ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দক্ষিণে হেভিওয়েট প্রার্থী আব্বাস-খোকন, উত্তরে বাদ মিন্টু

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ২ এপ্রিল ২০১৫

দক্ষিণে হেভিওয়েট প্রার্থী আব্বাস-খোকন, উত্তরে বাদ মিন্টু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের প্রথম দিনেই ঢাকা উত্তরের বিএনপি সমর্থিত একমাত্র প্রার্থী আব্দুল আউয়াল মিন্টুর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। মিন্টুর মনোনয়নপত্রের সমর্থনকারী আব্দুর রাজ্জাক সংশ্লিষ্ট এলাকার ভোটার না হওয়ায় উত্তরের রিটার্নিং কর্মকর্তা শাহ আলম মনোনয়নপত্র বাতিল বলে ঘোষণা করেন। তবে রিটার্নিং কর্মকর্তার এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপীল করবে বলে জানিয়েছেন মিন্টুর আইনজীবী ব্যারিস্টার আনিসুর রহমান। এদিকে ঢাকা দক্ষিণে মেয়র পদে বিএনপির সাবেক সাংসদ ও যাবতজীবন কারাদ-প্রাপ্ত নাসির উদ্দিন পিন্টুর মনোনয়নপত্র বাতিল করে দেয়া হয়েছে। তার হলফনামায় মামলা সংক্রান্ত তথ্য যথাযথভাবে উল্লেখ না থাকায় দক্ষিণের রিটার্নিং কর্মকর্তা মিহির সারোয়ার মোর্শেদ। এদিকে মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের প্রথম দিনে মেয়র পদে ঢাকার দুই সিটির ৫ জনের প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে। ফলে এ দুই সিটিতে ৪২ জন প্রার্থী নির্বাচনে থাকছেন। অপর দিকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে দাখিলকৃত আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী আজম নাসির উদ্দিন এবং বিএনপি সমর্থিত মঞ্জুর আলমসহ ১২ জনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেছে রিটার্নিং কর্মকর্তা আব্দুল বাতেন। তবে ১ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়া প্রথম দিনে ১২ কাউন্সিলরের মনোনয়নপত্র বাতিল করে দিয়েছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। সিটি কর্পোরেশন আইনবিধিমালায় ১২ এক ধারায় উল্লেখ করা হয়েছে, ‘মেয়র পদে নির্বাচনের উদ্দেশ্যে সংশ্লিষ্ট সিটি কর্পোরেশনের অন্য কোন ভোটার মেয়র নির্বাচিত যোগ্যতাসম্পন্ন যে কোন ব্যক্তির নাম প্রস্তাব করিতে বা অনুরূপ কোন প্রস্তাব সমর্থন করিতে পারিবেন।’ আইনের এ বিধান বলে প্রস্তাবকারী বা সমর্থনকারীকে অবশ্য সংশ্লিষ্ট এলাকার ভোটার হওয়ার কথা বলা হয়েছে। যদিও মিন্টুর পক্ষ থেকে প্রার্থিতা বাতিলের বিরুদ্ধে আপীলের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু আইন অনুযায়ী তার প্রার্থিতা বৈধ হওয়ার কোন সুযোগ নেই বলে জানা গেছে। ফলে উত্তরে বিএনপির সমর্থিত একমাত্র প্রার্থীর নির্বাচনের অংশ নেয়ার আর কোন সুযোগ থাকছে না। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জে অব সাখাওয়াত হোসেন বলেন, প্রার্থীর সমর্থনকারীর ভোটার তালিকায় নাম না থাকা এটি একজন প্রার্থীর চরম গাফিলতি। তবে সংশ্লিষ্ট সমর্থনকারী যদি তার ভোটার স্থানান্তরের আবেদন করে থাকেন সে ক্ষেত্রে হয়ত তার প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। আর যদি তিনি এ ধরনের কোন আবেদন না করে থাকেন তাহলে প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে দেখতে হবে তিনি এ বিষয়ে কোন আবেদন করেছেন কিনা। তবে সাখাওয়াত হোসেন এ বিষয়ে আরও বলেন, নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করার জন্য কমিশনের যথেষ্ট ক্ষমতা রয়েছে। তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার তফসিল ঘোষণার দিন উল্লেখ করেন যারা ভোটার ট্রান্সফারের