ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঢাকা ভার্সিটির ৪ হলের শিক্ষার্থীদের ঝুঁকির মধ্যে বসবাস

প্রকাশিত: ০৬:১২, ৩ এপ্রিল ২০১৫

ঢাকা ভার্সিটির ৪ হলের শিক্ষার্থীদের ঝুঁকির মধ্যে বসবাস

মুহাম্মদ ইব্রাহীম সুজন ॥ ছাদ ধসে পড়ার ঘটনা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন নয়। ১৯৮৫ সালের ১৫ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের একটি ভবনের ছাদ ধসে পড়ে ছাত্র-কর্মচারী-অতিথিসহ ৩৯ জন প্রাণ হারায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন সময়ে এ রকম ঘটনা ঘটেছে। সর্বশেষ বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টারদা সূর্যসেন হলের মিলনায়তনের সামনের ছাদের দেয়াল ধসে পড়ে। এতে আহত হন দুইজন। এর আগে ২০১৩ সালের ৮ মে দুপুরে হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের টিভি রুমের ছাদের পলেস্তারা ধসে পড়ে। কিন্তু এ সব হল সংস্কারের তেমন কোন উদ্যোগ নেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। যদিও এ রকম ঝুঁকিপূর্ণ চারটি হলের জরুরী সংস্কারে ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। কিন্তু ২০১৩ সালের মে মাসে এ বরাদ্দ দেয়ার পর প্রায় দু’বছর অতিবাহিত হলেও অজানা কারণে আটকে আছে সেই সংস্কার কাজ। যদিও প্রক্রিয়াগত কারণে সেই টাকা হাতে পেতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কিছুটা সময় লেগেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, মুহসীন হল ধসে পড়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তিন বছর মেয়াদে হল সংস্কারের একটি উন্নয়ন প্রকল্প অনুমোদনের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। মুহসীন, জহুরুল হক, মাস্টারদা সূর্যসেন ও শহীদুল্লাহ হল সংস্কারে এ প্রকল্প নেয়া হয়। দীর্ঘমেয়াদী ওই প্রকল্পটির বদলে মন্ত্রণালয় হল চারটিকে জরাজীর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে জরুরী মেরামত ও সংস্কার কাজের আওতায় ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। কিন্তু দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও সেই কাজ এখনও শুরু হয়নি। এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রকৌশলী মফিজুর রহমান জনকণ্ঠকে জানান, কাজ শুরু না হওয়ার পিছনে কারণ অনেক। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা। বাজেট পাস হওয়ার পরপরই বুয়েট কর্তৃপক্ষকে নক্সা প্রণয়নের জন্য বলা হয়। সেই নক্সার কাজ এখনও চূড়ান্ত হয়নি। এর ওপরে বুয়েট কর্তৃপক্ষের চাহিদার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের দর-কষাকষি এবং নক্সা চূড়ান্তের কাজ এখনও প্রক্রিয়াধীন। তারা ৫৬ লাখ টাকা চেয়েছিল। পরে ৩৪ লাখ টাকায় রাজি করানো হয়। এ অর্থের বিনিময়ে তারা শুধু নক্সা প্রণয়ন এবং কাজের তদারকি করবেন। তিনি আরও জানান, সরকারের বরাদ্দের অর্ধেক টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছে চলে এসেছে। সেই কাগজ কয়েকদিন আগেই আমরা হাতে পেয়েছি। বুধবারের ঘটনার পর আলোচনা করে আগামী ৬ এপ্রিল বুয়েটের সঙ্গে মিটিংয়ের দিন ঠিক করা হয়েছে। তবে ঠিক কবে নাগাদ এ কাজ শুরু হবে সে বিষয়ে স্পষ্ট করে তিনি কিছু জানাতে পারেননি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ঝুঁকিপূর্ণ হলগুলো ঘুরে দেখা গেছে, মুহসীন হলের বিভিন্ন অংশের পলেস্তারা খসে পড়েছে। হলটির প্যাসেজ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় দেয়াল কেঁপে ওঠে। হলটির উত্তর ও দক্ষিণ ব্লকের অবস্থা সবচেয়ে বেশি খারাপ। চার তলার দক্ষিণ ব্লকে বেশ কয়েকদিন আগে পলেস্তারার বিশাল একটি অংশ ধসে পড়েছে। হলটির শিক্ষার্থী আলামিন হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, প্রতিনিয়ত হলের পলেস্তারা খসে পড়ছে। কয়েক দিন আগেও পড়ার সময় হঠাৎ মাথার ওপর পলেস্তারা পড়েছে, যদিও বড় কোন ক্ষতি হয়নি। প্রতিদিন ঝুঁকির মধ্যে বসবাস করতে হচ্ছে। এ সমস্যাগুলোর দ্রুত সমাধান করা না হলে যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। সার্জেন্ট জহুরুল হক হল নির্মিত হয়েছে ১৯৫৭ সালে। দীর্ঘদিন সংস্কারের ছোঁয়া না লাগায় দক্ষিণাংশের ভবনটিতে ভাঙন ও ফাটল দেখা দিয়েছে। হলটির বর্ধিতাংশের পিলার ধসে পড়ে গত বছরের এপ্রিলে। তখন তড়িঘড়ি করে সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয়। বর্ধিতাংশের ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে। বৃষ্টিপাতের সময় বিভিন্ন অংশ দিয়ে পানি পড়ে। ছাদ-দেয়ালের অনেক জায়গায় পলেস্তারা খসে রড বের হয়ে আছে। শহীদুল্লাহ হলের বয়স বিশ্ববিদ্যালয়ের সমান। ১৯২১ সালে নির্মিত এ হলেরও বিভিন্ন অংশে ফাটল ধরেছে। পলেস্তারাও খসে পড়ছে। ইতোমধ্যে কয়েক দফা সংস্কার কাজ হয়েছে। কিন্তু তা টেকসই হয়নি। হলের এক্স-১ ও এক্স-২ ভবনের অবস্থা সবচেয়ে বেশি খারাপ। বর্ষায় বিভিন্ন কক্ষে পানি পড়ে। হলের এক্স-২ ভবনের পঞ্চম তলার বিভিন্ন কক্ষে ফাটল ধরেছে। হলটির শিক্ষার্থীরা জানান, শহীদুল্লাহ হল অনেক পুরনো হওয়ায় অবস্থা বেশি খারাপ। আগেও অনেকবার মেরামত করা হয়েছে। তাৎক্ষণিকভাবে পলেস্তারা খসা বন্ধ হয়, কিন্তু তাতে স্থায়ী কোন সমাধান হয় না। কাজেই ঝুঁকির মধ্যেই শিক্ষার্থীদের বসবাস করতে হচ্ছে। মাস্টারদা সূর্যসেন হল নির্মিত হয়েছে ১৯৬৬ সালে। হলের উত্তর ও দক্ষিণ ব্লকের কক্ষগুলোর পলেস্তারা খসে পড়ছে। কয়েকটি কক্ষের সামনেও ফাটল দেখা দিয়েছে। এমনকি নবনির্মিত বিজয় একাত্তর হলের বিভিন্ন দেয়ালেও ফাটল দেখা দিয়েছে।
×