ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বেগম জিয়া রবিবার আদালতে হাজিরা দেবেন

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ৩ এপ্রিল ২০১৫

বেগম জিয়া রবিবার আদালতে হাজিরা দেবেন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অবশেষে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে শর্তসাপেক্ষে আদালতে হাজির হতে চাইছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। বৃহস্পতিবার খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন এমন ইঙ্গিত দিলেন। আগামী ৫ এপ্রিল এই দুই দুর্নীতি মামলার শুনানির দিন নির্ধারিত রয়েছে। খন্দকার মাহবুব হোসেন নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন সবসময় আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আর পর্যাপ্ত নিরাপত্তা পেলে তিনি অবশ্যই আদালতে যাবেন। তিনি আদালতে যেতে চান। খন্দকার মাহবুব বলেন, নিরাপত্তার বিষয়ে যদি তিনি (খালেদা জিয়া) আশ্বস্ত হন, তাহলে অবশ্যই তিনি আদালতের প্রতি সম্মান দেখিয়ে হাজির হবেন। কী ধরনের নিরাপত্তা চাইছেন জানতে চাইলে খন্দকার মাহবুব বলেন, উনার জানমালের নিরাপত্তা। সংবিধানে আছে জানমালের নিরাপত্তা দেয়ার কর্তৃপক্ষ হলো সরকার... সেই ধরনের নিরাপত্তা। একজন ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী’ হিসেবে আদালতে যাওয়ার ক্ষেত্রে যে ধরনের নিরাপত্তা খালেদার পাওয়া উচিত সে ধরনের নিরাপত্তা তাকে দিতে হবে বলেও দাবি করেন তার উপদেষ্টা খন্দকার মাহবুব। এদিকে, খালেদা জিয়া আদালতে যেতে চাইলে তাকে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেয়া হবে বলে সরকারের একাধিক সূত্র জানিয়েছে। সূত্র জানায়, এর আগে এসব মামলায় শুনানির জন্য নির্ধারিত দিনে খালেদা জিয়ার জন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা ছিল, তবে তিনি তখন ইচ্ছা করেই যাননি, ৫ এপ্রিলও নিরাপত্তায় কোন ঘাটতি থাকবে না। খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, হাইকোর্টে অনাস্থার দুটি আবেদন শুনানির অপেক্ষায়। তবে এই আবেদনের সঙ্গে আদালতে যাওয়ার কোন সম্পর্ক নেই। মাহবুব আরও বলেন, কার্যালয় থেকে বের হলে তাকে (খালেদা জিয়া) রাস্তায় রাখা হবে এবং জনবিচ্ছিন্ন করা হবে, এমন আশঙ্কাও রয়েছে। কিন্তু আমি বলব, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা পেলে তিনি আদালতে যাবেন। খালেদা জিয়ার এই উপদেষ্টা বলেন, এ মামলা দুটি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমরা চ্যালেঞ্জ করে বলছি একটি টাকাও আত্মসাত করা হয়নি। আর পুলিশ যে চার্জশীট দিয়েছে সেখানেও আত্মসাতের কথা বলা হয়নি; বরং আত্মসাতের চেষ্টার কথা বলা হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত জোটের লাগাতার অবরোধ ও হরতালে গত তিনমাস ধরে গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অবস্থান করছেন খালেদা জিয়া। টানা কয়েকটি ধার্য তারিখে আদালতে অনুপস্থিত থাকায় এবং তার পক্ষে কোন আইনজীবী হাজিরা না দেয়ায় গত ২৫ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার জামিন বাতিল করে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে আদালত। এর পর গত ৪ মার্চ শুনানির জন্য নির্ধারিত দিনেও আদালতে তিনি হাজির হননি। বরং আত্মসমর্পণ না করেই ওদিন তার আইনজীবীরা পরোয়ানা প্রত্যাহারের আবেদন জানিয়েছিলেন। পরে ঢাকার তিন নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক আবু আহমেদ জমাদার প্রায় দুই ঘণ্টা শুনানির পর খালেদার পরোয়ানা প্রত্যাহারের আবেদন নথিভুক্ত রেখে আগের আদেশই বহাল থাকবে বলে আদেশ দেন এবং এই মামলার পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ৫ এপ্রিল রবিবার দিন নির্ধারণ করেন। ওই দিন আদেশের পর দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল সাংবাদিকদের বলেন, গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়ায় খালেদা জিয়া আইনের দৃষ্টিতে পলাতক। যেহেতু তিনি আত্মসমর্পণ করেননি সেহেতু তার কোন আবেদন শোনার সুযোগ আদালতের নেই। তারপরও তার পক্ষে সিনিয়র আইনজীবীরা এসেছেন। এ কারণে তাদের বক্তব্য আদালত শুনেছে। সব আবেদন আদালত নথিভুক্ত রেখেছে, গ্রহণ করেনি। কাজল আরও বলেন, খালেদার আইনজীবীরা নিরাপত্তার কথা বলে অন্য কাউকে তার পক্ষে আদালতে প্রতিনিধিত্ব করতে দেয়ার আবেদন জানালেও ‘ফৌজদারি কার্যবিধিতে এমন কোন সুযোগ না থাকায়’ দুদকের আইনজীবীরা এর বিরোধিতা করেছেন। বিচারকের প্রতি খালেদার অনাস্থার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে কাজল বলেন, বিচারক বলেছেন, তিনি এমন কোন কাজ করেননি যা এ মামলার বিচারের বিপক্ষে যেতে পারে। আর আসামিপক্ষের আইনজীবীরা উচ্চ আদালতে গেলেও অনাস্থার পক্ষে বা বিপক্ষে কোন আদেশ আনতে পারেননি এ অবস্থায় মামলার কাজ চালিয়ে যাওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। এসব বিষয় ফয়সালা করে আসার জন্যই আদালত প্রায় এক মাসের জন্য সাক্ষ গ্রহণ মুলতবি করেছে বলে দুদকের এই আইনজীবী জানান। মামলা বৃত্তান্ত চ্যারিটেবল ট্রাস্ট ॥ ২০১১ সালের ৮ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াসহ চারজনের বিরুদ্ধে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা দায়ের করেন দুর্নীতি দমন কমিশনের সহকারী পরিচালক হারুনুর রশিদ। তেজগাঁও থানার এ মামলায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের নামে ৩ কোটি ১৫ লাখ ৪৩ হাজার টাকা আত্মসাত করার অভিযোগ আনা হয় আসামিদের বিরুদ্ধে। ২০১২ সালের ১৬ জানুয়ারি খালেদা জিয়াসহ চারজনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। এ মামলার অপর আসামিরা -খালেদার সাবেক রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, হারিছের তখনকার সহকারী একান্ত সচিব ও বিআইডব্লিউটিএর নৌনিরাপত্তা ও ট্রাফিক বিভাগের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক জিয়াউল ইসলাম মুন্না এবং ঢাকার সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার একান্ত সচিব মনিরুল ইসলাম খান। এদের মধ্যে হারিছ চৌধুরী মামলার শুরু হতেই পলাতক। তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও রয়েছে। খালেদাসহ বাকি দুই আসামি জামিনে রয়েছেন।
×