জন্য আগে আবেদন করেছেন তাদের আবেদন কেবল বিবেচনা কর হবে। কিন্তু তফসিল ঘোষণার পর এ ধরনের আবেদন আর গ্রহণ করা হবে না। আইন অনুযায়ী একজন প্রার্থীর পক্ষে একাধিক মনোনয়নপত্র দাখিলের সুযোগ রয়েছে। সেক্ষেত্রে ভিন্ন ভিন্ন সমর্থক ও প্রস্তবকের প্রয়োজন হয়। একাধিক মনোনয়নপত্র দাখিল করা হলে কোন একটি মনোনয়নপত্র বৈধ হলে কোন প্রার্থীর প্রার্থিতা বৈধ ঘোষণা করা হয়। কিন্তু মিন্টুর ক্ষেত্রে মাত্র একটি মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও তা দাখিল করা হয়েছে। মিন্টুর পক্ষে তার ছেলে গত ২৯ মার্চ মনোনয়নপত্র জমা দেন। একই দিনে তার বড় ছেলে তাবিথ এম আউয়াল মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে আইনজীবীর মাধ্যমে তা জমা দেন। বাছাইয়ে তার মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। এদিকে প্রাথমিক বাছাইয়ে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী আব্দুল আউয়াল মিন্টুর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যাওয়ায় বিকল্প হিসেবে বিএনপিকে এখন এ সিটির অন্য প্রার্থী সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব বদরুদ্দোজা চৌধুরী ছেলে মাহী বি চৌধুরী অথবা আব্দুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে তাবিথ এম আউয়ালের কথা চিন্তা করতে হবে। তবে বিএনপির সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছেম আপীলে মিন্টুর প্রার্থিতা বাতিল হয়ে গেলে এ দুজনের মধ্য থেকে একজনকে বেছে নেয়া হতে পাবে। তবে মাহী বি’র সঙ্গে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমানের সঙ্গে আগে থেকেই বিরোধ রয়েছে। এ কারণে বিএনপির একটি অংশ চাইলেও শেষ পর্যন্ত মাহী বি চৌধুরী বিএনপির সমর্থন পান কিনা তা নিয়েও সংশয় রয়েছে। জানা গেছে, মিন্টুর প্রার্থিতা চূড়ান্তভাবে বাতিল হলে মিন্টুর পক্ষ থেকে তার ছেলের জন্য বিএনপির চেয়ারপার্সনের কাছে সুপারিশ করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে শেষ পর্যন্ত মিন্টুর ছেলেকেই সমর্থন দেয়া হতে পারে বলে দলের নেতাকর্মীরা মনে করছেন। বুধবার ছিল ঢাকা ও চট্টগ্রামের তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দাখিলকৃত মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের প্রথম দিন। প্রথম দিনেই ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র পদে ৫ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করে দেয়া হয়েছে বিভিন্ন কারণে। এ মধ্যে ঢাকা উত্তরের মিন্টু ছাড়াও রয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ নাঈম হাসান। তিনি ঋণখেলাপী হওয়ায় তার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। ঢাকা দক্ষিণে বিএনপির নেতা পিন্টু ছাড়াও ঋণখেলাপী হওয়ায় নির্দলীয় মোঃ বাবুল সরদার চাখারী এবং আয়কর রিটার্নের কাগজপত্র জমা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় মোঃ রেজাউল করিম চৌধুরীর মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়। ঢাকার দুই সিটিতে ৫ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়ে যাওয়ায় এখন ৪২ জন প্রার্থী মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ রয়েছে। তবে নির্বাচনী আইন অনুযায়ী যাদেও মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে তারা আগামী তিনদিনের মধ্যে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের কাছে এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপীল করতে পারবেন। ঢাকা