ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

রুনাময় সঙ্গীত সন্ধ্যায় দর্শক মাতোয়ারা

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১২ এপ্রিল ২০১৫

রুনাময় সঙ্গীত  সন্ধ্যায় দর্শক মাতোয়ারা

গৌতম পাণ্ডে ॥ চৈত্রের মন্দ্রিত সন্ধ্যা। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের প্রবেশদ্বারে শোভা পাচ্ছে সুরের পাখি রুনা লায়লার ছবি। ভেতরে ঢুকেই দেখা যায় সাজ সাজ রব। কেন্দ্রের হল অব ফেমে উৎসুক দর্শনার্থীদের ভিড়ে কানায় কানায় ভর্তি। মঞ্চকেও সাজানো হয়েছে দৃষ্টিনন্দিত করে। সবার চোখ যেন বলে দিচ্ছে কখন আসবেন তাদের প্রিয় শিল্পী রুনা লায়লা। সোনালী দিনের গানের মায়াজালে ভরিয়ে তুলবে সবার হৃদয়। সুরের জাদুতে যিনি করেছেন বিশ্বজয়। কেউ কেউ গুনগুন করে গাইছেন তাঁর কিছু জনপ্রিয় গানের অংশ বিশেষ। পাঁচ দশকের মতো দীর্ঘ সময় ধরে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই কণ্ঠশিল্পীর জনপ্রিয়তা ধরে রাখা যেন সবার কাছেই এক বিস্ময়! পাশের কেউ কেউ বলছেন, ‘দামা দাম মাস্তা কালান্দার’ গান দিয়েই হয়ত শুরু করবেন রুনা। মাঝে মাঝে উপস্থাপিকা সোনিয়া রেজার কণ্ঠে, একটু পরেই শুরু হবে আমাদের অনুষ্ঠান, কথাটা উপস্থিত দর্শকদের আরও উৎসুক করে তুলছিল। বলতে বলতে উপস্থিত হলো সেই মহেদ্রক্ষণ। প্রথমেই শিল্পীর জীবনের কিছু তথ্য তুলে ধরা হয় দুই পাশের পর্দায়। মঞ্চে আসে নবীন প্রজন্মের চার গায়িকা ঝিলিক, নদী, ইভা ও শামা। যন্ত্রীদের সেই চিরচেনা গানের মিউজিক শুনে সহজেই আন্দাজ করে নেয়া গেল ‘শিল্পী আমি তোমাদেরই গান শোনাবো’। গানটি গাইছেন তরুণ এই চার শিল্পী। কয়েক মুহূর্ত পরেই মঞ্চে এলেন রুনা লায়ল?া। নীল শাড়ি পরা শিল্পীকে দেখে মনে হচ্ছিল, তারুণ্য এখনও তাঁর নিত্যসঙ্গী। তিনি চার গায়িকাকে নিয়ে পরিবেশন করেন নিজের জনপ্রিয় গানটি। গান শেষে এই চার তরুণের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন দর্শকদের। মঞ্চে এলেন রুনা লায়লার স্বামী চিত্রনায়ক আলমগীর, শিল্পী ফেরদৌসী রহমান, আরটিভির চেয়ারম্যান মোর্শেদ আলম, প্রধান নির্বাহী সৈয়দ আশিক রহমান এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। ফেরদৌসী রহমান বললেন, ছোট থেকেই ওকে দেখে আসছি। শুরু থেকেই ও দাপটের সঙ্গে গেয়ে আসছে। আরও গাইবে। ওর ভিত্তিটা মজবুত। আমরা সবাই ওকে নিয়ে গর্বিত। ফুল ও ক্রেস্ট দিয়ে সবাই শ্রদ্ধা ও সম্মান জানালেন রুনা লায়লাকে। পরে তাঁরা সবাই মিলে কেক কাটলেন। রুনা লায়লা সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে গান শুরু করেন। শুরুতেই দর্শকদের উদ্দেশে বললেন, আপনাদের কিন্তু আমার