ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বেপরোয়া গতিতে চালানোই কারণ

ফরিদপুরের ভাঙ্গায় বাস দুর্ঘটনা ॥ নিহত ২৫

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ১০ এপ্রিল ২০১৫

ফরিদপুরের ভাঙ্গায় বাস দুর্ঘটনা ॥ নিহত ২৫

অভিজিত রায়, ফরিদপুর থেকে ॥ বেপরোয়া গতি আর চালকের অসতর্কতার কারণে যাত্রীবাহী বাস রাস্তার পাশে গাছের সঙ্গে ধাক্কা লেগে মর্মান্তিকভাবে প্রাণ হারিয়েছেন ২৫ বাসযাত্রী। বুধবার গভীর রাত দেড়টার সময় ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার কৈডুবি নামক স্থানে মর্মান্তিক এই সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনায় ৫ মহিলা, ১ শিশুসহ ২৫জন নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে ১৮জন যাত্রী। নিহতদের মধ্যে ভাঙ্গা হাইওয়ে থানায় ২২টি ও ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ৩ জনের লাশ রাখা হয়। নিহতের মধ্যে ২২জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। আহত ব্যক্তিদের ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় নিহতের সংখ্যা বাড়তে পারে। ফরিদপুরের ভাঙ্গায় বাস দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনায় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী শোক জানিয়েছেন। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের জন্য ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। জানা যায়, ঢাকার গাবতলী থেকে পটুয়াখালীর খেপুপাড়াগামী যাত্রীবাহী সোনারতরী পরিবহনের একটি বাস (ঢাকা- মেট্রো : ব ১৪৭০৭৪) রাত ৮টার দিকে ছেড়ে আসে। বাসটিতে চালক, সুপারভাইজারসহ অন্তত ৫০জন ছিল। বাসের আহত যাত্রীরা জানান, ঢাকা থেকে ছেড়ে আসার পর থেকেই বাসটি দ্রুতগতিতে চলছিল। চালক ঢাকার আমিনবাজার থেকেই অত্যধিক দ্রুতগতিতে বাসটি চালাতে থাকে। এতে যাত্রীদের মধ্যে ভীতির সৃষ্টি হয়। পাটুরিয়া ঘাট পার হওয়ার পর থেকে চালক বেপরোয়া গতিতে বাস চালাতে থাকে। এসময় কয়েক যাত্রী ড্রাইভারকে আস্তে গাড়ি চালাতে বললেও তিনি তাতে কর্ণপাত করেননি। অতিরিক্ত গতির কারণে রাত দেড়টার দিকে ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়কের ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার পৌরসভার অন্তগত কৈডুবি নামক স্থানে এসে চালক শাহিন (৪০) বাসটির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। ফলে বাসটি রাস্তার পাশে বড় একটি রেইনট্রি গাছের সঙ্গে ধাক্কা খায়। ধাক্কা খাওয়ার কারণে বাসটি সামনের বেশিরভাগ অংশ দুমড়ে মুচড়ে যায়। বাসটি মহাসড়কের উপর আড়াআড়ি অবস্থান করতে থাকে। এ সময় এটি প্রায় মাঝের অংশ থেকে অর্ধেক হয়ে যায়। দুর্ঘটনার বিকট শব্দে মহাসড়কে ডিউটিরত আনসার সদস্য এবং আশপাশের এলাকাবাসী এসে উদ্ধার কাজ শুরু করে। তারা আহত এবং নিহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে উদ্ধারকাজে সাহায্য করেন। দুর্ঘটনার ফলে ঘটনাস্থলেই বাসের ১৯ যাত্রী এবং স্থানীয় ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেবার পর ৩ জন এবং ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আরও তিনজন। এখনও ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বাসের চালকসহ ১৮ যাত্রী চিকিৎসাধীন রয়েছে। তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানান হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক পার্থ সারথী ও ওয়ার্ড মাস্টার আরিফ ইসলাম। দুর্ঘটনার পর ঢাকা-বরিশাল মহসড়কে দু’ঘণ্টাব্যাপী যানজটের সৃষ্টি হয়। ফরিদপুর থেকে একটি রেকার ঘটনাস্থলে গিয়ে বাসটি সরিয়ে দিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়। দুর্ঘটনাকবলিত বাসের যাত্রী চিকিৎসাধীন রুবি আক্তার বলেন, গাবতলী থেকে বাসটি ছাড়ার পর চালক খুবই দ্রুতগতিতে বাসটি চালাচ্ছিল। আমরা বারবার সতর্ক করলেও চালক কর্ণপাত করেনি। এমনকি কয়েক যাত্রী চালকের কাছে গিয়ে তাকে সতর্ক করলেও চালক কর্ণপাত করেনি। দুর্ঘটনায় আহত রুবির স্বামী ইঞ্জিনিয়ার শাহিন নিহত হন। দুর্ঘটনার পর বাসচালকের দাবি, ঘটনাস্থলে এলে বাসটি ডাকাতের কবলে পড়ে। এ সময় ডাকাতরা তাকে এলোপাতাড়ি কোপাতে এলে তিনি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। তবে বাস যাত্রীদের কেউ তার এ দাবির সত্যতা নিশ্চিত করেনি। আত্মরক্ষার্থে চালক একথা বলছে বলে তাদের অভিযোগ। দুর্ঘটনার পর বাসটির সামনের অংশ দুমড়ে মুচড়ে গেলেও চালকের আসনটি অক্ষত ছিল। দুর্ঘটনাকবলিত বাসটির যাত্রী পটুয়াখালীর আইয়ুব জানান, বাসটি বেপরোয়াগতিতে চলছিল। ঘটনার সময় সম্ভবত বাসের চালক ঘুমিয়ে পড়েছিল। আমি এ সময় জেগে ছিলাম। তার চলানো দেখে মনে হচ্ছিল সে ঘুমিয়ে চালাচ্ছে। ২০০৯ সালের ৬ ডিসেম্বর প্রায় একই স্থানে দু’টি বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে ২৫ জন নিহত হয়। ৬ বছরের ব্যবধানে একই স্থানে আবারও মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেল আবারও ২৫ জনের। বেপরোয়া গতিতে চলছিল বাস ॥ স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, গভীর রাতে প্রচ- শব্দ শুনে তারা রাস্তায় বের হয়ে আসেন। এ সময় দুমড়ে মুচড়ে যাওয়া বাসটির মধ্যে যাত্রীদের আর্তনাদ শুনতে পান। ঘটনার পর এলাকার লোকজন ও পার্শ্ববর্তী একটি আনসার ক্যাম্পের সদস্যরা গিয়ে উদ্ধার কাজ শুরু করেন। দুর্ঘটনাস্থলের কাছে থাকা মহাসড়কে ডিউটিরত ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আনসার সদস্য সাইদুর রহমান ও স্বপন হাওলাদার জানান, দ্রুতবেগে গাড়িটি গিয়ে গাছের সাথে ধাক্কা লেগে দু’ভাগ হয়ে যায়। আমরা এসে অধিকাংশ যাত্রীকে হয় আহত না হয় নিহত হিসেবে পাই। পরে এলাকাবাসী ও পুলিশের সহায়তায় তাদের হাসপাতালে পাঠাই। ফরিদপুর ফায়ার সার্ভিসের উপপরিচালক সামসুদ্দোহা জানান, দুর্ঘটনার সময় বাসের চালক বেপরোয়া গতিতে বাসটি চালাচ্ছিল। গতি ও তন্দ্রাচ্ছন্নের কারণে সে বাসের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে। আবার যাত্রীদের অধিকাংশই এ সময় তন্দ্রাচ্ছন্ন ছিল সেই কারণে হতাহতের ঘটনা বেশি ঘটে। ভাঙ্গা হাইওয়ে থানার ওসি হোসেন সরকার বলেন, বাসটি দ্রুতগতিতে চলছিল। চালক বেপরোয়া গতিতে বাসটি চালাচ্ছিল। ঘটনাস্থলে এসে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সেটি মহাসড়কের পাশের গাছের সঙ্গে ধাক্কা খায়। দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক সরদার সরাফত আলী সাংবাদিকদের জানান, নিহতদের দাফন ও সৎকারের জন্য প্রত্যেকের পরিবারকে ১০ হাজার টাকা করে দেয়া হচ্ছে প্রশাসনের তরফ হতে। এছাড়া জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে আহতদের চিকিৎসার জন্য সকল ব্যয়ভার গ্রহণ করার ঘোষণা দেয়া হয়। ঘটনা তদন্তে জেলার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোঃ আবদুল রশিদকে প্রধান করে ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী ৭ দিনের মধ্যে কমিটিকে রিপোর্ট পেশ করতে বলা হয়েছে। নিহতদের পরিচয় ॥ এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ভাঙ্গায় নিহত ২৫ জনের মধ্যে ২২ জনের পরিচয় পাওয়া গেছে। এরা হলেন পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া থানার হাসনাপাড়া গ্রামের সুর্য বেগম (৭০), কলাপাড়া উপজেলার আকলি বেগম (৬০), কলাপাড়া উপজেলার বৈদ্যপাড়া গ্রামের হেলাল ফকির (২৮), কলাপাড়া উপজেলার তেনাছেড়া গ্রামের মাহমুদুল হাসান মিঠু (২০), খেপুপাড়া উপজেলার মধুখালী গ্রামের শাহিন (২৫), গলাচিপা উপজেলার নলুয়াবাড়ি গ্রামের সোহাগ (৩০), পটুয়াখালী সদর উপজেলার কালিচান্না গ্রামের রেজাউল (২০), একই উপজেলার লতিফপুর গ্রামের নাজমা বেগম (৩০), একই উপজেলার খলিশাখালী গ্রামের কবির ফকির (৫০), খেপুপাড়া উপজেলার কুমিরপাড়া গ্রামের আছমা বেগম (২৭), কলাপাড়া উপজেলার বৈখাশী গ্রামের জুয়েল (৩৪), বরগুনা জেলার আমতলী উপজেলার উল্টাখোলা গ্রামের রাবেয়া বেগম (৭০), একই গ্রামের টুটুল হাওলাদার (৪৫), আমতলী উপজেলার পাড়াকাটা গ্রামের রতন সান্যাল (৩০), বরিশাল জেলার সদর উপজেলার ডোবাকাটা গ্রামের শাহরিয়ার (২৮), বানারীপাড়া উপজেলার আলতা গ্রামের আফজাল হোসেন (৪০), যশোর জেলার সদর উপজেলার চুড়ামনকাঠি গ্রামের মনিরুল (৩৫), ফরিদপুর সদর উপজেলার হারুকান্দি গ্রামের মোবারক হোসেন (৩৩), বাসের সুপারভাইজার গোপালগঞ্জ জেলার মুকসুদপুর উপজেলার চাওচা গ্রামের শফিকুল শেখ (২৮)। ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরণকারী তিনজন হলেন, বরগুনার তালতলীর কাজীরখাল গ্রামের বারেক হাওলাদার (৪০), পটুয়াখালীর কলাপাড়ার রোন্ডা গ্রামের রিপন উকিল (৩৫) ও পটুয়াখালীর বাউফলের সাবুপুরা গ্রামের সুমন মাহাবুব (২৮)। এ পর্যন্ত এই ২২ জনের মৃতদেহ তাদের স্বজনদের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। এছাড়া ভাঙ্গা হাইওয়ে থানায় অজ্ঞাতনামা হিসেবে আরও তিনজনের লাশ রয়েছে। ভাঙ্গা হাইওয়ে পুলিশের এসআই মোজাম্মেল হোসেন জানান, দুর্ঘটনার পর পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে হাইওয়ে থানায় নিয়ে আসে। তারা এ পর্যন্ত ২৫জনের লাশ পেয়েছেন। স্বজনদের কাছে এসব লাশ হস্তান্তর করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত ২২ জনের লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। আলেয়া বেগমের আহাজারি ॥ কলাপাড়া থেকে নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, ফরিদপুরের ভাঙ্গায় সড়ক দুর্ঘটনায় উপার্জনক্ষম একমাত্র সন্তানের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকে বৃদ্ধা আলেয়া বেগমের আহাজারি থামছেই না। তাঁর শোক আর মাতমে লোন্দা গ্রামের পরিবেশ ভারি হয়ে ওঠে। আলেয়া বেগমের সন্তান রিপন উকিল (২৫) তরমুজ বিক্রি করতে ঢাকা গিয়েছিল। কিন্তু ফিরল লাশ হয়ে। বৃদ্ধা এ মহিলাকে সান্ত¡না দেয়ার মতো ভাষাও হারিয়ে ফেলে আশপাশের মানুষ। স্থানীয় এমপি মাহবুবুর রহমান প্রত্যেক মৃত ব্যক্তিকে সরকারীভাবে ১৫ হাজার টাকা করে দেন। এ সময় আলেয়ার আহাজারিতে সকলের চোখে পানি এসে যায়। সবাই সান্ত¡না দেয়ার ভাষা হারিয়ে ফেলে। একই অবস্থা ষষ্ঠ শ্রেণীর শিক্ষার্থী মালারও। ছোট্ট বোন পঞ্চম শ্রেণীর আকলিমা ও বড় বোনজামাই সখিনা বেগমের স্বামী হেলাল ফকিরের (২৭) মৃত্যুর খবরে নির্বাক হয়ে গেছে। ছোট বোনের বই ও ছবি কোলে নিয়ে নিথর হয়ে বসে আছে। হাচনাপাড়া গ্রামে বেড়িবাঁধের বাইরের ঢালে কবর খোঁড়া হচ্ছে আরেক হতভাগী হতদরিদ্র সূর্যভানুর মৃতদেহ দাফনের জন্য। স্থানীয় ইব্রাহিম মিয়া জানান, বৃদ্ধ অচল স্বামী দলিল উদ্দিন ছাড়া ইহলোকে সুর্যভানুর আর কেউ ছিল না। বুধবার রাতে ঢাকা থেকে কলাপাড়া আসার পথে ফরিদপুরের ভাঙ্গায় ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় ২৬ জনের মর্মান্তিক প্রাণহানির ঘটনায় কলাপাড়ার আটজনের মৃত্যু ঘটে। এসব গ্রামে বইছে শোকাবহ অবস্থা। সর্বত্র চলছে দুর্ঘটনার আলোচনা। উপজেলা প্রশাসন সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে, এ চারজন ছাড়াও চান্দুপাড়া গ্রামের নাজেম আলীর ছেলে আবুবকর (১৯), পশ্চিম মধুখালী গ্রামের সেলিম শিকদারের ছেলে শাহিন ওরফে শাহজালাল (২৫), তেগাছিয়া গ্রামের নাসির মুন্সির ছেলে মাহমুদুল হাসান মিঠু (২৩), গামইরতলা গ্রামের সালাম হাওলাদারের স্ত্রী আসমা বেগম (২৮)। তাদের পরিবারে বইছে শোকের মাতম। চালক ও হেলপার শেবাচিমে ভর্তি ॥ স্টাফ রিপোর্টার জানান, ভাঙ্গায় দুর্ঘটনাকবলিত ‘সোনারতরী’ পরিবহনের চালক ও তার সহযোগীকে (হেলপার) আহতাবস্থায় বৃহস্পতিবার ভোর পৌনে চারটার দিকে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহত চালক মোঃ জাকির হোসেন (৪০) পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার রহমতপুর নীলগঞ্জ গ্রামের জয়নাল আবেদীন হাওলাদারের ছেলে। হেলপার মন্টু খান (৪২) ঝালকাঠির নলছিটির রায়পুর গ্রামের কাসেম আলী খানের ছেলে। শেবাচিম হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার আবুল কালাম জানান, চালক ও হেলপারের শরীরে জখমের চিহ্ন রয়েছে। তবে তা গুরুতর নয়। তাদের সার্জারি বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে। কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মোঃ শাখাওয়াত হোসেন পিপিএম জানান, পুলিশ হাসপাতাল পরিদর্শন করেছে। যেহেতু ঘটনা ভাঙ্গা থানার, তাই সেখান থেকে বার্তা না আসায় চালক ও হেলপারকে গ্রেফতারের বিষয়ে আপাতত কোন পদক্ষেপ নেয়া যাচ্ছে না। বরগুনার আমতলীতে মাতম ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, ভাঙ্গায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে বরগুনার আমতলী উপজেলার দুই যাত্রীর লাশ শনাক্ত করা হয়েছে। তাদের বাড়ি পূজাখোলা গ্রামে এবং তারা মা-ছেলে। তাদের মৃত্যুতে গ্রামে চলছে শোকের মাতম। জানা গেছে, সোলায়মান হাওলাদার টুটুল (৪০) তার মা রাবেয়া বেগমকে (৭৫) চিকিৎসার জন্য ১৫ দিন আগে ঢাকা নিয়ে যান। চিকিৎসা শেষে বুধবার বাড়ি ফেরার পথে ভাঙ্গা হাসপাতালের সামনে সড়ক দুর্ঘটনায় তারা নিহত হন। বৃহস্পতিবার তাদের লাশ গ্রামের বাড়ি আমতলীর পূজাখোলা পৌঁছলে আত্মীয়স্বজনরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। এ সময় হৃদয়বিদারক দৃশ্যের অবতারণা হয়। হাজার হাজার মানুষ তাদের জানাজায় অংশ নেন। পরে তাদের লাশ পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়। পিতৃহারা মেহেদী হাসান ও ইমনের কান্নায় আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। মাগুরায় হত ১ ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, মহম্মদপুরের কালিশঙ্করপুর গ্রামে বুধবার গভীর রাতে সড়ক দুর্ঘটনায় হারুন মোল্লা (৪০) নামে এক পথচারী নিহত হয়েছেন। তিনি কালিশঙ্করপুর গ্রামের মৃত আব্দুল হাকিম মোল্লার ছেলে। একটি মোটরসাইকেল পেছন থেকে ধাক্কা দিলে তিনি গুরুতর আহত হন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় মহম্মদপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। নড়াইলে মোটরসাইকেল আরোহী নিহত ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, লোহাগড়া-লাহুড়িয়া সড়কের জয়পুরে ট্রাকচাপায় মোটরসাইকেল আরোহী লিটন সরদার (৩২) নিহত হয়েছেন। এ ঘটনায় মোটরসাইকেল চালক নির্মল পোদ্দার আহত হন। বৃহস্পতিবার দুপুর দুইটার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত লিটন লোহাগড়া উপজেলার মোচড়া গ্রামের হাবিবুর সরদারের ছেলে। নওগাঁয় হত ১ ॥ নিজস্ব সংবাদদাতা জানান, মান্দায় বৃহস্পতিবার দুপুরে ইজিবাইক উল্টে চারজন আহত হয়েছেন। বেলা ১১টার দিকে প্রসাদপুর-বিজয়পুর সড়কের মিলনের ইটভাঁটি এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। আহতরা হলেনÑ কুসুম্বা গ্রামের সামসুদ্দীন আহমেদ (৫৫), হাজী গোবিন্দপুর গ্রামের উজ্জ্বল হোসেন (২২), মনোয়ার হোসেন (২২) ও শাহেদ আলী (২০)। এদের মধ্যে সামসুদ্দীনকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি ও অন্যদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শোক ॥ বাসস জানায়, রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের ভাঙ্গা উপজেলার কৈডুবিতে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় ২৫ জনের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। বৃহস্পতিবার এক শোকবাণীতে রাষ্ট্রপতি সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিহত পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে সম্ভাব্য সকল প্রকার সহযোগিতা প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীও বৃহস্পতিবার পৃথক শোকবাণীতে এই ঘটনায় নিহতদের শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের সকল প্রকার সহায়তা প্রদান ও পাশে দাঁড়াতে এবং আহতদের চিকিৎসা দেয়ার জন্য জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন। এদিকে, শোকবাণীতে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী নিহতদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারবর্গের প্রতি সমবেদনা জানান।
×