ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও ব্যাংক এ্যাসোসিয়েশন কাজ শুরু করেছে

বাজেটে ব্যাংক ঋণের সুদহার কমানোর পদক্ষেপ আসছে

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ৪ এপ্রিল ২০১৫

বাজেটে ব্যাংক ঋণের সুদহার কমানোর পদক্ষেপ আসছে

এম শাহজাহান ॥ বিনিয়োগ বাড়াতে ঋণের বিপরীতে সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। ঋণ আকর্ষণীয় করে তুলতে সুদহার হবে ৯ শতাংশ। সুদের এ হার যাতে সিঙ্গেল ডিজিটের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে সে লক্ষ্যে আগামী ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেটে বিশেষ কর্মকৌশল গ্রহণ করবে সরকার। উৎপাদনমুখী শিল্পখাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং মূল্যস্ফীতি হ্রাস করতে সুদের হার কমানো হবে। সুদহার কমিয়ে আনতে অর্থমন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক ও ব্যাংক মালিকদের সংগঠন এ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস কাজ শুরু করেছে। এছাড়া এফবিসিসিআই নির্বাচনে এবার ব্যবসায়ী উন্নয়ন পরিষদের ইশতেহার সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে। হরতাল-অবরোধের আর্থিক ক্ষয়-ক্ষতি মোকাবেলায় সুদ কমানোর বিষয়ে সবচেয়ে বেশি জোর দিয়েছে বাণিজ্যিক সংগঠনগুলো। সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার জন্য অর্থমন্ত্রীর কাছে আবেদন করা হয়েছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। সূত্র মতে, ব্যাংকের আমানত ও ঋণের সুদহারের মধ্যকার পার্থক্য বা স্প্রেড ৩ শতাংশে নামিয়ে আনতে অর্থমন্ত্রণালয়কে ইতোমধ্যে প্রস্তাব দিয়েছে ব্যবসায়ী ও শিল্পমালিকদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই। তাদের প্রস্তাবে বলা হয়েছে দেশে এখন স্প্রেডের হার ৫ শতাংশ। ব্যাংকের পরিচালন ব্যয়, সঞ্চিতির পরিমাণ, কর্পোরেট কর ও মুনাফা কমিয়ে আনলে স্প্রেডও কমবে, সুদহারও কমে আসবে। শুধু তা-ই নয়, নীতি নির্ধারণী কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েই ব্যাংকঋণের উচ্চ সুদহার কমিয়ে আনা সম্ভব। সুদের হার যৌক্তিকীকরণ করতে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়নের সুপারিশও রয়েছে সংগঠনটির। এদিকে, অভিযোগ রয়েছে ২০১২ সালে সুদ হারের উর্ধসীমা তুলে নেয়ার পর থেকে ব্যাংকঋণের সুদহার বাড়ছে। দীর্ঘমেয়াদী মূলধনের ক্ষেত্রে দেশে সুদহার বর্তমানে ১৮-১৯ শতাংশ। আবার উচ্চ সুদের পাশাপাশি বিভিন্ন নামে আদায় করা হচ্ছে সার্ভিস চার্জ। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী, স্প্রেড ৫ শতাংশের মধ্যে থাকার কথা থাকলেও বেশির ভাগ ব্যাংকের স্প্রেড এখনও ওপরে। এ কারণে আগামী বাজেটে সুদহার কমানোর বিষয়ে নির্দেশনা থাকবে। সুদের লাগাম টেনে ধরার পাশাপাশি কমানো হবে সার্ভিস চার্জও। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র দাবি করেছে, ব্যাংকঋণের উচ্চ সুদহারে অতিষ্ঠ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। সুদহার নিয়ে উদ্যোক্তা ও বিনিয়োগকারীদের অভিযোগ দীর্ঘদিনের। এ কারণে গত বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি অর্থমন্ত্রী সুদহার যৌক্তিক পর্যায়ে নামিয়ে আনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি লিখেন। ওই চিঠিতে তিনি উচ্চ সুদহার আদায়ে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর স্বভাবকে