ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত!

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ৪ এপ্রিল ২০১৫

প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত!

বুধবার রাজশাহীর হযরত শাহ্ মখদুম (র) বিমানবন্দরে একটি প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে মর্মান্তিক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। প্রশিক্ষণার্থী বিমানচালক তামান্না রহমান বিধ্বস্ত বিমানের ভেতর পুড়ে কয়লা হয়ে যান এবং তাঁর সঙ্গে থাকা প্রশিক্ষক লে. কর্নেল (অব) সাইদ কামালের শরীরের ৫০ ভাগ পুড়ে যায়। এর আগেও দেশে প্রশিক্ষণ বিমানের বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ১৯৯৮ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ঢাকার পোস্তগোলায় প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে মারা যান দুইজন তরুণ বৈমানিক ফারিয়া লারা ও রফিকুল। এ ছাড়া ২০১০ সালে যমুনা নদীতে একই ধরনের প্রশিক্ষণ বিমান (সেসনা-১৫২) বিধ্বস্ত হয়ে নিহত হন বৈমানিক কামরুল হাসান। শাহ্ মখদুমের দুর্ঘটনা তদন্তের জন্য সিভিল এ্যাভিয়েশনের ফ্লাইট সেফটি এ্যান্ড রেগুলেশনের পরিচালককে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি দুর্ঘটনার দিন বিকেলেই ঘটনাস্থলে পৌঁছে কাজ শুরু করেছে। তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ জানা যাবে। তবে সংবাদদাতাদের প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রাথমিকভাবে বলা যায় উড্ডয়নের পরপরই যান্ত্রিক ত্রুটির শিকার হয় বিমানটি। শূন্যেই বিমানটির ইঞ্জিনে আগুন লেগেছিল নাকি ভূমিতে আছড়ে পড়ার পর সেটিতে আগুন লেগে যায়, তা তদন্তের পর নিশ্চিত হওয়া যাবে। তবে শাহ্ মখদুম বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক সংবাদকর্মীদের বলেছেন, অবস্থাদৃষ্টে মনে হয়েছে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণেই বৈমানিক বিমানটি অবতরণের চেষ্টা করেন এবং সে সময়েই বিমানটিতে আগুন ধরে যায়। নিহত প্রশিক্ষণার্থী বৈমানিক তামান্নার বাবা অভিযোগ জানিয়ে বলেছেন, আগের সপ্তাহেই বিমান উড্ডয়নের মুহূর্তে বিমানটির একটি চাকা ফুটো হয়ে যায়। তাঁর ভাষায়Ñ উড্ডয়নের অনুপযুক্ত বিমান দিয়ে বিমান প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালানোর জন্য বাংলাদেশ ফ্লাইং একাডেমির শাস্তি হওয়া উচিত। শাহ্ মখদুমের প্রশিক্ষণ বিমান দুর্ঘটনায় নবীন প্রজন্মের একজন নারীর মর্মান্তিক জীবনাবসানের ঘটনাটি অত্যন্ত বেদনাদায়ক। আজকের বাংলাদেশের নারীরা প্রায় সব পেশার পাশাপাশি বিমান চালনার মতো ঝুঁকিপূর্ণ পেশাতেও যোগ দিচ্ছেনÑ এটি সমাজ ও নারীর অগ্রযাত্রারই পরিচয়বাহী। আশঙ্কার জায়গা হলো, প্রশিক্ষণ বিমানের দুর্ঘটনা আগামীতে বৈমানিক হওয়ার স্বপ্ন লালনকারী অসংখ্য তরুণ-তরুণীর মনের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। তাদের ভেতর এমন ধারণা গড়ে উঠতে পারে যে, নিজের দেশে প্রশিক্ষণে ব্যবহৃত বিমানগুলো হয়ত সম্পূর্ণরূপে ত্রুটিমুক্ত নয়। তাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই এমন কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে প্রশিক্ষণ বিমানগুলো ক্রুটিমুক্ত থাকে। সেই সঙ্গে প্রশিক্ষণ বিমান রক্ষণাবেক্ষণ এবং উড্ডয়নের আগে যাবতীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করাও সময়ের দাবি। প্রশিক্ষণার্থী তামান্না আগুন ধরে যাওয়া বিমানের ভেতর থেকে সাহায্য প্রার্থনা করেন। তাৎক্ষণিকভাবে আগুন নিভিয়ে তাঁকে উদ্ধার করা হলে হয়ত এই বেদনাদায়ক ঘটনার সৃষ্টি হতো না। বিমানবন্দরে বাংলাদেশ ফ্লাইং একাডেমির নিজস্ব দমকল বাহিনী থাকা সত্ত্বেও তারা জরুরী তৎপরতা কেন চালাতে পারেনিÑ এমন প্রশ্ন এখন উঠতেই পারে। বিশেষ করে বিমান উড্ডয়ন ও অবতরণের সময় দমকল বাহিনী প্রস্তুত ও অপেক্ষমাণ (স্ট্যান্ডবাই) থাকার কথা থাকলেও দমকল বাহিনীর রানওয়েতে প্রবেশ করে বিধ্বস্ত বিমানের কাছে যেতে কুড়ি মিনিট কেন লেগে গেল এর সদুত্তর খুঁজে বের করতে হবে। তামান্নার এই মর্মান্তিক মৃত্যু ভবিষ্যতের জন্য আরও সতর্ক ও প্রস্তুত হতেই শিক্ষা দেয়।
×