সঙ্গে নাচতে হবে। দ্রুতলয়ের ‘ইস্টিশনের রেলগাড়িটা, মাইপা চলে ঘড়ির কাঁটা’ গানটি যখন গাইছেন, তখন মঞ্চে উঠে আসেন শিল্পী শাকিলা জাফর। তিনিও গাইলেন, নাচলেন রুনা লায়লার সঙ্গে। দ্বিতীয় গান পরিবেশনের সময় রুনা মঞ্চে ডেকে নিলেন কণ্ঠশিল্পী আবিদা সুলতানাকে। এরপর খানিক স্মৃতিচারণা। ১৯৭৫ সালের দিকে রুনা লায়লা গিয়েছিলেন ভারতে, গান রেকর্ড করতে ‘সাধের লাউ বানাইল মোরে বৈরাগী’। গানটি রেকর্ড শেষে ফিরে আসেন দেশে। পরে আবার যখন তিনি ভারতে যান, তখন ইমিগ্রেশন অফিসার পাসপোর্ট দেখে বলেন, ‘দিদি, আপনি কি সেই সাধের লাউ?’ কথাটা বলার সঙ্গে সঙ্গে পুরো মিলনায়তন জুড়ে হাসি ও করতালিতে সরব হয়ে ওঠে। ‘সাধের লাউ’ গানটি পরিবেশনের সময় রুনার সঙ্গে যোগ দেন চলচ্চিত্র অভিনেত্রী অঞ্জনা। তাঁর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কোমর দোলালেন রুনাও। পরের গানের সময় মঞ্চে ডেকে নিলেন খুরশীদ আলমকে। তিনিও নাচলেন ‘পান খাইয়া ঠোঁট লাল করিলাম’ গানের সঙ্গে। এর পরের গানটির শব্দ পরিবর্তন করে রুনা চমকে দিলেন দর্শকদের। ‘বন্ধু, তিন দিন এইখানে আইলাম, তালি শুনলাম না, চিৎকার শুনলাম না।’ আর কি দর্শক চুপ থাকতে পারে? শুরু হলো তালিবর্ষণ, চিৎকার! এবার রুনার সঙ্গী হলেন শিল্পী রফিকুল আলম। রুনা মজা করে বললেন, ‘রফিক ভাই, তিন দিন আপনার বাড়ি গেলাম, দেখা পাইলাম না।’ রফিকুল আলমও গাইলেন, নাচলেন। এভাবেই এগিয়ে যেতে থাকে অনুষ্ঠান। ‘যেজন প্রেমের ভাব জানে না,’ ‘দে দে পেয়ার দে’, ‘আল্লাহ মেঘ দে পানি দে’, ‘হায় দাইয়ারে দাইয়ারে কটাচুকা’ গানগুলো পরিবেশিত হতে থাকে। রুনাময় এই অনুষ্ঠানে তিনি যখন গাইছিলেন ‘ও মেরে বাবুলাল’, তখন মঞ্চে তাঁর সঙ্গে যোগ দিয়েছিলেন তরুণ শিল্পী কনা আর দিঠি। ‘এই বৃষ্টি ভেজা রাতে’, ‘যখন থামবে কোলাহল’ গানগুলোতে দর্শকদের হাততালিই যেন ফিরিয়ে নিয়ে যায় গানের সোনালী যুগে। ‘যখন আমি থাকব নাকো’, ‘চঞ্চলা হাওয়া রে’, ‘পরদেশী মেঘ রে’, ‘দামা দাম মাস্তা কালান্দার’ গাইলেন। ‘দামা দাম মাস্তা কালান্দার’ গাওয়ার পর মঞ্চে এলেন আলমগীর। এলেন রুনার ছোট ভাই। রুনা নিজের কথা বললেন। অনুষ্ঠান প্রসঙ্গে রুনা লায়লা বললেন, সঙ্গীত জীবনের ৫০ বছর পার করছি। আমার জীবনের একটা মাইলস্টোন যেন সবার সঙ্গে ভাগাভাগি করতে পারি, সে জন্য এই অনুষ্ঠানের আয়োজন। বিষয়টি আমার জন্য অনেক আনন্দের। স্মরণ করলেন মা-বাবাকে। বললেন, তাঁদের জন্যই তিনি আজকের রুনা হতে পেরেছেন। ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত ছিলেন করাচিতে। এরপর বাংলাদেশে আসেন। গান করেন। বোন দিনা লায়লার কথা স্মরণ করে কাঁদলেন শিল্পী, কাঁদালেন উপস্থিত দর্শকদের।
×