ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রচার শুরু আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের, মাঠে নামেনি বিএনপি

প্রকাশিত: ০৫:২৬, ৮ এপ্রিল ২০১৫

প্রচার শুরু আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের, মাঠে নামেনি বিএনপি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রচারে নেমে পড়েছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। মঙ্গলবার প্রথমদিনে তাঁরা ভোটারদের কাছে দোয়া ও সমর্থন চেয়ে নিজেদের প্রার্থিতা জানান দেন। তবে প্রথমদিনে ঢাকার দুই সিটিতে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারের নামতে দেখা গেলেও বিএনপির সমর্থিত কাউকে দেখা যায়নি। এদিন যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার থেকে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী সাঈদ খোকন তাঁর নির্বাচনী প্রচার শুরু করেন। অপরদিকে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করে কাওরানবাজার থেকে নির্বাচনী প্রচার শুরু করেন ঢাকা উত্তরের আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আনিসুল হক। এদিকে ঢাকা দক্ষিণে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে মির্জা আব্বাস অনেকটা চূড়ান্ত হলেও প্রথমদিনে প্রচারের নামতে দেখা যায়নি। তিনি এ সিটি মেয়র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিলেও এখন পর্যন্ত প্রকাশ্যে আসেননি। আইনজীবীর মাধ্যমেই তিনি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দেন। বাছাইয়ে তার মনোনয়নপত্র বৈধ বলে ঘোষণা করেন। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা থাকায় প্রকাশ্যে বের হননি। গত ৬ জানুয়ারি বিএনপির অবরোধের পর থেকেই তিনি আত্মগোপনে চলে যান। মির্জা আব্বাস ছাড়াও ঢাকা দক্ষিণের মেয়র প্রার্থী হিসেবে রয়েছেন বিএনপি অর্থবিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সালাম ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন। এদিকে ঢাকার উত্তরের বিএনপির প্রার্থী নিয়ে এখনও অনিশ্চয়তা কাটেনি। শেষ পর্যন্ত বিএনপির সমর্থিত প্রার্থী আব্দুল আউয়াল মিন্টু আবেদন আপীল বিভাগ খারিজ করে দিলে তিনি আর প্রার্থী হতে পারবে না। মাহী বি চৌধুরীকে বিএনপির একটি গ্রুপ সমর্থন করলেও তাকে প্রার্থী করার বিষয়ে দলের মধ্যে আপত্তি রয়েছে বলে জানা গেছে। ২০ দলীয় জোটের অন্য শরিকেরও তার প্রার্থিতার বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছে। এছাড়া মিন্টুর ছেলে তাবিথ এম আউয়াল মিন্টুর গ্রহণযোগ্যতা অনেক কম। সব মিলিয়ে বিএনপির উত্তরের মেয়র প্রার্থী বাছাইয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। তাছাড়া তাবিথ আউয়ালের বিরুদ্ধে ঋণখেলাপির অভিযোগ করে তা প্রার্থিতা বাতিলে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের কাছে আপীল করেছে সোনালী ব্যাংক। এছাড়া গত সোমবার রাতে তাবিথ আউয়াল তার মাকে নিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করলেও তার প্রার্থিতার বিষয়ে কোন আশ্বাস দেননি বলে জানা গেছে। ফলে কে হবেন উত্তরের বিএনপির মেয়র প্রার্থী তা নিশ্চিত নয়। ফলে ৯ এপ্রিলে আগে বিএনপির পক্ষ থেকে কে প্রচারের নামবে তা এখনও নিশ্চিত নন। নির্বাচনী প্রচারের বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণের বিএনপির অপর প্রার্থী আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, ঢাকা দক্ষিণে মির্জা আব্বাস ৯ এপ্রিলের পর প্রকাশ্যে এলে নির্বাচনী প্রচারণায় নামবেন। নির্বাচনের প্রচারের সময় এখনও চলে যায়নি। ৯ এপ্রিল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন রয়েছে। ইতোমধ্যে বিএনপির পক্ষ থেকে মির্জা আব্বাসকে সমর্থন দেয়া হয়েছে। এ কারণে সবাই নির্বাচনী মাঠে নেমে পড়লে জনগণের কাছে ভুল বার্তা যাবে। তিনি বলেন, দল যাকে সমর্থন দেবে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার শেষে তার জন্য নির্বাচনে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। তবে বিএনপি সূত্রে জানা গেছে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন থেকে প্রার্থীরা নির্বাচনী প্রচারণায় নেমে পড়বে। এর আগে নানা জটিলতায় বিএনপি পক্ষ থেকে কেউ নির্বাচনী প্রচারের নামছে না। তবে প্রার্থীরা মঙ্গলবার ভোর থেকে নির্বাচনে মেনে পড়লেও শুধু জনগণের দোয়া চাওয়া আর সমর্থন আদায়ের মাধ্যমে সীমাবদ্ধ রয়েছেন। এখন পর্যন্ত নির্দিষ্ট কোন প্রতীকে ভোট চাইতে পারছেন না। ৯ এপ্রিল মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার শেষে তাদের মধ্যে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে। কমিশন জানিয়েছে আইন অনুযায়ী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রতীক ঠিক করা রয়েছে। এছাড়া প্রার্থী বেকশি হলেও তার জন্য আরও অতিরিক্ত প্রতীক বরাদ্দ রয়েছে। প্রতীক বরাদ্দ নিয়ে সমস্যা হবে না। নির্বাচন কমিশনার শাহনেওয়াজ এ বিষয়ে মঙ্গলবার সাংবাদিকদের জানান, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আচরণবিধির লঙ্ঘন করলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। সঙ্গে সঙ্গেই সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন। তিনি বলেন, মঙ্গলবার থেকে প্রার্থীরা প্রচারণা শুরু করেছেন। আর দু-তিন দিন পর থেকে প্রতীকসহ প্রচারণা করতে পারবেন। প্রচারণা চালানোর বিষয়ে ইসির কোন আপত্তি নেই। তবে তা অবশ্যই আইনসঙ্গত হতে হবে। নির্বাচনী আচরণবিধি সঠিকভাবে মানতে হবে। কেউ বিধি ভঙ্গ করলে কঠোরভাবে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আইনে বলা হয়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নির্বাচনে আচরণবিধি ভঙ্গের কারণে এরই মধ্যে কিছু প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের বিরুদ্ধে কঠোরভাবে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এটা অব্যাহত থাকবে উল্লেখ করেন। মঙ্গলবার নির্বাচনী প্রচারের প্রথমদিনে ঢাকা দক্ষিণের আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী সকাল এগারোটায় যাত্রাবাড়ী কুতুবখালী মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের প্রবেশ মুখে পথসভার মধ্য দিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন। সেখানে সমবেতদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ঢাকা সিটি কর্পোরেশন একটা সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। এটা মানুষের জীবন-জীবিকার সঙ্গে জড়িত। দীর্ঘদিন যাবৎ এই সেবা ঝিমিয়ে পড়েছে। এ কারণে মানুষকে নানা বিড়াম্বনার মুখে পড়তে হচ্ছে। আমি যদি আপনাদের ভোটে মেয়র নির্বাচিত হতে পারি তাহলে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনকে আবার সেবা সংস্থা হিসাবে গড়ে তুলব। ঢাকার সাবেক মেয়র প্রয়াত মোহাম্মদ হানিফের কথা স্মরণ করে বলেন, আমার পিতা মানুষের জন্য তার জীবন উৎসর্গ করে গেছেন। আমিও মানুষের জন্য জীবন উৎসর্গ করব। তিনি বলেন, এই ফ্লাইওভার জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের সাক্ষী হয়ে আছে। সঙ্গে আমার পিতার আত্মত্যাগেরও সাক্ষী হয়ে আছে। এখান থেকে নির্বাচনী প্রচার শুরু করে ঢাকাবাসীকে উন্নয়নের ধারায় সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানান। এদিকে ঢাকা উত্তরে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আনিসুল হক পিতার দোয়া নিয়ে মায়ের কবর জিয়ারতের মাধ্যমে তিনি নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেন। মঙ্গলবার কাওরানবাজার থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর আগে তিনি জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর কাওরানবাজারে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও ফুটপাথ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নির্বাচনে সবার দেয়া কামনা করেন। বলেন, ঢাকার উত্তরের মেয়র নির্বাচিত হলে ঢাকা শহর গ্রিন সিটি হিসেবে গড়ে তুলবেন। এটা তার দীর্ঘদিনের স্বপ্ন। তিনি বলেন, ইচ্ছে করলেই ঢাকাকে সবুজ নগরী হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। এ বিষয়ে এতদিন কোন কাজই করা হয়নি। ঢাকা উন্নত নগর হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা হলে আজ যেখানে সেখানে আবর্জনার ভাগার থাকবে কেন। দুর্গন্ধময় ড্রেনেজ সিস্টেমের কারণ মানুষ চলতে পারে না। নির্বাচিত হলে এসব অবস্থার অবসান করে ঢাকা গ্রিন সিটি হিসেবে গড়ে তোলা হবে। এর আগে তিনি ধানম-ির ৩২ নম্বরের বঙ্গবন্ধু স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এদিকে জাতীয় পার্টিও পক্ষ থেকে ঢাকা দক্ষিণে মেয়র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন দলের সভাপতিম-লীর সদস্য সাইফুদ্দিন মিলন। তিনি বুধবার থেকে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করবেন বলে জানান। এছাড়া মেয়র নির্বাচনী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও জমা দিলেও প্রথম দিনে প্রচারণায় দেখা যায়নি বিকল্পধারার যুগ্ম মহসচিব মাহী বি চৌধুরীকে।
×