ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

লাশের ওপর দিয়ে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় যেতে চান ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ৩ এপ্রিল ২০১৫

লাশের ওপর দিয়ে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় যেতে চান ॥ প্রধানমন্ত্রী

সংসদ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা শেখ হাসিনা বলেছেন, বিএনপি নেত্রী হচ্ছেন ধ্বংসের রানী। উনি শুধু ধ্বংস করতেই জানেন। আমরা সৃষ্টি করছি, উনি ধ্বংস খেলা খেলছেন। দেশের মানুষের সঙ্গে প্রতারণা ও সর্বনাশ করতে জানেন। মানুষের লাশের স্তূপের ওপর দিয়ে খালেদা জিয়া ক্ষমতায় যেতে চান। কিন্তু দেশের জনগণ তা কোনদিনই হতে দেবে না। এ ধরনের অমানবিক কাজ যারা করতে পারে তাদের দেশের মানুষ মেনে নেবে না, বাংলাদেশের মাটিতে তাদের স্থান হবে না। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে ‘ব্যর্থ নেত্রী’ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, উনি (খালেদা জিয়া) সরকার পরিচালনা করতেও ব্যর্থ হয়েছেন, আন্দোলনেও সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন। আর এই ব্যর্থতার আক্ষেপ থেকে থেকেই বিএনপি নেত্রী দেশের মানুষের বিরুদ্ধে জিঘাংসার পথ বেছে নিয়েছেন। জনসমর্থন না পাওয়ার আক্রোশ থেকেই উনি দেশের মানুষকে পুড়িয়ে পুড়িয়ে হত্যা করছেন। রাজনীতি যদি দেশের জনগণের কল্যাণে হয়, তবে উনি সেই দেশের মানুষকেই কীভাবে পুড়িয়ে হত্যা করতে পারেন? এটা কোন ধরনের রাজনীতি? খালেদা জিয়ার এই ধ্বংসাত্মক রাজনীতি দেশের জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে। স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সমাপনী বক্তব্যে রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। প্রায় এক ঘণ্টা ২০ মিনিটের দীর্ঘ বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী দেশের সর্বশেষ রাজনীতি, বিএনপি-জামায়াত জোটের নাশকতা-সহিংসতার সমালোচনা এবং সরকারের সফলতা দিকটি বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন। বিএনপি-জামায়াত জোটের ধ্বংসাত্মক কর্মকা-ের কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজনীতির নামে যিনি দেশের মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেন, মানবতাবিরোধী কর্মকা- করেন, সেই নেত্রীর (খালেদা জিয়া) সঙ্গে কোন বিবেকবান মানুষ থাকতে পারে না। শত নাগরিকের নামে যারা তৎপরতা চালাচ্ছেন তাদের হৃদয়ে এত দগ্ধ মানুষের আর্তনাদ, মৃত্যুও কী নাড়া দেয় না। তারা কীভাবে মানুষকে পুড়িয়ে হত্যার জঘন্য রাজনীতিকে সমর্থন করেন? তিনি বলেন, বিএনপির নেত্রীর আহ্বানে কেউ সাড়া দেয় না, ন্যূনতম জনসমর্থন নেই। বিএনপি নেত্রী হুকুম দেন, মন্ত্রীর লোভ দেখান- তবুও তার দল ও দলের নেতারা নড়ে না। এটা কার দোষ? জনগণ ও তার দলের নেতারাই বিএনপির নেতার নির্দেশ শুনে না, সেই আক্রোশ থেকেই জনগণের ওপর প্রতিশোধ নিচ্ছেন। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার কঠোর সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সব ক্ষেত্রেই ব্যর্থ বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া। সরকার থেকেও ব্যর্থ হয়েছেন, এখনও ব্যর্থ হয়েছেন। সব ক্ষেত্রে ব্যর্থ হলেও তিনি (খালেদা জিয়া) সফল হয়েছেন হত্যা, দুর্নীতি, নিজের, পুত্র ও নেতাদের হাজার হাজার কোটি টাকার অর্থ-সম্পদ গড়ে তুলতে, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হত্যা, সারাদেশে বোমা ও গ্রেনেড হামলা, জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাসবাদ সৃষ্টি করতে। ক্ষমতায় থেকে মানুষের গ্রাস কেড়ে নিয়ে বিএনপি নেত্রী ও তার দুই পুত্র আঙ্গুল ফুলে কলাগাছে পরিণত হয়েছেন। হাওয়া ভবন খুলে দুর্নীতি আর খোয়াব ভবন খুলে ফুর্তি করার ক্ষেত্রেও বিএনপি নেত্রীর দল সফল হয়েছেন। ক্ষোভ প্রকাশ করে সংসদ নেতা বলেন, আমরা দিনরাত পরিশ্রম করে অর্থনীতিসহ দেশের উন্নয়ন করে যাচ্ছি, সারাবিশ্বে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। আর দেশের এই উন্নয়নকে ধ্বংস করতেই ষড়যন্ত্রে নেমেছেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, সৃষ্টির সেরা জীব হচ্ছেন মানুষ। সেই মানুষকে কেউ কী এমনভাবে গায়ে পেট্রোল দিয়ে আগুনে পুড়িয়ে মারতে পারে? এত মানুষকে হত্যা করেও বিএনপি নেত্রীর এতটুকু অনুতাপ বা দুঃখবোধ নেই। সাংবাদিক সম্মেলনেও এত পোড়া মানুষের কথা একবারও বললেন না। তিনি বলেন, ক্ষমতায় থাকতে বিএনপি নেত্রীসহ তার দলের নেতারা এতই অর্থ-সম্পদ গড়ে তুলেছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এফবিআই এজেন্টকে বিপুল অঙ্কের টাকা দিয়ে ভাড়া করেছে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে। কিন্তু সেই ষড়যন্ত্র ধরা পড়েছে, মার্কিন আদালতে বিএনপি নেতার জেল হয়েছে। শুধু এখানেই নয়, এফবিআই সাক্ষী দিয়েছে বিএনপি নেত্রীর দুই পুত্র কত অর্থ-সম্পদ বিদেশে পাচার করেছে। দেশের ইতিহাসে আমরাই প্রথম সিঙ্গাপুর থেকে বিএনপি নেত্রীর পুত্রদের পাচারকৃত অর্থ দেশে ফিরিয়ে এনেছি। এ প্রসঙ্গে ভারতের বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের সঙ্গে মিথ্যা ফোনালাপ এবং ছয় মার্কিন কংগ্রেসম্যানের ভুয়া বিবৃতির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষকে ধোঁকা দিয়ে বিএনপি নেত্রী বোকা বানিয়েছে। কিন্তু শুধু দেশের মানুষই নয়, বিদেশীদের নিয়েও বিএনপি নেত্রী ধোঁকাবাজি-ভাওতাবাজি ধরা পড়েছে। বিএনপি নেত্রীকে নাকি ভারতের বিজেপি সভাপতি ফোন করেছে- এটা প্রচার করা হলো। কিন্তু বিজেপি সভাপতি তা অস্বীকার করল। এমনকি মার্কিন ৬ কংগ্রেসম্যানের নামেও ভুয়া বিবৃতি দিলে ওই কংগ্রেসম্যানরা তা অস্বীকার করে নানা কথা বলেছেন। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ। স্বাধীন বাংলাদেশের জনগণের মাথা এসব ভাওতাবাজি করে নিচু ও হেট করার অধিকার বিএনপি নেত্রীকে কে দিয়েছে? বাংলাদেশের মানুষের মান-সম্মান নিয়ে খেলার অধিকারই বা তিনি কোথায় পেলেন? দেশের জনগণ এসব আর মেনে নেবে না। বিভিন্ন ভূমি অফিসে হামলার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি গোয়েন্দা সংস্থাদের নির্দেশ দিয়েছি কারা ভূমি অফিসে আগুন দিচ্ছে