড়ির প্রকৃত মূল্য কমছে। অর্থাৎ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম যে হারে বাড়ছে তামাকপণ্যের দাম সে হারে বাড়ছে না। তামাক পণ্যের দাম বাড়লে যে এর ব্যবহার কমে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও এটি প্রমাণিত। ১৯৮১ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত ২৪ বছরের উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে বাংলাদেশে সিগারেটের প্রকৃত মূল্য যখনই বেড়েছে তখনই এর ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। বিশ্বব্যাংকের এক গবেষণায় দেখা গেছে, তামাকজাত দ্রব্যের ১০ শতাংশ (প্রকৃত) মূল্যবৃদ্ধি করা হলে এর ব্যবহার উন্নত দেশে ৪ শতাংশ এবং উন্নয়নশীল দেশে ৮ শতাংশ কমে আসে। এ বিষয়ে দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক মহাপরিচালক মোস্তফা কে. মুজেরী জনকণ্ঠকে বলেন, যতদিন পর্যন্ত তামাক পণ্যের চাহিদা রয়েছে ততদিন উৎপাদন হবে, এটিই স্বাভাবিক। কিন্তু এটি যেহেতু নিকৃষ্ট পণ্য, কাজেই এর চাহিদায় নিরুৎসাহিত করতে অবশ্যই উচ্চ হারে করারোপ করা উচিত।
×