ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শেরপুরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা

মুক্তিযোদ্ধাদের আপত্তির মধ্যেই এলাকায় লাশ দাফনের প্রস্তুতি

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ৯ এপ্রিল ২০১৫

মুক্তিযোদ্ধাদের আপত্তির মধ্যেই এলাকায় লাশ দাফনের প্রস্তুতি

রফিকুল ইসলাম আধার, শেরপুর থেকে ॥ মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াতের সিনিয়র সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের আলবদর প্রধান মুহাম্মদ কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরকে ঘিরে সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবেলায় নিরাপত্তার চাদরে মোড়ানো হয়েছে তারই নিজ এলাকা শেরপুর। যে কোন মুহূর্তে ফাঁসি কার্যকর হচ্ছে এমন খবরের পরিপ্রেক্ষিতে ৮ এপ্রিল বুধবার বিকেল থেকে বেড়ে গেছে পুলিশ, র্যাব ও বিজিবিসহ আইনশৃঙ্খলার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সংস্থার তৎপরতা। বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। অন্যদিকে, মুক্তিযোদ্ধাদের আপত্তির মধ্যেই চলছে এলাকায় লাশ দাফনের প্রস্তুতি। আপীল বিভাগে মৃত্যুদ- বহালের আদেশ পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ হওয়ার পর থেকেই কামারুজ্জামানের নিজ এলাকা শেরপুরে জেলা প্রশাসনসহ অন্যান্য সংস্থা সতর্ক অবস্থান নেয়। জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের তরফ থেকে পৃথক সভায় নেয়া হয় প্রস্তুতি। জেলা সদর, কামারুজ্জামানের নিজ ইউনিয়ন বাজিতখিলা ও অকুস্থল সোহাগপুর বিধবা পল্লী এবং রাষ্ট্রপক্ষের সাক্ষী, ভিকটিম, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক, মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদদের স্বজন, স্পর্শকাতর স্থাপনাসহ জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে শুরু হয় তৎপরতা। একইসঙ্গে সম্ভাব্য পরিস্থিতি তথা নাশকতা ও সন্ত্রাস সৃষ্টির আশঙ্কায় বিশেষ বিশেষ এলাকাগুলোতে শুরু হয় পুলিশ, র্যাব ও বিজিবির টহল। ওই অবস্থায় ফাঁসি কার্যকর হলে নিজ এলাকা শেরপুর সদর উপজেলার বাজিতখিলা ইউনিয়নে কামারুজ্জামানের লাশ দাফনে পারিবারিক প্রস্তুতি থাকলেও শেরপুরের মাটিতে তার লাশ দাফন করতে না দিতে সোচ্চার হয়ে উঠেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। মঙ্গলবার বিকেলে স্মারকলিপি প্রদানের মাধ্যমে জেলা প্রশাসনের কাছে সহযোগিতা কামনা করেন জেলা মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট নেতৃবৃন্দ। সেইসঙ্গে তারা কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকরের সঙ্গে সঙ্গে শেরপুরের বিভিন্ন প্রবেশপথে অবস্থান নেয়ার ঘোষণা দেন। তাদের ওই কর্মসূচীর সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করে জেলা সেক্টর কমান্ডারস ফোরামসহ কয়েকটি সংগঠন। বুধবার সন্ধ্যায় সভা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ওই কর্মসূচীর সঙ্গে আরও একাত্মতা প্রকাশ করে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ)। জেলা জাসদ সভাপতি মনিরুল ইসলাম লিটন বলেন, শেরপুরে কামারুজ্জামানের লাশ দাফনের চেষ্টা হলে জাসদ তা প্রতিরোধ করতে মাঠে থাকবে। এমনি অবস্থায় বুধবার