তাদের খুঁজে বের করতে। জড়িতদের কোন জমি থাকবে না, সরকার থেকে তাদের সকল জমি অধিগ্রহণ করে জনগণের মাঝে বিলিয়ে দেয়া হবে। বিএনপি-জামায়াতের হরতাল-অবরোধের কারণে লাখো শিক্ষার্থীর জীবন ধ্বংস হওয়ায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি নেত্রীর যত ক্ষোভই যেন দেশের নিরীহ মানুষ ও শিক্ষার্থীদের ওপর। আড়াইটি মাস শিশুরা স্কুলে যেতে পারেনি। বিএনপির নেত্রীর কারণে ও এবং এ লেবেলের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা পর্যন্ত দিতে পারেননি। এভাবে কোমলমতি শিশু-কিশোরদের শিক্ষা জীবন ধ্বংস করে বিএনপি নেত্রী কী অর্জন করতে পেরেছেন? জনসমর্থনহীন সন্ত্রাস-নাশকতা, জ্বালাও-পোড়াও ও পুড়িয়ে মানুষ হত্যা কী ধরনের রাজনীতি? মানুষের কল্যাণে রাজনীতি হলে মানুষকে এভাবে পুড়িয়ে হত্যা কেন? এদিকে বৃহস্পতিবার রাতে স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের পাঠানো অধিবেশন সমাপ্তি সংক্রান্ত আদেশ সংসদে পড়ে শোনান। অধিবেশন সমাপ্তি ঘোষণার আগে স্পীকার অধিবেশন চলাকালে দেশের পরিস্থিতি তুলে ধরে বলেন, এভাবে মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। অধিবেশন চলাকালে দেশে এক নারকীয় পরিস্থিতি চলছিল। অগ্নিসংযোগ-ভাংচুর ও পেট্রোলবোমা হামলা চালিয়ে নৈরাজ্যের সৃষ্টি করা হয়েছে। ৮৫ দিনে ১৩৮ জনকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি বলেন, আমি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে গিয়েছি। সেখানে পোড়া মানুষের দুর্বিসহ কান্না দেখেছি, যা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। গণতন্ত্র সন্ত্রাস-সহিংসতা সমর্থন করে না। এটা কারও কাছেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটা প্রতিহত করতে হবে। অতীতের মতো জনগণ সন্ত্রাস-নাশকতা রুখে দিয়ে দেশের গণতন্ত্রকে এগিয়ে নেবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। সরকার ও বিরোধী দলের উপস্থিতিতে দীর্ঘ এ অধিবেশনটি ছিল প্রাণবন্ত। তবে অতীতের মতো ছিল না ওয়াকআউট, অশ্লীল বাক্য প্রয়োগ, ফাইল ছোড়াছুড়ি কিংবা ব্যক্তি আক্রমণাত্মক কোন বক্তব্য। স্পীকার সংসদের অধিবেশন সমাপ্তি ঘোষণার আগে দুই স্বতন্ত্র সংসদ সদস্যের দেয়া ১০টি মুলতবি প্রস্তাব নাকচ করে দেন। আগামী পহেলা জুন থেকে শুরু হবে ষষ্ঠ অর্থাৎ বাজেট অধিবেশন, বাজেট পেশ করা হবে ৪ জুন। সমাপ্ত হওয়া বছরের প্রথম অধিবেশন গত ১৯ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়। সংসদের কার্যোপদেষ্টা কমিটি ৫ মার্চ অধিবেশন শেষ করার সিদ্ধান্ত নিলেও পরে মেয়াদ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন স্পীকার। বছরের সব থেকে দীর্ঘমেয়াদী এই অধিবেশনের প্রথম দিনেই সংসদে ভাষণ দেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। ওই ভাষণের ওপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাবের ওপর সাধারণ আলোচনা ছিল গত ৩৯ কার্যদিবসের মূল কার্যসূচী। বৃহস্পতিবার সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের বক্তব্য শেষে ধন্যবাদ প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।
×