ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

‘বাফুফের নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত ফুটবল ক্যাম্প চালিয়ে যাব’

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১১ এপ্রিল ২০১৫

‘বাফুফের নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত ফুটবল ক্যাম্প চালিয়ে যাব’

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ আগামী ৭-১৩ মে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল ‘ইন্দো বাংলা বাংলাদেশ গেমস।’ তবে বৃহস্পতিবার স্থগিত হয়ে গেছে চতুর্থ ইন্দো বাংলা গেমস (২০০৭ সালে ভারতের কলকাতায় অনুষ্ঠিত হয় ইন্দো বাংলা গেমসের প্রথম আসর। ২০০৮ সালে ঢাকায় হয়েছিল দ্বিতীয় আসর। এরপর ২০১০ সালে কলকাতায় তৃতীয় আসর হওয়ার পর এই আসরটি আর অনুষ্ঠিত হয়নি)। ভারতের বেঙ্গল অলিম্পিক এ্যাসোসিয়েশনের কোষাধ্যক্ষ কমল ভা-ারির মৃত্যুতে গেমস পিছিয়ে দিতে অনুরোধ করে পশ্চিমবঙ্গ। যদিও ধারণা করা হচ্ছে বেঙ্গল অলিম্পিক এ্যাসোসিয়েশনের অন্তর্র্বর্তী রাজনৈতিক কোন্দলের কারণেই গেমস পিছিয়েছে। প্রস্তুতির ঘাটতিকে কারণ হিসেবে দেখিয়েছে তারা। বাংলাদেশ অলিম্পিক এ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি মিজানুর রহমান মানু জানিয়েছেন আগামী ১৫ এপ্রিল নির্বাহী কমিটির সভায় ?এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। আগামী বছরের জানুয়ারিতে গেমসের পরবর্তী তারিখ নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ অলিম্পিক এ্যাসোসিয়েশন। গত এপ্রিলে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল এই গেমসের। পরে তা পিছিয়ে মেতে নিয়ে যাওযা হয়। ১০ ডিসিপ্লিনের একটি হচ্ছে ফুটবল। এতে মহিলা ইভেন্টে অংশ নেবে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা ফুটবল দল। গত ২০ মার্চ মহিলা ফুটবলারদের অনুশীলন ক্যাম্প শুরু হয়। ডাকা হয় ৩০ ফুটবলারকে। ২৯ জনই হাজির হয় (খেলোয়াড়রা হলেন- সাবিনা আক্তার, আয়শা সিদ্দিকা জয়া, সুরভী আক্তার ইতি, তৃষ্ণা চাকমা, খালেদা খাতুন, বেলী খাতুন, খাদিজা আক্তার সীমা, মাসুরা খাতুন, সুইনু প্রু মারমা, মাইনু মারমা, মিরনা, আছিয়া খাতুন বীথি, অংম্রা চিং মারমা, বিপাশা মালী, সাবিনা খাতুন, লিপি আক্তার, নুবাই চিং মারমা, মুনমুন আক্তার, সুরাইয়া আক্তার, শিউলী আজিম, শামসুন নাহার, মৌসুমী, মারিয়া মা-া, কৃষ্ণ রানী রায়, সানজিদা, স্বপ্ন, মার্জিয়া, রাজিয়া ও নার্গিস)। তবে মালদ্বীপের একটি ক্লাবের হয়ে সেখানে ফুটবল টুর্নামেন্টে খেলতে যাওয়ায় ক্যাম্পে হাজির হতে পারেননি ফরোয়ার্ড সাবিনা খাতুন। এই ২৯ জনকে নিয়েই চলছিল অনুশীলন ক্যাম্প (পরে চূড়ান্ত স্কোয়াড হবে ২৩ বা ২০ জনের)। তবে ইন্দো বাংলা গেমস স্থগিত হওয়ায় এখন ক্যাম্প চলমান থাকবে কি না, এনিয়ে ক্যাম্পের ফুটবলাররা আছেন দোলাচলে। তবে এ নিয়ে মোটেও কোন অস্বস্তিতে নেই মহিলা জাতীয় দলের কৃতী কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। শুক্রবার বাফুফে আর্টিফিসিয়াল টার্ফে মেয়েদের ট্রেনিংপর্ব শেষ করিয়ে সেখানেই দাঁড়িয়ে জানালেন নিজের অভিমত, ‘ইন্দো বাংলা গেমস যে