ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

যুদ্ধাপরাধী বিচার

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল দ্রুত একটি হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৬:০০, ৩ এপ্রিল ২০১৫

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল দ্রুত একটি হচ্ছে

বিকাশ দত্ত ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ব্যাপক পরিবর্তন আসছে। দুইটি ট্রাইব্যুনালের স্থলে সত্বরই একটি ট্রাইব্যুনাল করা হবে। অন্যদিকে নতুন যে সমস্ত মামলা আসছে তাতে সাক্ষীগণ সাক্ষ্য প্রদানে নিরাপত্তার অভাব বোধ করছেন। এর আগে আইন মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশনের দেয়া সাক্ষী সুরক্ষা আইনের ওপর দুইটি প্রস্তাব এখনও পড়ে আছে। ট্রাইব্যুনালে বর্তমানে নয়টি মামলার বিচার চলছে । আরও নতুন ৭টি মামলা প্রসিকিউশনে এসেছে। সেগুলো তদন্ত কর্মকর্তাদের পাশাপাশি প্রসিকিউটরদের মধ্যে বণ্টন করে দেয়া হয়েছে। তদন্ত সংস্থা আশা করছে অবিলম্বে এসব মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দেয়া হবে। আইন মন্ত্রণালয়, তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশনসূত্রে এ খবর জানা গেছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ২০১০ সালের ২৫ মার্চ পুরাতন হাইকোর্ট ভবনে স্থাপন করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। মামলার সংখ্যা বাড়া ও তা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ২০১২ সালের ২২ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ নামে আরও একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। দুইটি ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর এ পর্যন্ত ১৭টি মামলায় ১৮ জনকে দ- প্রদান করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৩টি মামলায় ১৪ জনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- প্রদান করা হয়েছে। দুইজনকে আমৃত্যু কারাদ-, একজনকে ৯০ বছরের কারাদ- ও একজনকে যাবজ্জীবন কারাদ- প্রাদন করা হয়েছে। এর মধ্যে যাবজ্জীবন পাওয়া কাদের মোল্লাকে সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ মৃত্যুদ- প্রদান করেছে। তার রায় কার্যকর করা হয়েছে। দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদ- কমিয়ে আপীল বিভাগ আমৃত্যু কারাদ- প্রদান করেছে। আপীল বিভাগে কামারুজ্জামানের মামলার রিভিউ শুনানির জন্য ৫ এপ্রিল দিন ধার্য করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনালে বর্তমানে জেলা-উপজেলা পর্যায়ের মামলা আসছে। তুলনামূলকভাবে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে তেমন কোন মামলা নেই। এ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জনকণ্ঠকে বলেছেন, খুব সত্বরই দুইটি ট্রাইব্যুনালের স্থলে একটি ট্রাইব্যুনাল করা হবে। এর আগে তিনি বলেছিলেন, যে সমস্ত মামলা সিএভি রাখা হয়েছে তার রায় হলেই ট্রাইব্যুনাল একটি করা হবে। বৃহস্পতিবার তিনি আবারও জোর দিয়ে বলেছেন সত্বরই ট্রাইব্যুনাল একটি হচ্ছে। তবে এই মুহূর্তে প্রসিকিউশনে কোন পরিবর্তন হচ্ছে না। সাক্ষী সুরক্ষা আইনের বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেছেন, আমি যতদূর জানি ঐ প্রস্তাবটি আইন মন্ত্রণালয় থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এখন সেখানে কি অবস্থায় আছে তা আমার জানা নেই। বর্তমানে দুটি ট্রাইব্যুনালে নয়টি মামলা বিচারাধীনসহ বিভিন্ন পর্যায়ে রয়েছে। এদিকে তদন্ত সংস্থা থেকে আরও ৭টি নতুন মামলা প্রসিকিউশনে এসেছে। মামলাগুলোর মধ্যে রয়েছে হবিগঞ্জের লাখাই থানার লিয়াকত আলী, ব্রাক্ষণবাড়িয়ার সৈয়দ মোহাম্মদ হুসাইন ওরফে হোসেন, গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানীর এনায়েত মোল্লা, নোয়াখালী জেলার সুধারাম থানার আমির আহম্মেদ ওরফে রাজাকার আমির আলী, পটুয়াখালী সদরের আয়নাল খাঁ এবং পলাচিপার মোঃ আস্রাব আলী, ব্রাক্ষণবাড়িয়ার সরাইলের এমদাদুল হক ওরফে টাক্কাবালী। এ প্রসঙ্গে তদন্ত সংস্থাসূত্রে জানা গেছে, তারা এ সব মামলার তদন্ত প্রতিবেদন সহসাই দিতে যাচ্ছে। এদিকে মানবতাবিরোধী বিচারের যারা সাক্ষী হয়েছেন তারা এখন নিরাপত্তার ঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। মামলার প্রায় দেড় হাজার সাক্ষী রয়েছে। ইতোমধ্যে যে সমস্ত মামলার সাক্ষ্য হয়েছে তারা এখন নিজ এলাকায় ভয়ের মধ্যে রয়েছে। এ প্রসঙ্গে তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক সানাউল হক জনকণ্ঠকে বলেছেন, সাক্ষী সুরক্ষা আইনটি হওয়া প্রয়োজন। আমরা এবং প্রসিকিউশন পক্ষ থেকে দুইটি প্রস্তাব স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়ে পািঠয়েছিলাম। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সেটি অনুমোদন দিয়ে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এখন কি অব্স্থায় আছে তা বলতে পারছি না। প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী এ বিষয়ে বলেছেন,সাক্ষী সুরক্ষা আইন আকারে না হলেও যে রুলস আছে সেখানে সাক্ষীদের সুরক্ষার বিষয়ে বলা আছে। ওটা পালন করা হলেই তারা (সাক্ষীগণ) সুরক্ষা পাবে । জেলা প্রশাসনগুলো এ বিষয়ে ভূমিকা রাখছে। প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম বলেছেন, আমরা আইন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবটি পাঠিয়েছি। যে সব মামলার রায় হয়েছে, যাদের বিচার চলছে, একই সঙ্গে যে মামলাগুলো ট্রাইব্যুনালে আসবে সেগুলোর সাক্ষী দেয়ার জন্য প্রায় এক হাজার সাক্ষী রয়েছে। তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখেই দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে । তদন্ত সংস্থা থেকে বলা হয়েছে, এখন রুলসে সাক্ষীদের সুরক্ষার কথা বলা হয়েছে, সেখানে শুধুমাত্র সাক্ষীকে বাড়ি থেকে আনা এবং ট্রাইব্যুনাল থেকে বাড়িতে নিরাপত্ত দেয়ার বিধান রয়েছে। সেজন্য আইসিটি এ্যাক্ট ২৫-এর সঙ্গে ‘এ’ ও ‘বি’ নতুন দুটি ধারা যোগ করার জন্য প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। প্রসিকিউশন পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই মুহূর্তে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনিক আদেশ প্রয়োজন। পরবর্তীতে স্থায়ী ব্যবস্থার জন্য পৃথক সাক্ষী সুরক্ষা আইন করতে হবে। নিরপত্তার অভাবে সাক্ষী ট্রাইব্যুনালে আসছে না। যার ফলে গুরুত্বপূর্ণ অনেক মামলায় অভিযোগ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে প্রসকিউশন পক্ষ।
×