নিতান্তই লোভী হিসেবে উল্লেখ করেন। এ অবস্থায় ব্যাংকঋণের উচ্চ সুদহার কিভাবে নামিয়ে আনা যায় সে বিষয়ে মৌলিক গবেষণা করে তত্ত্ব দিতে বাংলাদেশ ব্যাংককে নির্দেশ দেন তিনি। অর্থমন্ত্রীর নির্দেশনা মোতাবেক বাংলাদেশ ব্যাংক সর্বজনগ্রাহ্য সুদহার নির্ধারণের উপায় নিয়ে কাজ শুরু করে। এ কারণে দেশে সুদহার এখন কমে আসছে। নতুন অর্থবছরে সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনা হবে। আর এ হার হবে ৯ শতাংশের মধ্যেই। এফবিসিসিআই নির্বাচন সামনে রেখে ব্যাংক সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার ঘোষণা চাচ্ছে বাণিজ্যিক সংগঠনগুলো। এ লক্ষ্যে ব্যবসায়ী উন্নয়ন পরিষদ থেকে সভাপতি প্রার্থী আব্দুল মাতলুব আহমেদ তাঁর নির্বাচনী ইশতেহারে সুদহার কমানোর বিষয়ে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। ইতোমধ্যে সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি জনকণ্ঠকে বলেন, ব্যবসায়ী উন্নয়ন পরিষদের প্রথম কাজ হচ্ছে ঋণের বিপরীতে সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনা। সুদের হার ৯ শতাংশের মধ্যে নামিয়ে আনা হবে। তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমরা অর্থমন্ত্রীসহ সরকারের উচ্চ পর্যায়ে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি। একই সঙ্গে করণীয় নির্ধারণ করা হচ্ছে। আশা করছি, দেশে বিনিয়োগবান্ধব সুদহার নির্ধারণ করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, সুদহার কমিয়ে আনতে বর্তমান সরকারও আন্তরিক। এ কারণে সুদহার সিঙ্গেল ডিজিটে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে। এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, উদ্যোক্তাদের আর কোন দাবি নেই। সবাই সুদহার কমিয়ে আনার কথা বলছে। এ কারণে এ বিষয়টিই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আমরা নির্বাচনে মাঠে নেমেছি। এদিকে, এফবিসিসিআইও মনে করে ঋণের সুদ কমলে শিল্পখাতে বিনিয়োগে যে ভাঁটা দেখা যাচ্ছে তা দূর হবে। উদ্যোক্তারা স্বল্পসুদে ঋণ পেলে বিনিয়োগে উৎসাহিত হবেন। আর তাই সরকারী উদ্যোগেই শেষ পর্যন্ত সুদহার কমিয়ে আনার উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। ঋণের সুদ হারের পাশাপাশি ঋণ প্রক্রিয়াকরণ ফি বাবদ ব্যাংকগুলো বিভিন্ন ধরনের চার্জ নিচ্ছে। সবকিছু মিলিয়ে উদ্যোক্তাদের ১৮-১৯ শতাংশ হারে সুদ গুণতে হচ্ছে। এ অবস্থায় সুদের হারের লাগাম না টানলে সার্বিক বিনিয়োগ ও নতুন শিল্প স্থাপন পরিস্থিতি আরও নাজুক হবে। উদ্যোক্তারা জানান, ১৮-১৯ শতাংশ সুদহারে ঋণ বিতরণ, চক্রবৃদ্ধি হারে যা ২২-২৫ শতাংশে উন্নীত হয়। এর বাইরে ২৫ ধরনের সার্ভিস চার্জের নামে ঢালাও অর্থ আদায় গ্রাহকদের ধীরে ধীরে নিঃশেষ করে দিচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক তথ্য মতে, দেশে দীর্ঘমেয়াদী মূলধনের ক্ষেত্রে সুদের হার ১৭-১৯ শতাংশ পর্যন্ত। আবার এর সঙ্গে যোগ হয় ২-৪ শতাংশ সার্ভিস চার্জ। এছাড়া মেয়াদপূর্তির আগে ঋণ সমন্বয় করতে চাইলে কোন কোন ব্যাংক এ বাবদ অতিরিক্ত ৩-৪ শতাংশ হারে চার্জ আদায় করে থাকে। ফলে সব মিলিয়ে উদ্যোক্তাদের ২২-২৫ শতাংশ হারে সুদ দিতে হয়। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ায় এমনকি এশিয়ার অন্য দেশে ব্যাংক ঋণের সুদের হার এত বেশি নয়। ভারতে ব্যাংক ঋণের সুদের হার ১০ দশমিক ৭৫ শতাংশ। চীনে ৭ দশমিক ০৫ শতাংশ ও জাপানে ১ দশমিক ৩৫ শতাংশ মাত্র।
×