স্থগিত করা হয়েছে, তা আজ জানলাম পত্রিকা পড়ে। এখন গেমস স্থগিত হয়েছে বলে বাফুফে কিন্তু আমাকে এখনও কোন রকম নির্দেশ দেয়নি যে ক্যাম্প বন্ধ করে দিতে। যেহেতু বাফুফে এ বিষয়ে কিছু জানায়নি, কাজেই ক্যাম্পের কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবেই চালিয়ে যাব। আমাদের প্রস্তুতি যেমনটি চলছিল, ঠিক তেমনটিই চলবে। আজকেও (শুক্রবার) আমরা সকালে মেয়েদের হার্ড ট্রেনিং করিয়েছি। এখন তো একটু আগেই দেখলেন বিকেলের ট্রেনিং শেষ হলো।’ ছোটন অনুশীলন নিয়ে দলের সিরিয়াসনেসের কথাও জানালেন, ‘এই গেমস হচ্ছে দুই দেশের ভাতৃত্ব ও সৌহার্দ্যরে খেলা। তবে খেলা কিন্তু প্রেস্টিজিয়াসও। আমরা সিরিয়াসভাবেই প্র্যাকটিস করছি। খেলব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্য নিয়েই।’ জাতীয় মহিলা দলের ক্যাম্পে কদিন আগে আমেরিকা প্রবাসী মহিলা ফুটবলার মায়ামি রহমান বাংলাদেশে আসেন ট্রায়াল দিতে। ট্রায়ালে টিকলেও কলেজের পরীক্ষার কারণে মায়ামি বুধবার রাতে আবারও আমেরিকা চলে গেছেন। এ প্রসঙ্গে ছোটন বলেন, ‘গেমস যদি পেছায়, তাহলে সেটা মায়ামির জন্য ভালই হবে। তাহলে সে পরীক্ষা দিয়ে আবারও এখানে এসে ক্যাম্পে যোগ দিতে পারবে। ওর মতো কুশলী, দক্ষ ও পরিশ্রমী ফুটবলারই দরকার বাংলাদেশের।’ জাতীয় মহিলা দলে অনুর্ধ-১৪ দলের আছে ১০ ফুটবলার। ছোটন আবার অনুর্ধ-১৪ মহিলা দলেরও কোচ হিসেবে এই মুহূর্তে আলাদা ক্যাম্প করছেন। আগামী ২০-২৫ এপ্রিল পর্যন্ত এএফসি অনুর্ধ-১৪ গার্লস রিজিওনাল চ্যাম্পিয়নশিপের খেলা নেপালের কাঠমান্ডুতে অনুষ্ঠিত হবে। ‘সাউথ এ্যান্ড সেন্ট্রাল জোন’-এ পড়েছে বাংলাদেশ। গ্রুপ ‘বি’ তে বাংলাদেশের সঙ্গে আছে ভারত ও ভুটান। গ্রুপ ‘এ’তে আছে ইরান, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা এবং নেপাল। চার মাস আগে জাতীয় মহিলা দল পাকিস্তানে গিয়ে সাফ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নেয় এবং সেমিফাইনাল পর্যন্ত খেলে। তারপর তিন মাস ধরে এই খেলোয়াড়দের বেশিরভাগই খেলা বা অনুশীলনের মধ্যে ছিল না বলে তারা ফিটনেস হারিয়ে ফেলে। ‘তবে গত ২১ দিনের কঠিন অনুশীলনের মাধ্যমে তাদের সবার ফিটনেস বেশ ভাল পর্যায়ে নিয়ে এসেছি।’ ভাষ্য ছোটনের। কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। নিজে একসময় ছিলেন কৃতী ফুটবলার। ১৯৮৮-২০০২ পর্যন্ত খেলেছেন আরামবাগ, ফকিরেরপুল, ওয়ারী ও বিআরটিসির হয়ে। অধিনায়কত্বও করেছেন প্রতিটি দলেরই। মজার বিষয়Ñ খেলোয়াড়ি জীবন চলাকালেই কোচিং ক্যারিয়ার শুরু করেন তিনি! ২০০৬ সালে বাফুফে কোচ হিসেবে চাকরি হয় তার। ২০০৮ সালে মারদেকা কাপে জাতীয় ফুটবল দলের সহকারী কোচের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১০ এসএ গেমসে তাম্রপদক জেতা বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা দলেরও সহকারী কোচ ছিলেন ছোটন। মেয়েদের বয়সভিত্তিক দলের সঙ্গে ২০০৯ সাল থেকেই সম্পৃক্ত ছোটন। আর জাতীয় বা সিনিয়র দলের সঙ্গে আছেন ২০১০ থেকে। সাফ গেমস, অলিম্পিক বাছাইপর্ব, সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ, এসএ গেমসÑ প্রতিটি আসরেই দলের সঙ্গে ছিলেন সাবেক ফুটবলার ছোটন।
×