ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ওয়ানডে সিরিজে তামিম পেতে পারেন নতুন সঙ্গী, স্পিন বিভাগও ভাবাচ্ছে নির্বাচকদের

উদ্বোধনী জুটি নিয়েই চিন্তা বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ৮ এপ্রিল ২০১৫

উদ্বোধনী জুটি নিয়েই চিন্তা বাংলাদেশের

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আসন্ন সিরিজের সময়সূচী চূড়ান্ত হয়ে গেছে। বিশ্বকাপের দলে নিশ্চিতভাবে দুয়েকটি পরিবর্তন আসবে এবার। কারণ বিশ্বকাপে ইনজুরিতে পড়া উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান এনামুল হক বিজয় এখনও ম্যাচ খেলার জন্য পুরোপুরি ফিট হয়ে ওঠেননি। তাই সুযোগ থাকছে একজনের। এক্ষেত্রে ঘরোয়া আসরে দুর্দান্ত খেলা দুই তরুণ লিটন কুমার দাস ও রনি তালুকদারের পাশাপাশি দুই অভিজ্ঞ শামসুর রহমান ও ইমরুল কায়েসের সুযোগ থাকছে। বিশ্বকাপ স্কোয়াডে দুই স্পেশালিস্ট স্পিনার হিসেবে তাইজুল ইসলাম ও আরাফাত সানি থাকলেও এবার ঘরের মাটিতে স্পিনবান্ধব উইকেটে জাতীয় নির্বাচকদের নজর দিতে হচ্ছে হাতে থাকা অন্য স্পিনারদের দিকেও। আর সেক্ষেত্রে অভিজ্ঞ আব্দুর রাজ্জাক ও ইলিয়াস সানি এবং লেগস্পিনার হিসেবে জুবায়ের হোসেন লিখনের সুযোগ হতে পারে। দুয়েকদিনের মধ্যেই ওয়ানডে দল ঘোষণার আগে বিষয়গুলো নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করছেন নির্বাচকরা। এমনটাই জানালেন প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ। সিরিজের প্রথমেই তিন ওয়ানডে থাকায় চিরাচরিত অনুশীলনের চেয়ে ম্যাচ প্র্যাকটিসের দিকেই মনোযোগ দিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি)। সে জন্য প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট আসর বাংলাদেশ ক্রিকেট লীগ (বিসিএল) প্রথমবারের মতো ওয়ানডে ফরমেটে শুরু হয়েছে। এটা মূলত করা হয়েছে ক্রিকেটারদের ম্যাচ খেলার অভ্যাসটা ধরে রাখার জন্য। সেই সঙ্গে টুর্নামেন্টের দিকে বিশেষভাবে মনোযোগ দিচ্ছেন নির্বাচকরা। কারণ স্কোয়াডের কয়েকটি জায়গায় পরিবর্তন আসবে। এমনকি একাদশ কিভাবে গড়া হবে ম্যাচে সেটারও একটা রিহার্সেল চলছে বিসিএলে। মূল চিন্তাটা বাংলাদেশ দলের ওপেনিং নিয়ে। বিশ্বকাপেও দলের উদ্বোধনী জুটি ছিল পুরোপুুরি ব্যর্থ। অফ ফর্ম শব্দটা বাংলাদেশী ওপেনারদের এখন প্রাত্যহিক সঙ্গী। নির্ভরযোগ্য ওপেনার তামিম ইকবালের ফর্মহীনতা নিয়ে টিম বাংলাদেশকে পুরো বিশ্বকাপেই ভুগতে হয়েছে। বিসিএল দিয়ে তার রানে ফেরার লড়াই। এবার সিরিজে তার একজন সঙ্গীও খুঁজে নিতে হবে নির্বাচকদের। কারণ বিশ্বকাপের মাঝামাঝি কাঁধের ইনজুরিতে পড়ে ছিটকে গিয়েছিলেন ওপেনার এনামুল। অস্ত্রোপচার করানোর পর ইতোমধ্যেই অনেকখানি সুস্থ হয়ে ওঠা এ তরুণ নেটে অনুশীলনও শুরু করেছেন। তবে ২৩ এপ্রিলের আগে তার পুরোপুরি ফিটনেস ফিরে পেয়ে খেলা শুরু করা সম্ভব হবে না। সে কারণে বিকল্প কাউকে চিন্তা করতেই হচ্ছে নির্বাচকদের। সেদিক থেকে সবচেয়ে এগিয়ে আছেন লিটন কুমার। এ তরুণ ঘরোয়া আসরে সম্প্রতি ফর্মের তুঙ্গে আছেন। সদ্য সমাপ্ত জাতীয় ক্রিকেট লীগের চ্যাম্পিয়ন রংপুর বিভাগের হয়ে ৫ সেঞ্চুরিসহ ৮৫.