ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সন্ত্রাসী ও জঙ্গীদের বিরুদ্ধে কঠোর হোন ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ৭ এপ্রিল ২০১৫

সন্ত্রাসী ও জঙ্গীদের বিরুদ্ধে কঠোর হোন ॥ প্রধানমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ নাশকতা ও জঙ্গী কর্মকাণ্ড বন্ধে প্রশাসনকে যথাযথ পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর পটুয়াখালী ও নেত্রকোনা জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটি এবং বরিশাল বিভাগীয় কমিশনারের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে এ নির্দেশ দেন তিনি। এ সময় ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারসহ আরও কয়েকটি জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী। ভিডিও কনফারেন্সে শেখ হাসিনা বলেন, জ্বালাও, পোড়াও, নানা ধরনের সন্ত্রাসী, জঙ্গী কাজ করে কয়েকটি দল যেভাবে মানুষের ক্ষতি করেছে, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। কাজেই এ ধরনের ঘটনা যাতে আর কেউ ঘটাতে না পারে এবং জঙ্গীবাদী কোন কর্মকা- যেন বাংলাদেশে না হয়, অবশ্যই সে ব্যাপারে আপনারা যথাযথ পদক্ষেপ নেবেন। এ সময় তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াত পুড়িয়ে মানুষ মেরেছে। তারা আন্দোলনের নামে এই ন্যক্কারজনক কর্মকা- চালিয়েছে। প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজনীতিতো মানুষের কল্যাণের জন্য। মানুষের জন্যইতো রাজনীতি। কিন্তু যে রাজনীতিতে মানুষ পুড়িয়ে মারা হয় সেটি কি রাজনীতি? সাধারণ মানুষকে তারা টার্গেট করে পুড়িয়ে মেরেছে। এ সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি কঠোর নির্দেশ দিয়ে বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দিকে লক্ষ্য রাখবেন। সন্ত্রাসী, জঙ্গীবাদীদের কোন ছাড় দেবেন না। বাংলার মাটিতে জঙ্গীবাদের কোন স্থান নেই। নির্দলীয় সরকারের অধীনে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে গত ৬ জানুয়ারি থেকে সারাদেশে লাগাতার অবরোধ চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি-জামায়াত জোট। সেই সঙ্গে হরতালও দেয়া হচ্ছে। অবরোধ-হরতালের নাশকতায় শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এরই মধ্যে একজন লেখক-ব্লগার ও একজন অনলাইন এ্যাক্টিভিস্টকে হত্যা করা হয়েছে, যাতে জঙ্গীরা জড়িত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মাঝখানে একটা দুঃসময় গেল আমাদের। প্রায় তিন মাস পর্যন্ত সকল বিভাগ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা, প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিসহ সকলেই যেভাবে ধৈর্য ধরে এ অবস্থা মোকাবেলা করেছেন, সহযোগিতা করেছেন, সেজন্য আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাচ্ছি। স্থানীয় সমস্যা, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও উন্নয়ন নিয়েও কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে কথা বলেন সরকারপ্রধান। কালবৈশাখীর এই মৌসুমে ঝড়সহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় আগাম প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বাান জানিয়ে তিনি বলেন, আমি আশা করব, আপনারা যার যার দায়িত্ব পালন করে মানুষের পাশে থাকবেন। দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে সরকারের নেয়া কর্মসূচীগুলো বাস্তবায়ন করতে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করার জন্যও স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি আরও বলেন, দেশের উন্নয়নে নেয়া প্রকল্পগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করবেন। এ কাজগুলো যেন ভালভাবে হয় সেক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখবেন। ২০২১ সালের মধ্যে আমরা দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে চাই। এ লক্ষ্যে আপনাদের দায়িত্বশীল হয়ে কাজ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দারিদ্র্য বিমোচন আমাদের প্রধান লক্ষ্য। গ্রামীণ অর্থনীতির উন্নয়ন আমাদের মূল লক্ষ্য। এ বিষয়টি সবাইকে মনে রাখতে হবে এবং সে লক্ষ্যে কাজ করতে হবে। ভিডিও কনফারেন্সের শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী পটুয়াখালী জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সঙ্গে কথা বলেন। পটুয়াখালীতে পায়রা সমুদ্রবন্দর, বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন, বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ, নৌঘাঁটি, কোস্টগার্ডের সদর দফতর স্থাপন ও বরিশাল বিভাগে সেনাবাহিনীর একটি ডিভিশন করাসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচী বাস্তবায়ন ও পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমি বলতে পারি, পটুয়াখালী বাংলাদেশের সব থেকে উন্নত একটা এলাকা হতে যাচ্ছে। এটা আমরা করব। সে ধরনের কর্মসূচী হাতে নিয়েছি। এ সময় পটুয়াখালী জেলা পরিষদের প্রশাসক খান মোশাররফ হোসেন বলেন, আপনার কাছে আমাদের কোন দাবি-দাওয়া নেই। দাবির আগেই আপনি যে উন্নয়ন করেছেন সেজন্য আপনার কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। দক্ষিণবঙ্গে মানুষের ‘আগে অবহেলিত’ থাকার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এখন আমরা চেষ্টা করছি এসব জায়গায় আরও বেশি উন্নয়ন করার জন্য। কাজেই এ উন্নয়নের কাজগুলো যাতে ভালভাবে হয়, আপনারা সেটাই দেখবেন। নেত্রকোনা জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সঙ্গে আলোচনার সময় প্রধানমন্ত্রী উন্নয়নের চিত্র তুলে বলেন, আমরা যথেষ্ট কাজ করেছি। হাওর-বাঁওড়ের মানুষ আগে যথেষ্ট কষ্টের মধ্যে থাকত। হাওর অঞ্চলের উন্নয়নে আমরা হাওর উন্নয়ন বোর্ড করে দিয়েছি। আমরা যেসব কর্মসূচী হাতে নিয়েছি সেগুলো বাস্তবায়ন করতে পারলে এ এলাকার মানুষের কষ্ট থাকবে না। এ সময় মৎস্য প্রক্রিয়াজাতকরণের ওপর গুরুত্ব দেয়ার জন্য নেত্রকোনার কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন তিনি। নেত্রকোনা জেলা পরিষদের প্রশাসক মতিউর রহমান খান জেলার উন্নয়নে কয়েকটি প্রকল্প গ্রহণের দাবি জানান। এরমধ্যে রয়েছেÑ শহরকে যানজটমুক্ত করতে সংযোগ সড়ক স্থাপন, একটি হাসপাতাল নির্মাণ এবং দুর্গাপুরে একটি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা। এরপর বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তিনি ‘বাংলার শস্যভা-ার’ ও ‘প্রাচ্যের ভেনিস’ হিসেবে বরিশালের পরিচিতির কথা তুলে ধরে বলেন, আমরা চাই এগুলো আবার ফিরে আসুক। নদীভাঙ্গন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে একটা মানুষ যেন গৃহহীন না থাকে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নিতেও নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। নতুন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের এই বিশাল বিশাল নদী, এত খাল, বিল, জলাশয়; একটা জায়গাও এক ইঞ্চি জমি কিংবা একটা জলাধার যেন পতিত পড়ে না থাকে, প্রতিটা জায়গায় যেন উৎপাদনমুখী কিছু হয়।
×