ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ব্যাংক হিসাব দেড় কোটি ছাড়িয়েছে

প্রকাশিত: ০৪:২৫, ১২ এপ্রিল ২০১৫

প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ব্যাংক হিসাব দেড় কোটি ছাড়িয়েছে

রহিম শেখ ॥ সঞ্চয়ী মনোভাব সৃষ্টি করতে ব্যাংকিং সেবার আওতায় আসছে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। ন্যূনতম ১০ টাকা এবং ১০০ টাকা জমাকরণের মাধ্যমে ব্যাংক হিসাব খোলার বিশেষ কার্যক্রম পরিচালনা করছে সব বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। এতে এগিয়ে আসছে কৃষক, অতিদরিদ্র, স্কুল শিক্ষার্থী, মুক্তিযোদ্ধা, পোশাক ও পাদুকা শ্রমিক, ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্ন শ্রমিকসহ নিম্ন আয়ের মানুষ। বিগত চার বছরের বেশি সময়ে এমন হিসাবের সংখ্যা দেড় কোটি ছাড়িয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কৃষকসহ সমাজের অন্য প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় নিয়ে আসায় সবার মধ্যে সঞ্চয়ের মনোভাব গড়ে উঠছে। যা ভবিষ্যতে দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতির উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, অতিদরিদ্র ও কৃষকদের সঞ্চয়ী মনোভাব সৃষ্টি করতে এবং ব্যাংকিং সেবার অন্তর্ভুক্ত করতে ২০১০ সালে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ তিনটি প্রজ্ঞাপন জারি করে। এতে করে ন্যূনতম ১০ টাকার বিনিময়ে কৃষকরা কেওয়াইসি (ব্যক্তিগত তথ্য) প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে যে কোন ব্যাংকে হিসাব খুলতে পরবেন। এ ধরনের হিসাবে কোন চার্জ কাটা হবে না। এরপর শিক্ষার্থীদের স্কুল ব্যাংকিং, মুক্তিযোদ্ধা, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতায় ভাতাভোগী, ক্ষুদ্র জীবন বীমা পলিসি গ্রহীতাদের, অতিদরিদ্র মহিলা, ছিন্নমূল কর্মজীবী শিশু, ভিক্ষুক, ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দুস্থ পুনর্বাসনের অনুদানপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা, ঢাকা উত্তর ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্ন শ্রমিক, পোশাক শ্রমিক ও হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট হতে অনুদানপ্রাপ্ত দুস্থ ব্যক্তি, আইলাদুর্গত ব্যক্তি ইত্যাদি জনগোষ্ঠীরা এমন হিসাবের আওতায় আসবে উল্লেখ করে এ পর্যন্ত ১২টি প্রজ্ঞাপন জারি করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ২০১১ সালে কার্যক্রমে আসে সরকারী ও বেসরকারী খাতের ব্যাংকগুলো। অর্থনীতিবিদ ও ব্যাংকাররা মনে করছেন, কৃষকসহ সমাজের অন্য প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকিং সেবার আওতায় নিয়ে আসায় কৃষি উপকরণ ও ভাতার টাকা বিতরণের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা সৃষ্টি হয়েছে। পাশাপাশি কৃষকদের মধ্যে সঞ্চয়ের মনোভাব গড়ে উঠছে, যা ভবিষ্যতে দেশের বিনিয়োগ পরিস্থিতির উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারবে। প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১১ সাল থেকে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি শেষে এ সংক্রান্ত হিসাব সংখ্যা দাঁড়ায় ১ কোটি ৫৭ লাখ ৬০ হাজার ৯৩৮টি। সর্বোপরি গত চার বছরে কৃষকের হিসাবসহ সব শ্রেণীর ১০ টাকায় ও ১০০ টাকায় খোলা ব্যাংক হিসাবের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ৫৬ শতাংশ। এর আগে ২০১১ সাল শেষে কৃষকের ও মুক্তিযোদ্ধার ১০ টাকার হিসাব সংখ্যা হয় ৯৫ লাখ ৮৭ হাজার ১৮৪টি। ২০১২ সালে হিসাব সংখ্যা ছিল ১ কোটি ৩০ লাখ ৫১ হাজার ১৬১টি। ২০১৩ সালে ১০ ও ৫০ ও ১০০ টাকার হিসাবধারী দাঁড়ায় ১ কোটি ৩৮ লাখ ৪৫ হাজার ১৩৪টি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, কৃষকের নামে ১০ টাকার হিসাবের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৯৮ লাখ ২১ হাজার ৭২টি। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতায় ভাতাভোগী ৩২ লাখ ৫৯ হাজার ৭৯টি। সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচীর আওতায় ভাতাভোগীদের হিসাব বৃদ্ধি পেয়েছে ২৯ শতাংশ। মুক্তিযোদ্ধাদের নামে ২ লাখ ৮ হাজার ৬৭৩টি। মুক্তিযোদ্ধা হিসাব বৃদ্ধি পেয়েছে ১৪৭ দশমিক ৫ শতাংশ। ক্ষুদ্র জীবন বীমা গ্রহীতাদের নামে ২২ হাজার ৯৯৩টি হিসাব খোলা হয়েছে। ক্ষুদ্র জীবন বীমা গ্রহীতাদের (১০০ টাকা) হিসাব বৃদ্ধি পেয়েছে ১৩১ দশমিক ৭ শতাংশ। এছাড়া স্কুল শিক্ষার্থীদের নামে খোলা হয়েছে সাড়ে ৮ লাখ। ব্যাংকগুলোতে এ ধরনের হিসাব খোলা কার্যক্রম শুরুর প্রথম দিকে ব্যাপক আকারে হিসাব খোলা হলেও পরে এ সংখ্যা গাণিতিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমানে ৪৭টি তফসিলী ব্যাংকের মধ্যে ৪৫টিতে এসব হিসাব খোলার সুযোগ রয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বেসরকারী বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোও যদি এ উদ্যোগে সাড়া দেয় তাহলে হিসাব খোলার এ সংখ্যা আরও বাড়বে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র ম. মাহফুজুর রহমান বলেন, আগামী ৫ বছরের মধ্যে সব মানুষকে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক কাজ করছে। অর্থনীতির উন্নয়নে সবাই আর্থিক অন্তর্ভুক্তির আওতায় আনতে হবে। ১০ ও ১০০ টাকার হিসাব সংখ্যা দেড় কোটি ছাড়িয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক এজন্য এটাকে সন্তোষজনকভাবে নিচ্ছে। তবে পথশিশুদের হিসাব খোলার কার্যক্রম পিছিয়ে যাওয়ায় দুঃখ প্রকাশ করেন তিনি। এ ধরনের হিসাব ধরে রাখতে কী উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন জানতে চাইলে এ মুখপাত্র জানান, পুনঃঅর্থায়ন তহবিলের মাধ্যমে ঋণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। জামানত ছাড়াই এ হিসাবধারীরা স্বল্পসুদে ঋণ নিতে পারবে। প্রয়োজনে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দিয়ে নতুন স্কিম চালু করা হবে। পথশিশুদের বয়স ১৮ বছর হলে তারাও ঋণের সুবিধা পাবে বলে জানান তিনি।
×