৩৩ গড়ে ১০২৪ রান করেছেন এ ওপেনার। এছাড়া ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট আসরে ৪২.৮৮ গড়ে ৬৮৬ রানও করেছেন। এরচেয়ে বড় কথা ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখেই হয় তো তাকে এবার বিসিএলে তামিমের দল ইসলামী ব্যাংক পূর্বাঞ্চলে রাখা হয়েছে। লিটনের চেয়ে দলে ঢোকার দৌড়ে পিছিয়ে নেই রনি তালকুদারও। প্রিমিয়ার লীগে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক রনি ৫১ গড়ে ২ সেঞ্চুরিসহ করেছেন ৭১৪ রান। এছাড়া জাতীয় লীগেও তিনি ৭০.৬৩ গড়ে তিন সেঞ্চুরিসহ ৭৭৭ রান করেছেন। সবমিলিয়ে এনামুলের জায়গা নিতে দারুণ এক যুদ্ধ চলছে এ দু’জনের মধ্যে। তাই বিসিএলের দিকে নজর রাখছেন নির্বাচকরা। তবে আন্তর্জাতিক ম্যাচে অভিজ্ঞতা থাকা শামসুরের দিকেও নজর থাকবে। আর বিশ্বকাপে সুযাগ পেয়েও কাজে লাগাতে না পারা ইমরুল যদি দারুণ কিছু করে বসেন সেক্ষেত্রে আরেকটি সুযোগ পেয়েও যেতে পারেন তিনি। ব্যাটিং অর্ডারে তিন নম্বর পজিশন নিয়েও একটা পরীক্ষা বিসিএল। বিশ্বকাপে মুমিনুল হক তেমন সুবিধা করতে পারেননি। এ কারণে তাকে না খেলিয়ে তরুণ সৌম্য সরকারকেই সুযোগ দেয়া হয়েছে। তিনি যথেষ্ট ভাল করে আস্থাও অর্জন করেছেন। কোচ চান্দিকা হাতুরাসিংহেও জানিয়ে দিয়েছেন যতদিন পর্যন্ত সৌম্য ভাল করে যাবেন ততদিন মুমিনুলকে অপেক্ষায় থাকতে হবে। বিশ্বকাপে অলরাউন্ডার নাসির হোসেনের জায়গাটা পাওয়া যায়নি। কিন্তু এবার বিসিএলে তিনি কিছুটা ওপরের দিকে ব্যাটিং করছেন। এসবই বিসিবির আসন্ন সিরিজের আগে সূক্ষ্ম পরীক্ষা-নিরীক্ষার অংশ। নির্বাচকদের জন্য আরেকটি ভাবনার বিষয় দলের স্পিন বিভাগ গড়া নিয়ে। বিশ্বকাপ স্কোয়াডে ছিলেন না অভিজ্ঞ বাঁহাতি স্পিনার রাজ্জাক। তবে জাতীয় লীগে দারুণ নৈপুণ্য দেখিয়েছেন। ৪১ উইকেট নিয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেটধারী তিনি। ৪২ উইকেট নিয়ে সেরা নৈপুণ্য দেখানো ইলিয়াসও তাই বিবেচনায় আসছেন। এছাড়া তরুণ উদীয়মান লেগস্পিনার জুবায়েরও ঠাঁই পাননি বিশ্বকাপে। তাকে নিয়েও ভাবতে হবে নির্বাচকদের। তবে কোচ হাতুরাসিংহের ইচ্ছাটা আবার জুবায়েরকে দলে নেয়ার। কারণ ২/৩ বাঁহাতি স্পিনারের চেয়ে লেগস্পিনার হিসেবে জুবায়েরকেই অধিক পছন্দ তার। প্রথম ওয়ানডেতে নিষেধজ্ঞার কারণে খেলতে পারবেন না অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। তবে সে জন্য বাড়তি কারও কথা চিন্তা করছেন না ফারুকরা। কারণ তাসকিন আহমেদ, রুবেল হোসেন ছাড়াও আল আমিন হোসেন ও শফিউল ইসলাম আছেন। এদের মধ্যে তিনজনেরই জায়গা হবে দলে। এ বিষয়ে ফারুক বলেন, ‘এনামুল খুব দ্রুতই সুস্থ হয়ে উঠছে। কিন্তু তার ম্যাচ প্র্যাকটিসের ঘাটতি থাকছে। আমরা ১৪ জনের দল দেব এবং মাশরাফি সেখানে থাকছেনই। নিষেধাজ্ঞার কারণে তিনি প্রথম ওয়ানডে খেলতে পারবে না। কিন্তু আমরা বিকল্প কাউকে চিন্তা করছি না।’
×