সন্ধ্যে পর্যন্ত কোন অঘটন না ঘটলেও কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকরসহ তার লাশ শেরপুরে দাফন করা না করাকে কেন্দ্র করে শেরপুরে পরিবেশ পরিস্থিতি অনেকটাই ঘোলাটে হয়ে উঠেছে। যে কারণে স্থানীয় প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত সকলের টেনশন ও তৎপরতা দুটোই বেড়ে গেছে কয়েকগুণ। ওইসব তৎপরতার কারণেই রিভিউ খারিজের প্রতিবাদে জামায়াতের ডাকা দু’দিনের হরতালের শেষ দিন বুধবারও কোন প্রভাব পড়েনি শেরপুরে। এখানকার মানুষের মাঝে নেই কামারুজ্জামানের রায় পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে কোন উদ্বেগ-আতঙ্কও। বরং নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারে সন্তুষ্ট স্থানীয় জনসাধারণও। এ ব্যাপারে শেরপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাকীর হোসেন বলেন, কামারুজ্জামানের মৃত্যুদ- কার্যকরকে ঘিরে প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলার সঙ্গে সম্পৃক্ত সকলেই সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থায় রয়েছে। নিরাপত্তার চাদরে মোড়ানো হয়েছে শেরপুরকে। পুলিশ, র্যাবের পাশাপাশি বিজিবির টিমও মাঠে তৎপর রয়েছে। একই বিষয়ে শেরপুর জেলা পুলিশ সুপার মোঃ মেহেদুল করিম বলেন, নিরাপত্তা, জনসাধারণ ও যান চলাচল নির্বিঘœ করতে এবং যে কোন ধরনের নাশকতা এড়াতে গোটা জেলাতেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাড়ানো হয়েছে। এজন্য বিশেষ বিশেষ এলাকায় পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এছাড়া রায় কার্যকরের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও বৃদ্ধি করা হবে। ২৭-বিজিবি ময়মনসিংহ অধিনায়ক লে. কর্নেল এসএম বায়েজিদ জানান, কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকরকে ঘিরে শেরপুরে বিজিবির তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। স্থানীয় প্রশাসনের চাহিদা পেলে বিজিবি তৎপরতা আরও বাড়তে পারে। র্যাব-১৪ (ময়মনসিংহ) এর কমান্ডিং অফিসার রফিকুল ইসলাম বলেন, সম্ভাব্য পরিস্থিতি মোকাবেলায় শেরপুরে র্যাবের কয়েকটি পেট্রোল টিম সার্বক্ষণিক অবস্থান নিয়েছে। এদিকে সকল জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে ফাঁসি কার্যকরের পর নিজের প্রতিষ্ঠিত কুমড়ি বাজিতখিলা দাখিল মাদ্রাসা সংলগ্ন এতিমখানার পাশে কামারুজ্জামানের লাশ দাফনের প্রস্তুতি চলছে। এর আগে পারিবারিকভাবে নিজ গ্রাম কুমড়ি মুদিপাড়ায় বসতবাড়িতে মায়ের কবরের পাশে তার লাশ দাফনের পরিকল্পনা থাকলেও তা পাল্টে যায় কামারুজ্জামানের সঙ্গে কেন্দ্রীয় কারাগারে পরিবারের লোকজনদের সর্বশেষ সাক্ষাতে। এখন পরিবারের সদস্যদের ভাষ্য হচ্ছে, কামারুজ্জামানের ইচ্ছেতেই তার প্রতিষ্ঠিত এতিমখানার পাশে তার লাশ দাফনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়েছে। এজন্য ইতোমধ্যে ওই এতিমখানার উত্তর-পশ্চিম কোনায় রোপিত ধান কেটে ফেলে পরিষ্কার করা হয়েছে কবরের জায়গা এবং তা কবরের উপযোগী করে তোলা হয়েছে। সন্ধ্যা ৭টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কামারুজ্জামানের গ্রামের বাড়ি, শহরের বাসা ও জেলা জামায়াত অফিসসহ ওই এলাকাতেও শুরু হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর টহল।
×