ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

স্বাধীনতার মূল্যবোধে উদ্দীপ্ত তারুণ্যের অপেক্ষার পালা শেষ

বদর প্রধানের ফাঁসি শাপমোচনের দ্বিতীয় ধাপ

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ১২ এপ্রিল ২০১৫

বদর প্রধানের ফাঁসি শাপমোচনের দ্বিতীয় ধাপ

ফিরোজ মান্না ॥ ‘আদিম হিংস্র মানবিকতার যদি আমি কেউ হই/স্বজনহারানো শ্মশানে তোদের চিতা আমি তুলবই।’ সুকান্ত ভট্টাচার্যের কবিতার এই লাইনটি স্বাধীনতার ৪৪ বছর পর আবার মহান মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির প্রাণে প্রাণে প্রতিধ্বনি হচ্ছে। বাঙালীর মনে এই লাইনটি দীর্ঘদিনের শাণিত ক্রোধের আগুন নেভাতে সহযোগী হয়ে উঠেছে। ১৯৭১ সালে হায়েনা কামারুজ্জামানদের হাতে কত স্বজন হারিয়েছে জাতি। কত মা বোনের সম্ভ্রম কেড়ে নিয়েছে এই জানোয়াররা। সেই হায়েনার দলকে বাঙালী জাতি আজ বিচারের মুখোমুখি করেছে। বিচার হয়েছে। বিচারে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ- দিয়েছে আদালত। আইনের সর্বোচ্চ সুবিধাও দেয়া হয়েছে। এই হায়েনার দলের মুরুব্বিরা ১৯৭১ সালে যেভাবে স্নেহ দিয়েছে, একই প্রক্রিয়ায় ২০১৫ সালে স্নেহ মায়া মমতা দিয়ে যাচ্ছে। এই মুরুব্বিদের বাঙালী জাতি ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করেছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সামনে রেখে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৭১ সালের ঘাতক হায়েনাদের বিচার করে জাতিকে শাপমোচন করছে। শাপমোচনের দ্বিতীয় ধাপে কামারুজ্জামানের ফাঁসি। এর আগে কসাই কাদের মোল্লার ফাঁসির রায় কার্যকর করে জাতির কাঁধে থাকা জগদ্দল পাথর সমান কলঙ্ক মোচনের পথ প্রসারিত হয়েছে। কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় কার্যকরের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতার মূল্যবোধে উদ্দীপ্ত তারুণ্যের দীর্ঘ অপেক্ষার পালা শেষ হলো। ঘাতক কামারুজ্জামান একাত্তরে টাঙ্গাইল, জামালপুর ও শেরপুর এই তিন জেলার আলবদর বাহিনীর কমান্ডার। নরঘাতক কামারুজ্জামান মহান মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে ফেরিওয়ালা ছিল। দোকানে দোকানে মাল ফেরি করে বিক্রি করত। কামারুজ্জামান ১৯৭১ সালে প্রথম আঘাত হানে শেরপুর জেলা শহরের সুরেন্দ্র মোহন সাহার বাড়িতে। সুরেন মোহনের বাড়িটি দখল করে রাজাকার বাহিনীর ক্যাম্প স্থাপন করে। ঘাতক কামারুজ্জামান এই বাড়িতে যুদ্ধকালীন জল্লাদখানায় পরিণত করে। পাকি আর্মি মেজর আইয়ুবের ডানহাত হিসেবে কামারুজ্জামান ক্ষমতার শীর্ষে চলে যায়। সুরেন্দ্র মোহনের বাড়িতে পাকি আর্মিদের মনোরঞ্জনের জন্য শহর গ্রামের মা-বোনদের তুলে এনে দেয়। ক্ষতবিক্ষত মা-বোনদের ওপর হায়েনা কামারুজ্জামানও বর্বর নির্যাতন করত। এরপর তাদের এক সময় গুলি করে হত্যা করত। ফেলে দিত শিয়াল শকুনের খাবার হিসেবে। চোখের সামনে অসংখ্য নারী-পুরুষকে হত্যা করে উল্লাসে মেতেছে। নিরীহ নিরস্ত্র মানুষকে হত্যার রক্তমাখা হাত এখনও শুকায়নি কামারুজ্জামানের। অথচ তাকে দেয়া হলো সর্বোচ্চ সুবিধা। স্বাধীনতার ৪৪ বছর ধরে কামারুজ্জামান একই রকম দম্ভ করেছে।
×