ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

জামায়াতের নাশকতারোধে সারাদেশে রেডএ্যালাট

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১২ এপ্রিল ২০১৫

জামায়াতের নাশকতারোধে সারাদেশে রেডএ্যালাট

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যুদ্ধাপরাধী মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকরের প্রতিবাদে জামায়াতের ডাকা হরতাল উপলক্ষে সারাদেশে রেড এ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তি, গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, যুদ্ধাপরাধ মাসংশ্লিষ্ট বিচারক, প্রসিকিউটর ছাড়াও ঐতিহাসিক স্থান ও ধর্মীয় উপাসনালয় ঘিরে গড়ে তোলা হয়েছে বিশেষ নিরাপত্তা বলয়। যে কোন ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে প্রস্তুত রাখা হয়েছে র‌্যাবের হেলিকপ্টার, বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, সোয়াট টিম, ডগ স্কোয়াড, ক্রাইসিস রেসপন্স টিম, স্ট্রাইকিং রিজার্ভ ফোর্স, সাদা পোশাকের পুলিশ ও র‌্যাব, এপিবিএন ও বিজিবি (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ)। শুক্রবার জয়পুরহাটে ছয় গোয়েন্দা পুলিশকে মারধর করে জামায়াত নেতাকে ছিনতাই এবং শনিবার তারই জের ধরে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বাড়ি ভাংচুর, অগ্নিসংযোগসহ জামায়াত-শিবির কর্তৃক লুটপাটের ঘটনা মাথায় রেখেই সারাদেশে রেড এ্যালার্ট জারি করা হয়েছে। পাশাপাশি জামায়াত-শিবির অধ্যুষিত জেলাগুলোতে কর্ডন পদ্ধতিতে ধারাবাহিক অভিযান চলছে। নাশকতা নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত অভিযান চলবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিকে শনিবার রাতে কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর করা উপলক্ষে বিশেষ নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হয়েছিল ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারকে ঘিরে। কারাগারের চারদিকে অন্তত আধাকিলোমিটার কাজুড়ে একপ্রকার অলিখিত ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। বসানো হয়েছিল শতাধিক সিসি ক্যামেরা। বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল কারাগার কায় প্রবেশের সব পথ। বসেছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অসংখ্য চেকপোস্ট। কারাগারের আশপাশের সব উঁচু ভবনে বসানো হয়েছিল ওয়াচ টাওয়ার। সেখান থেকে শক্তিশালী বাইনোকুলার দিয়ে কারাগারসহ আশপাশের কার ওপর তীক্ষè নজর রাখা হচ্ছিল। আর বিদ্যুত চলে গেলেও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কারাগার কা আলোকিত রাখতে অন্তত অর্ধশত ফ্লাডলাইট লাগানো হয়েছিল, যা জেনারেটরের সাহায্যে সর্বক্ষণিক সচল রাখার ব্যবস্থাও ছিল। গত কয়েকদিন ধরেই যুদ্ধাপরাধ মায় কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় কার্যকরের গুঞ্জন চলছিল। রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন না করায় রায় কার্যকরের প্রায় সব বাধা দূর হয়ে যায়। বাকি ছিল সরকারের নির্বাহী আদেশ। আদেশটিও শনিবার কারাগারে পৌঁছে। আদেশ পৌঁছার পর পরই শুরু হয় রায় কার্যকরের চূড়ান্ত প্রস্তুতি। বাড়তে থাকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। শনিবার বিকেল চারটার পর থেকেই কারাগারের নিরাপত্তা আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে। বিকেলে পরিবারের সদস্যরা কামারুজ্জামানের সঙ্গে সাক্ষাত শেষে বেরিয়ে যান। এর পর রায় কার্যকরে সংশ্লিষ্টদের যাতায়াত বেড়ে যায়। বাড়তে থাকে নিরাপত্তাও। বিকেলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফজলে রাব্বী হলের সামনে বক্সীবাজার মোড়ে অতিরিক্ত পুলিশ ও র‌্যাব মোতায়েন করা হয়। কাঁটাতারের একাধিক স্টিলের বেড়া দিয়ে রাস্তার আংশিক বন্ধ করে দেয়া হয়। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার ও আলিয়া মাদ্রাসায় যাওয়ার তিন রাস্তার মোড়ে মোতায়েন করা হয়েছিল বিপুলসংখ্যক পুলিশ, এপিবিএন ও র‌্যাব। শুধু ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের দিকে যাওয়ার রাস্তাটির একপাশ সামান্য ফাঁকা রাখা হয়েছিল। ওই রাস্তা দিয়ে প্রাইভেট কার, রিক্সা, সিএনজি, হিউম্যান হলার ও লেগুনার মতো ছোট ছোট যানবাহন চলাচল করতে দেয়া হয়েছে। যাত্রীবাহী বাসসহ সব ধরনের মাঝারি ও ভারি যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। একাধিক চেকপোস্ট বসিয়ে যানবাহন ও মানুষজনকে তল্লাশি করা হয়েছে। কারা অধিদফতরের সামনে চকবাজারের দিকে যাওয়ার রাস্তা পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। শুধু খোলা রাখা হয়েছিল কারা অধিদফতরের সামনের ডানদিকের সরু রাস্তাটি। তাও শুধু হেঁটে চলার জন্য। গলির মুখে বসানো হয়েছিল পুলিশ, এপিবিএন আর র‌্যাবের কড়া পাহারা। কেন্দ্রীয় কারাগারের পেছনে ঢাকা আলিয়া মাদ্রাসা ও মাদ্রাসাটির বহুতল ছাত্রাবাসের সামনে অবস্থান নিয়েছিল বিপুলসংখ্যক পুলিশ, এপিবিএন ও র‌্যাব। সেখানকার রাস্তাসহ আশপাশের সবকিছু বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। চাঁনখারপুল মোড়ে বসানো হয়েছিল অতিরিক্ত পুলিশ ও র‌্যাব। কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল পুরো রাস্তা। কারাগারের দিকে যেতে প্রতি এক শ’ গজ পর পর বসানো হয়েছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চেকপোস্ট। চাঁনখারপুল থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের শেষ সীমানা পর্যন্ত যাওয়ার রাস্তার প্রতিটি গলিতে অতিরিক্ত পুলিশ ও র‌্যাব মোতায়েন ছিল। মানুষজনের চলাচল সীমিত করতে সন্ধ্যা থেকেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তরফ থেকে মাইকিং করা হয়েছিল। রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় কাঁটাতারের ব্যারিকেড দেয়া হয়েছিল। শুধু রাস্তা নয়, বন্ধ রাখা হয়েছিল দোকানপাটও। কারাগারের সামনে ও পেছনের বহুতল বাড়ির ছাদে বসানো হয়েছিল অন্তত অর্ধশত ওয়াচ টাওয়ার। সেখানে শক্তিশালী বাইনোকুলারসহ অবস্থান নিয়েছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ ও র‌্যাব সদস্য। কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে কারারক্ষী, পুলিশ ও র‌্যাব মোতায়েন ছিল। প্রস্তুত রাখা হয়েছিল বিজিবিকে (বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ)। নিরাপত্তার কারণে আশপাশের যেসব ভবন থেকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার দেখা যায়, সেসব ভবনের বিভিন্ন তলা ও ছাদে অবস্থান নিয়েছিল পুলিশ ও র‌্যাব। পাশাপাশি সেসব জায়গা কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়েছিল। বিভিন্ন আবাসিক ভবনগুলোতে দফায় দফায় তল্লাশী চালানো হয়েছে। কারাগারের চারদিকে অর্ধশতাধিক বাড়তি সার্চলাইট ও ফ্লাডলাইট বসানো হয়েছিল। বিদ্যুত না থাকলেও জেনারেটরের সাহায্যে সেসব ফ্লাডলাইট ও সার্চলাইট সর্বক্ষণিক জ্বালানোর ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। কারাগারের সামনে উৎসুক মানুষ জমতে দেয়া হয়নি। কারাগারের চারদিকে প্রায় আধাকিলোমিটার কাজুড়ে অলিখিত ১৪৪ ধারা জারি ছিল। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানান, সারাদেশে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি গুরুত্ব বিবেচনা করেও অনেক জায়গায় বিশেষ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা থাকছে। বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা তৎপরতাও। যে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা মোকাবেলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে।
×