ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কামারুজ্জামানের রিভিউর শুনানি পেছাল ৫ এপ্রিলে

প্রকাশিত: ০৫:৪৪, ২ এপ্রিল ২০১৫

কামারুজ্জামানের রিভিউর শুনানি পেছাল ৫ এপ্রিলে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াত নেতা মোহাম্মদ কামারুজ্জামানকে ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদ- বহাল রেখে সুপ্রীমকোর্টের দেয়া রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন শুনানি আবারও পেছাল। আসামিপক্ষের আইনজীবীদের সময়ের আবেদনে সাড়া দিয়ে বুধবার প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহার নেতৃত্বাধীন চার বিচারপতির আপীল বেঞ্চ এ আবেদনের শুনানি আগামী ৫ এপ্রিল পুনর্নির্ধারণ করেছেন। বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন বিচারপতি মোঃ আবদুল ওয়াহহাব মিঞা, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক। বুধবার সকাল ৯টা ২০ মিনিটে কার্যতালিকার ৪ নম্বরে থাকা কামারুজ্জামানের রিভিউ আবেদনটি শুনানির জন্য আসলে আসামিপক্ষের এ্যাডভোকেট অন রেকর্ড জয়নুল আবেদীন তুহিন আদালতে বলেন, ‘আমাদের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন অসুস্থ। তিনি হাসপাতালে। তাই আমরা সময় চাচ্ছি।’ এ সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, হাসপাতালে? পরে জয়নাল আবেদীন বলেন, এখন বেরিয়ে গেছেন। এ সময় ওই আইনজীবীকে উদ্দেশ করে বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, আপনারা কি সর্বোচ্চ আদালতের সঙ্গে তামাশা করছেন? আমি নিজে গতকাল রাতে (মঙ্গলবার) তাকে (খন্দকার মাহবুব হোসেন) একাত্তর টেলিভিশনে সিটি নির্বাচনের বিষয়ে প্রেস ব্রিফ্রিং করতে দেখেছি। এত বড় একটা মিথ্যা কথা কিভাবে বলতে পারলেন সর্বোচ্চ আদালতে দাঁড়িয়ে? বিচারপতি মানিক আইনজীবীকে উদ্দেশ করে আরও বলেন, এটা তো দিনদুপুরে ডাকাতির মতো। এত বড় একটা স্পষ্ট মিথ্যা বলতে আপনার একটুও বাধল না? জবাবে আইনজীবী জয়নাল আবেদীন বলেন, এটা আমার প্রতি ইন্সস্ট্রাকশন। এরপর বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী আইনজীবীকে উদ্দেশ করে বলেন, আপনি নিশ্চয়ই জানেন তিনি অসুস্থও না, হাসপাতালেও না। সর্বোচ্চ আদালতের সঙ্গে এ ধরনের মিথ্যাচার সম্পূর্ণরূপে নির্লজ্জ এবং কোন অবস্থায়ই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আপনারা সর্বোচ্চ আদালতকে মিথ্যাচার দিয়ে প্রতারিত করছেন। এরপর এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম দাঁড়িয়ে বলেন, এই তো পরশু দিন (সোমবার) খন্দকার মাহবুব হোসেন বার কাউন্সিলের একটি সভায় সভাপতিত্ব করেছেন। সুতরাং তিনি অসুস্থ এ কথা সত্য হতে পারে না। আর তাদের আসল উদ্দেশ্য এ মামলার শুনানি দির্ঘায়িত করা। এরপর সব কিছু বিবেচনা করে প্রধান বিচারপতি সিনহা তাদের চার সপ্তাহের মুলতবি আবেদনে আংশিক সাড়া দিয়ে আগামী ৫ এপ্রিল রবিবার এ রিভিউ আবেদনের শুনানির জন্য দিন ঠিক করেন। কামারুজ্জামানের আইনজীবী জয়নাল আবেদীন এ সময় এক সপ্তাহ সময় চাইলেও আদালত রবিবারই শুনানির দিন রাখে। মঙ্গলবার এ মামলায় চার সপ্তাহ সময় চেয়ে আবেদন জমা দেন জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামারুজ্জামানের আইনজীবীরা। এর আগে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বে চার বিচারপতির আপীল বেঞ্চ গত ৯ মার্চ আসামিপক্ষের সময়ের আবেদন মঞ্জুর করেই ১ এপ্রিল শুনানির দিন ঠিক করে দিয়েছিল। সে অনুসারে রায় পুনর্বিবেচনার এ আবেদন শুনানির জন্য আপীল বিভাগের বুধবারের কার্যতালিকায় আসে। এর আগে গত ৯ মার্চের শুনানিতেও খন্দকার মাহবুবের ‘ব্যক্তিগত অসুবিধার’ কথা উল্লেখ করে সময় নিয়েছিল আসামিপক্ষ। রিভিউ শুনানিতে আসামিপক্ষকে সময় দেয়ার বিষয়ে সেদিন শুনানিতে বিরোধিতা করেন এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। পরে আদালত আর সময় দেয়া হবে না জানিয়ে দিয়েই ওই দিন সময় আবেদন মঞ্জুর করেছিলেন। গত বছরের ৩ নবেম্বর আপীল বিভাগের এই বেঞ্চই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেয়া ফাঁসির রায় বহাল রাখেন। ২০১৩ সালের ৯ মে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কামারুজ্জামানকে সর্বোচ্চ সাজার আদেশ দেন। একাত্তরে ময়মনসিংহের আল বদর নেতা কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় এসেছে শেরপুরের নালিতাবাড়ি উপজেলার সোহাগপুরে ১২০ জন পুরুষকে ধরে নিয়ে হত্যার দায়ে। জামায়াতে ইসলামীর আজকের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামান হলেন দ্বিতীয় ব্যক্তি, যার সর্বোচ্চ সাজার রায় কার্যকরের আগে রিভিউয়ের পর্যায়ে এসেছে। আপীলের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের পর গত ১৯ ফেব্রুয়ারি তার মৃত্যু পরোয়ানায় সই করেন ট্রাইব্যুনাল-২ এর তিন বিচারক। এরপর মৃত্যু পরোয়ানা পাঠিয়ে দেয়া হয় কারাগারে, কামারুজ্জামানকে তা পড়ে শোনানো হয়। মৃত্যু পরোয়ানা জারির চতুর্দশ দিনে গত ৫ মার্চ আপীল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই রিভিউ আবেদন জমা দেন কামারুজ্জামানের আইনজীবী জয়নাল আবেদিন তুহিন। ৪৫ পৃষ্ঠার এই আবেদনে ৪৪টি যুক্তি দেখিয়ে কামারুজ্জামানের খালাস চাওয়া হয়। গত ৮ মার্চ আপীল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী রিভিউ আবেদনটি শুনানির দিন ধার্য করার জন্য আপীল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন।
×