ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে শঙ্কা

প্রকাশিত: ০৪:৫৮, ৬ এপ্রিল ২০১৫

রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা  পূরণ নিয়ে শঙ্কা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, ব্যবসায়িক মন্দাভাব ও নতুন বিনিয়োগ না হওয়ার সম্ভাবনা মাথায় রেখেই ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রাজস্ব আহরণের বিশাল লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। তবে বছরের প্রথম আট মাসের সব খাতের রাজস্ব আদায় শেষে তা থেকে অনেক দূরে সংস্থাটি। এক লাখ ৪৯ হাজার ৭২০ কোটি টাকার বিপরীতে এই সময়ের মধ্যে আদায় হয়েছে ৮০ হাজার ৪৪ কোটি ৮১ লাখ টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রার ৫৩ দশমিক ৪১ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের চার মাস ও লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৪৭ শতাংশ বাকি থাকায় রাজস্ব আহরণের এ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন অর্থনীতিবিদরা। তবে বছরের শেষ সময়ে রাজস্ব আহরণ অনেক বেশি হবে জানিয়ে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হওয়ার আশা করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। এনবিআর সূত্র জানায়, ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেটে ২২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি ধরে এক লাখ ৪৯ হাজার ৭২০ কোটি টাকা রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে এনবিআর। এরমধ্যে মূসকে ৫৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, আয়করে ৫৬ হাজার ৫৮০ কোটি, শুল্কে ৩৫ হাজার ৭২০ কোটি ও অন্যান্য কর বাবদ ৯২০ কোটি টাকা আহরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এর বিপরীতে বছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) সব খাত মিলে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৮০ হাজার ৪৪ কোটি ৮১ লাখ টাকা। এরমধ্যে আয়করে ২৪ হাজার ৯০৮ কোটি ৮৭ লাখ, মূসকে ৩০ হাজার ৭৩৪ কোটি ৯১ লাখ, শুল্কে ২৩ হাজার ৮৪৩ কোটি ৪৬ লাখ ও অন্যান্য করে আদায় হয়েছে ৫৫৭ কোটি টাকা। সূত্র জানায়, বছরের প্রথম আট মাসে রাজস্ব আহরণের প্রধান তিনটি খাত মূসক, আয়কর ও শুল্কসহ সব খাতই রয়েছে লক্ষ্যমাত্রা থেকে দূরে। এরমধ্যে শুল্ক ও মূসকে লক্ষ্যমাত্রা কিছুটা ঠিক থাকলেও বেশ দূরে রয়েছে আয়কত খাত। এ সময়ে মূসকে মোট লক্ষ্যমাত্রার ৫৭ শতাংশ, শুল্কে ৬৭ শতাংশ অর্জিত হয়েছে। আর আয়করে অর্জিত হয়েছে মাত্র ৪৫ শতাংশ। বছরের বাকি চার মাসে আয়কর খাতে লক্ষ্যমাত্রার অবশিষ্ট ৫৫ শতাংশ ও অন্যান্য খাতের অবশিষ্ট লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সম্ভব নয় বলেই মনে করছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের নির্বাহী পরিচালক ড. মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, বছরের প্রথম পাঁচ মাস ভাল কাটলেও মাঝামাঝি সময় থেকেই শুরু হয় রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা। টানা হরতাল-অবরোধে ব্যবসায়ীদের লোকসান গুনতে হয়েছে হাজার হাজার কোটি টাকা। বছরের অবশিষ্ট সময়ে ব্যবসায়ীদের পক্ষে কর দেয়া সম্ভব হয় কি-না তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তাই রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা পূরণের সম্ভাবনা একেবারেই কম। এনবিআর সূত্র বলেছে, কয়েক বছর ধরে আয়কর বা প্রত্যক্ষ কর খাতে শক্তিশালী অবস্থান থাকলেও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এ বছর বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী মারাত্মক ব্যাহত হয়েছে। এর বিরূপ প্রভাবে রাজস্ব ঘাটতি বেড়েছে। এছাড়া চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতায় বিরূপ প্রভাবে কমে গেছে ভ্রমণ কর আদায়। আর টানা অবরোধ ও হরতালে যোগাযোগ ব্যাহত হওয়ায় চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন শুল্ক স্টেশনে লাখ লাখ পণ্যভর্তি কন্টেইনার আটকে পড়ায় বিরূপ প্রভাব পড়েছে শুল্ক ও মূসক আদায়ে। তবে বছর শেষে এরকম অবস্থা থাকবে না বলে আশা প্রকাশ করেছেন এনবিআরের সদস্য (করনীতি) পারভেজ ইকবাল। তিনি বলেন, বার্ষিক লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় মোট রাজস্ব আহরণ কিছুটা কম মনে হলেও এ সময় লক্ষ্যমাত্রা বেশি ছিল না। বছরের প্রথম ছয় মাস রাজস্ব আহরণ সব সময়ই কম হয়। এ সময় লক্ষ্যমাত্রাও কম থাকে। জানুয়ারি মাসের তুলনায় ফেব্রুয়ারিতে রাজস্ব আহরণ অনেক বেড়েছে। এটি অব্যাহত থাকবে। পারভেজ ইকবাল বলেন, চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা কেটে উঠলে ও ব্যবসার সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি হলে বছর শেষে বাজেটে নির্ধারিত রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে। তবে সামনে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন, তাই কিছুটা শঙ্কাও রয়েছে বলে মনে করেন তিনি।
×