ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সেমিনারে অর্থনীতিবিদ আবুল বারকাত

জিয়াই মৌলবাদী শক্তির উত্থানের বীজ বপন করেছিলেন

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১২ এপ্রিল ২০১৫

জিয়াই মৌলবাদী শক্তির উত্থানের বীজ বপন করেছিলেন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবুল বারকাত বলেছেন, দেশে চলমান বিচারহীনতার সংস্কৃতি, সাম্প্রদায়িকতা, মৌলবাদ ও মৌলবাদী জঙ্গীত্বের উত্থান, স্বরূপ, বিস্তৃতি ও কার্যকরণ সম্পর্ক এখনও সঠিকভাবে চিহ্নিত ও বিশ্লেষণ করা হয়নি। বিচারহীনতা বলতে কেবল বিচারিক আদালতে ন্যায়বিচার প্রাপ্তির দীর্ঘসূত্রতাকেই বোঝায় না; রাষ্ট্রের নির্বাহী প্রতিষ্ঠানগুলোর অনিয়মের বিরুদ্ধে নীরব থাকাও বিচারহীনতা। বাহাত্তরের সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতার চরিত্র পাল্টানোর মাধ্যমেই দেশে ফের সাম্প্রদায়িকতা ও মৌলবাদের উত্থানের বীজ অঙ্কুরিত হয়েছিল। সাংবিধানিকভাবে অবৈধ প্রেসিডেন্ট মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানই সংবিধানকে প্রথম অধীন ও দাসসত্তায় রূপান্তরিত করেছিলেন। আর সাম্রাজ্যবাদী শক্তি নিজেদের কর্তৃত্ব অক্ষুণœ রাখার স্বার্থেই এ মৌলিক পরিবর্তনে সমর্থন দিয়েছিল। ওই শক্তি এখনও তৎপর। যুদ্ধাপরাধী দল জামায়াতকে রক্ষায় তারা নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করে যাচ্ছে। তাই তথাকথিত সংস্কারের নামে গোঁজামিল দিয়ে এসব সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়। এজন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক অর্থনীতির আলোকে শোষণভিত্তিক আর্থসামাজিক কাঠামোর আমূল পরিবর্তন। রাজনীতিকেই এক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে। শনিবার সকালে রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আয়োজিত ‘বিচারহীনতার সংস্কৃতি, সাম্প্রদায়িকতা-মৌলবাদ-জঙ্গীবাদ : আমাদের করণীয়’ শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে আবুল বারকাত এসব কথা বলেন। এর আয়োজন করে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি। সেমিনারে সভাপতিত্ব করে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. আশরাফ উদ্দিন চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. জামালউদ্দিন আহমেদ। এরপর মূল প্রবন্ধের বিষয়বস্তু উপস্থাপন করেন আবুল বারকাত। ৮৯ পৃষ্ঠার প্রবন্ধের ছয়টি অনুচ্ছেদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও রাষ্ট্র মালিকানাধীন জনতা ব্যাংকের সাবেক এই চেয়ারম্যান বিচারহীনতার দার্শনিক ও অর্থনৈতিক ব্যাখ্যা, এই ভূখ-ে ইসলাম ধর্মের প্রচার, প্রসার, স্বরূপ, ১৯৪৭ সাল থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত ও ১৯৭৫ পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক ইসলামের আবির্ভাব, মৌলবাদী শক্তির অর্থনৈতিক ক্ষমতার বিস্তার, জঙ্গীবাদের উত্থান, সামাজিক শোষণ-বঞ্চনার অর্থনৈতিক স্বরূপ, জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার বাংলাদেশ বিষয়ক কায়েমি ভূমিকা, সেক্যুলারিজম ও ধর্মনিরপেক্ষতার পার্থক্য প্রভৃতি বিষয়ের ওপর প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী আলোচনা করেন। বিদ্যমান সমস্যার সমাধান হিসেবে জাতীয় পর্যায়ের সকল ক্ষেত্রে সংস্কারের পরিবর্তে আমূল পরিবর্তন এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সংহতি বাড়ানোর লক্ষ্যে বিভিন্ন দেশের মধ্যে কৌশলগত কার্যকর জোট সৃষ্টির কথা বলেন। আবুল বারকাত বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মধ্যদিয়ে আমরা ইতিহাস সূত্রে প্রাপ্ত ‘বিচারহীনতার সংস্কৃতি’ থেকে ‘সুবিচার-ন্যায়বিচার-ন্যায্য বিচারের’ সংস্কৃতি এবং ‘ধর্মের রাজনীতিকরণ ও ধর্মীয় উন্মাদনার সংস্কৃতি’ থেকে ধর্মনিরপেক্ষতার সংস্কৃতিসহ বৈষম্যহীন সমাজব্যবস্থার স্বপ্ন দেখেছিলাম। এই স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু পঁচাত্তরের পর থেকে শুরু হয় ‘বঙ্গবন্ধুহীন’ বাংলাদেশের উল্টোযাত্রা। এর ধারবাহিকতা বিচারের রাজনৈতিক অর্থনীতির প্রশ্ন সৃষ্টি করে। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার থমকে থাকা তারই উদাহরণ। আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে মৌলবাদী শক্তির রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তারের চিত্র তুলে ধরে অধ্যাপক বারকাত বলেন, মৌলবাদী শক্তি গুরুত্বপূর্ণ ১২টি খাত থেকে প্রতি বছর দুই লাখ কোটি টাকা নিট মুনাফা অর্জন করছে, যার বিশাল একটি অংশ ব্যয় হয় জঙ্গীবাদী কার্যক্রমে।
×