উত্তরে বিএনপি সমর্থিত আব্দুল আউয়াল মিন্টু ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ নাঈম হাসানের মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়ায় এ সিটি মেয়র পদে ১৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে চূড়ান্তভাবে কতজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন তা জানা যাবে ৯ এপ্রিল প্রত্যাহার শেষে। উত্তরের বৈধ হওয়া ১৯ প্রার্থীর মধ্যে রয়েছেন সমর্থিত প্রার্থী আনিসুল হক, জাতীয় পার্টি সমর্থিত প্রার্থী বাহাউদ্দিন আহমেদ বাবুল, মিন্টুর ছেলে তাবিথ আউয়াল, সিপিবির আব্দুলাহ আল ক্কাফী রতন, জাসদ সমর্থিত প্রার্থী নাদের চৌধুরী, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের সাবেক উপদেষ্টা ববি হাজ্জাজ, গণসংহতির মোঃ জোনায়েদ আব্দুর রহমান সাকি, সাবেক সাংসদ সারাহ বেগম কবরী, বিকল্পধারার মাহী বদরুদ্দোজা চৌধুরী, চৌধুরী ইরাদ আহম্মদ সিদ্দিকী, মোঃ শামছুল আলম চৌধুরী, এওয়াইএম কামরুল ইসলাম, কাজী মোঃ শহীদুলাহ, মোয়াজ্জেম হোসেন খান মজলিশ, মোঃ আনিসুজ্জামান খোকন, মোঃ জামান ভূইয়া, শেখ শহিদুজ্জামান, শেখ মোঃ ফজলে বারী মাসউদ ও মোস্তফা কামাল আজাদীর মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে বিএনপি নেতা নাসিরউদ্দিন আহমদ পিন্টুসহ তিনজনের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেছেন রিটার্নিং। বাকি ২৩ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন, আওয়ামী লীগ সমর্থিত সাঈদ খোকন, বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস, আব্দুস সালাম ও আসাদুজ্জামান রিপন, জাতীয় পার্টি সমর্থিত মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন, মোঃ আকতারুজ্জামান ওরফে আয়াতুলাহ, মোঃ আব্দুল লালেক, জাজিদুর রহমান, আবু নাছের মোহাম্মদ মাসুদ হোসাইন, বাহরানে সুলতান বাহার, শাহীন খান, দিলীপ ভদ্র, শহীদুল ইসলাম, শফিউলাহ চৌধুরী, আব্দুর রহমান, বজলুর রশীদ ফিরোজ, রিয়াজউদ্দিন, মশিউর রহমান, ইমতিয়াজ আলম, সাবেক সাংসদ গোলাম মওলা রনি, আয়ুব হোসেন ও কাজী আবুল বাশারের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। চট্টগ্রাম ॥ এদিকে চট্টগ্রামে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়মী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীসহ ১২ জনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। যাদের মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন আন্দোলনের প্রার্থী সদ্য বিদায়ী মেয়র এম মনজুর আলম, নাগরিক কমিটির প্রার্থী ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য সোলায়মান আলম শৈঠ রয়েছেন। বিএনএফের আরিফ মঈনুদ্দীন, গাজী মোঃ আলাউদ্দিন, মজিবুল হক শুক্কুর, ওয়ায়েস হোসেন ভূঁইয়াও, আবুল কালাম আজাদ, শফিউল আলম, সৈয়দ সাজ্জাদ জোহা, সাইফুদ্দিন আহমেদ রবি এমএ মতিন। তবে মেয়র প্রার্থী ফোরকান চৌধুরী বেঁধে দেয়া সময়সীমার মধ্যে কাগজপত্র জম দিতে না পারায় তার মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। গত ২০ মার্চ এ তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সম্ভাব্য প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ দিন ছিল। শেষ দিনে ঢাকা উত্তরের মেয়র পদে ২১ জন, ঢাকা দক্ষিণে ২৬ জন এবং চট্টগ্রামে মেয়র পদে ১৩ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র জমা দেন। আজ বৃহস্পতিবার বাছাইয়ের শেষ দিন। এছাড়া আগামী ৯ এপ্রিল প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন ধরা হয়েছে।
×