ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কেরানীগঞ্জে বৈশাখ ঘিরে ॥ সাড়ে সাত কোটি পোশাক তৈরি

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১০ এপ্রিল ২০১৫

কেরানীগঞ্জে বৈশাখ ঘিরে ॥ সাড়ে সাত কোটি পোশাক তৈরি

নিজস্ব সংবাদদাতা, কেরানীগঞ্জ, ৯ এপ্রিল ॥ ‘বর্ণিল সাজে রঙিন পোশাক’ এ প্রবাদটি যেন বাঙালীর প্রাণের উৎসবে সবচেয়ে বেশি পূর্ণতা পায়। প্রাণের এই উৎসবে সারাদেশে রঙিন পোশাকের চাহিদা মেটাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলছে কেরানীগঞ্জের তৈরি পোশাক প্রতিষ্ঠানগুলো। পহেলা বৈশাখ সামনে রেখে এখন ব্যস্ত হয়ে পড়েছে কেরানীগঞ্জের তৈরি পোশাক প্রতিষ্ঠানগুলো। দিন-রাত মেশিনের চাকা ঘুরছেই কেরানীগঞ্জের তৈরি পোশাক প্রতিষ্ঠানগুলোতে। নাওয়া-খাওয়ার সময়টুকুও পাচ্ছে না শ্রমিক থেকে শুরু করে মালিক পর্যন্ত। তৈরি হচ্ছে বাহারি ডিজাইনের বিভিন্ন নামের ও দামের বৈশাখী জামা ও শাড়ি। কেরানীগঞ্জের তৈরি পোশাক ব্যবসায়ীরা বলছেন, এ বছর তারা সাড়ে ৭ কোটি বৈশাখী পোশাক তৈরি করেছেন। উৎপাদিত এ সকল পোশাকের শতকরা ৯৫ ভাগ তৈরি করা হয়েছে বাঙালীর নান্দনিক ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির মোটিভে। এখানকার তৈরি পোশাক এখন সারাদেশের মার্কেট, বিপণিবিতান ও শপিংমলগুলোতে শোভা পাচ্ছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্যবসায়ীরা ২ মাস আগ থেকে তৈরি শুরু করছেন এসব বৈশাখী পোশাক। ক’দিন পরই পহেলা বৈশাখ। সারাদেশের চাহিদা মিটিয়েও ইদানীং কিছু বৈশাখী পোশাক বিদেশেও যাচ্ছে। তবে বর্ষবরণকে সামনে রেখে কিছু খুচরা ব্যবসায়ী চড়া দামে বিক্রি করছে বৈশাখী পোশাক। কেরানীগঞ্জ তৈরি পোশাক ব্যবসায়ীরা বলেন, পাঞ্জাবি, ফতুয়ার মতো সারা বছর বিক্রি হয় না এসব পোশাক। এটা মৌসুমী ব্যবসা। উৎপাদিত জামাগুলো পহেলা বৈশাখের একদিন আগেও যদি বিক্রি করতে পারি তাহলে টার্গেটমতো পৌঁছাতে পারব। তা না হলে লোকসান গুনতে হবে। খুচরা বিক্রেতারাও অনুরূপ লেনদেন করছে। মফস্বলের পাইকাররা পছন্দমতো ডিজাইনের জন্য অনেক সময় অপেক্ষা করে পোশাক ডেলিভারি নিয়ে যাচ্ছে। তাদের ধারণা, গত বছরের চেয়ে এ বছর বৈশাখী জামা অধিক বিক্রি হবে এবং তারা ব্যবসায় টার্গেটমতো পৌঁছাতে পারবে। এস আলম সুপার মার্কেটের কিথ ফ্যাশনের স্বত্বাধিকারী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এ বছর তারা প্রায় ৫০টি ভিন্ন ডিজাইন ও ভিন্ন নামের বৈশাখী পোশাক তৈরি করেছেন। এগুলোর মধ্যে হিট ডিজাইন হলো মায়ের মমতা, কাঠবিড়ালী, পান্তা ইলিশ, কানা বগির ছা, ফড়িং প্রজাপতি, ঐতিহ্যবাহী ঘুড়ি, বউ যায় স্বশুরবাড়ি, রাজহাঁস, সূর্যগুড়ি, মেঘ, বৃষ্টি, নৌকা, অচেনা বৈশাখ, মাছ তারা বৈশাখ, খেজুরগাছ, ঢাকঢোল, তবলা, কুলা, বেহালা ও একতারা। তিনি আরও বলেন, তার প্রতিষ্ঠানের পোশাকগুলো ৬ মাসের শিশু থেকে ১২ বছরের কিশোর-কিশোরীরা পরতে পারবে। ১৫০ টাকা থেকে ২৮০ টাকায় পোশাকগুলো বিক্রি হচ্ছে। এস আলম মার্কেটের ঝিমিকু গার্মেন্টসের মালিক আজাহার মোঃ ঢালী জানান, তার তৈরি হিট ডিজাইন পোশাকগুলোর প্রকারভেদে মূল্য ২৫০ টাকা থেকে ৫৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। একই মার্কেটের আল বরকত গার্মেন্টসের মালিক আশরাফুল ইসলাম বলেন, এ বছর তার প্রতিষ্ঠান বৈশাখ উপলক্ষে কয়েকটি অত্যাধুনিক ডিজাইনের পোশাক তৈরি করেছে। ২ বছর থেকে ১৪ বছরের মেয়েরা পোশাকগুলো পরতে পারবে। প্রকারভেদে ৩০০ টাকা থেকে ৬০০ টাকার মধ্যে এগুলো পাইকারি বিক্রি হচ্ছে। বিলাশী টেক্সটাইল লিমিটেডের পরিচালক হাজী আবুল কাশেম বলেন, তার কারখানায় উৎপাদিত বৈশাখী শাড়ির চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে। গত বছরের চেয়ে এ বছর ব্যবসা আশা করি ভাল হবে। এ বছর প্রায় ৪০টি ডিজাইনের শাড়ি উৎপাদন করেছি পহেলা বৈশাখের জন্য। মালের চাহিদা প্রচুর। তার নিজস্ব ১২টি শো-রুমে মহিলা ক্রেতারা ইতোমধ্যে ভিড় জমিয়েছে বৈশাখী শাড়ির জন্য। এ ব্যাপারে কেরানীগঞ্জ তৈরি পোশাক ও দোকান মালিক সমবায় সমিতির সভাপতি আঃ আজিজ বলেন, প্রতিবছর বৈশাখী জামা কাপড়ের চাহিদা বেড়েই চলেছে। কাপড়ের বড় শত্রু আগুন। ১০ হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এখানে থাকলেও আজও এখানে কোন ফায়ার সার্ভিস স্থাপন হয়নি। প্রতিবছরই আগুনে পুড়ে ক্ষতি হচ্ছে গার্মেন্টস প্রতিষ্ঠান। সরকারের কাছে আবেদন কেরানীগঞ্জের গার্মেন্টসগুলো রক্ষার্থে একটি ফায়ার সার্ভিস স্টেশন স্থাপন করলে ব্যবসায়ীরা বিশেষভাবে উপকৃত হবে।
×