ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

চাঁপাইনবাবগঞ্জে সুইসগেট বাণিজ্য

৭ হাজার একর জমি অনাবাদী

প্রকাশিত: ০৬:২১, ২ এপ্রিল ২০১৫

৭ হাজার একর জমি অনাবাদী

স্টাফ রিপোর্টার, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ॥ জেলা শহরের থানার বিপরীতে মহানন্দার ওপারে মরিচার দাড়ায় একটি সøুইসগেটের অবস্থান। ষাটের দশকে নির্মাণের পর সুইসগেটটি চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও শিবগঞ্জ অঞ্চলের বুক চিরে ভাতারমারী নামে বিশাল বিলের দুই ধারের প্রায় ১৪ হাজার একর জমিতে ইরি-বোরো চাষে নিশ্চয়তা দিয়েছিল। বর্ষা ও বন্যায় মহানন্দার পানি প্রবেশ করানোর মধ্যদিয়ে বিলে পানি ধরে রাখার নিশ্চয়তা নিশ্চিত করেছিল মরিচার দাড়া সøুইসগেট। পাশাপাশি বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও বিলে মাছ চাষের নিশ্চয়তাও পেয়েছিল বিলের দুই ধারের মানুষ। এককথায় মরিচার দাড়ার সুইসগেট নির্মাণের ফলে দুই উপজেলার কয়েক লাখ মানুষের আর্থিক অনটনের অবসান ঘটিয়ে বড়মাপের সচ্ছলতার সন্ধান পেয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে এই সুইসগেটটি কোন কাজে আসছে না। নির্মাণের পরবর্তী প্রায় ৫০ বছর কৃষকরা পুরোপুরি সুফল পেয়েছিল মরিচার দাড়া সøুইসগেটের। গেটটি নিয়ন্ত্রণ করে থাকে পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু পাউবোর এক শ্রেণীর কর্মকর্তা ও কর্মচারীর কারণে পূর্বের কোন সুফল পচ্ছে না সাধারণ কৃষকরা। বর্তমানে পাউবো বিলের পানি ভরাট করার মাধ্যমে চাষীদের উপকার, সুযোগ সুবিধা ও সেবা দেয়ার পরিবর্তে সøুইসগেটটিকে ব্যক্তি বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করায় প্রয়োজনীয় সেচের পানি বিল থেকে পাচ্ছে না কৃষকরা। ফলে ইরি-বোরোসহ অন্যান্য চাষে সেচ সুবিধা না পাওয়ার ফলে প্রায় অর্ধেক জমি অনাবাদি পড়ে থাকছে। বন্যা ও বর্ষা এলে এই সøুইসগেট দিয়ে খুবই জোরে পানি প্রবেশে গেট খোলা হয় কিন্তু তা মাছ ধরার জন্য। একই সময়ে বিলে আউশসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল থাকে। এই সময়ে কৃষকরা শত অনুরোধ করেও গেট বন্ধ রাখতে পারে না। ফলে মাছ ধরার জন্য গেট খুলে দিয়ে কৃষকের কোটি কোটি টাকার ফসল নষ্ট করা হয়। বিলটি প্রায় ১২ কিলোমিটার লম্বা হওয়ার কারণে শুকনা মৌসুমে আউশসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষ করে থাকে চাষীরা। সেই ফসলও নষ্ট করে পাউবো গেট খুলে দিয়ে। বর্ষা-বন্যা শেষ হওয়ামাত্র আবার গেট খুলে দিলে বিলের পুরো পানি বেরিয়ে মহানন্দায় মিশে যায়। পানি বের করার মূলেও মাছ ধরা। একটি বিশেষ মহল এই সøুইসগেটের মাধ্যমে মাছ বাণিজ্য করে থাকে। এই বিশেষ মহলটির সঙ্গে টাকার বিনিময়ে হাত মিলিয়েছে পাউবোর স্টাফরা। এসব অবৈধ কর্মকা-ের কারণে বর্তমানে বিলটি একেবারে পানিশূন্য হয়ে পড়েছে। ভরাট বিলের পানি বের করে দেয়ার কারণে এই পানিশূন্যতা। ফলে এই বোরো মৌসুমে চাষীরা সেচকাজে বিল থেকে কোন পানি পাচ্ছে না। সারাবছর পানি না থাকায় কমেছে মাছের চাষ। সরকার এই বিল নিলামে ডাক দিয়ে বিশাল অঙ্কের রাজস্ব পেয়ে থাকত। প্রায় এক যুগের অধিককাল ধরে এই বিল থেকে সরকার আকাক্সিক্ষত রাজস্ব পাচ্ছে না। বর্তমানে সøুইসগেটের দুই ধারে যেসব ক্যানেল ছিল তা শুকিয়ে গেছে। এককথায় পানিশূন্য। এসব ক্যানেলের মধ্যদিয়ে নদীর পানি সøুইসগেটের মাধ্যমে বিলে প্রবেশ করত। পানিশূন্য খাড়ি পাউবোর কিছু অসাধু কর্মচারী অবৈধ লিজ দিয়েছে। তারা খাড়ির তলদেশে বোরো আবাদ করছে। বিশাল বিলের দুইধার ও মধ্যে প্রায় ১০টি ইউনিয়নের কয়েক হাজার কৃষক জমি চাষ করত। তারা সেচের অভাবে জমি চাষ করতে না পারায় বেকার হয়ে পড়েছে। এসব কৃষকের দাবি মরিচার দাড়ার সøুইসগেটটিকে পূর্বের অবস্থায় আনার। তবেই তারা আবার বিলে চাষবাদ করতে পারবে। বিধায় কৃষকদের দাবি পূরণে এই সøুুইস গেট থেকে পাউবোর অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একেবারে উচ্ছেদ করতে হবে। তবেই রাহুমুক্ত হবে বিলে পানি প্রবেশের সুইসগেটটি।
×