ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দুর্ঘটনা রাজশাহীতে ॥ প্রশিক্ষক গুরুতর আহত

প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে কো-পাইলট তামান্না নিহত

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ২ এপ্রিল ২০১৫

প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে কো-পাইলট তামান্না নিহত

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ রাজশাহীর হযরত শাহ্ মখদুম (র.) বিমানবন্দরে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে কো-পাইলট নিহত ও প্রশিক্ষক গুরুতর আহত হয়েছেন। বুধবার বেলা পৌনে তিনটার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এতে অগ্নিদগ্ধ হয়ে বিমানের মধ্যেই পুড়ে কয়লা হয়ে যান কো-পাইলট (প্রশিক্ষণার্থী) তামান্না রহমান (২২)। এ সময় দগ্ধ হয়ে ঝলসে যান একই বিমানে থাকা প্রশিক্ষক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সাঈদ কামাল। তাকে উদ্ধার করে প্রথমে রাজশাহী সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে এয়ার এ্যাম্বুলেন্সে তাঁকে ঢাকায় নেয়া হয়। নিহত কো-পাইলট তামান্না টাঙ্গাইল জেলার মীর্জপুর এলাকার ডাঃ আনিসুর রহমানের মেয়ে বলে জানা গেছে। তার মরদেহ উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগে নেয়া হয়েছে। বিধ্বস্ত প্রশিক্ষণ বিমানটি বাংলাদেশ ফ্লাইং একাডেমি এ্যান্ড সিভিল এ্যাভিয়েশন লিমিটেডের। এ ঘটনায় ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। রাতে আহত প্রশিক্ষককে উন্নত চিকিৎসার স্বার্থে ঢাকায় সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। রাজশাহী সিভিল এ্যাভিয়েশনের সিনিয়র উপপরিদর্শক এনামুল কবির ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, এস-২ এডিআই প্রশিক্ষণ বিমানটি কো-পাইলট ও প্রশিক্ষককে নিয়ে উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরই বিমানবন্দরের রানওয়ে থেকে ১৫-২০ হাত দূরে বিকট শব্দে আছড়ে পড়ে। এ সময় সঙ্গে সঙ্গে পুরো বিমানে আগুন ধরে যায়। বিমান বিধ্বস্তের বিকট শব্দ শুনে রানওয়ের সীমানা প্রাচীরের ওপারের পাশে পবার চালিকি পাড়া এলাকায় থাকা ভ্যানচালক মোঃ ডাবলু ও অটোরিকশা চালক লুৎফুর রহমান দেয়াল টপকে রানওয়ের ভেতরের এলাকায় প্রবেশ করেন। তাঁরা প্রথমে দেখতে পান, আগুন ধরে যাওয়া বিমানের ভেতর দগ্ধ হয়ে যাওয়া প্রশিক্ষক লফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সাঈদ কামাল তাদের হাতের ইশারায় বাঁচানোর অনুরোধ করছিলেন। তবে আগুনের তাপের কারণে ওই দুই ব্যক্তি তাঁর কাছে পৌঁছতে পারেননি। পরে সাঈদ কামাল বিমানের জানালার কাচ ভেঙে বেরিয়ে এলে ওই দু’জন তাঁকে টেনে বের করে আনেন। পরে মাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে সাঈদ কামাল গায়ের আগুন নেভান। প্রায় ২০ মিনিট পর ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান এবং বিমানের আগুন নেভান। তবে তামান্নাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। বিমানের মধ্যে তার দেহ পুড়ে কয়লা হয়ে যায়। আগুন নিভে যাওয়ার পর তার পোড়া মরদেহ উদ্ধার করা হয়। বিধ্বস্ত বিমানে আগুনে বিমানটির ককপিট, পাখা, ইঞ্জিন, মূল কাঠামো পুড়ে আলাদা হয়ে গেছে। বিমানটির সামনের দুই চাকা ছিটকে প্রায় ২০ হাত দূরে পড়ে আছে। বিমানটি যে স্থানে আছড়ে পড়েছে, সেখানে মাটি দেবে গিয়ে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বিকেল চারটার দিকে ঘটনাস্থলে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক মেসবাহ উদ্দিন চৌধুরী, পুলিশ, র‌্যাব, ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা পরিদর্শন করেন। এদিকে বিমানবন্দরে বাংলাদেশ ফ্লাইং একাডেমি এ্যান্ড সিভিল এ্যাভিয়েশন লিমিটেডের নিজস্ব দমকল বাহিনী থাকলেও তাদের তৎপরতা ছিল না বললেই চলে। বিমান উড্ডয়ন ও ল্যান্ডের সময় দমকল বাহিনী স্ট্যান্ডবাই থাকার কথা থাকলেও বিমানটি বিধ্বস্তের ২০ মিনিট পর রানওয়েতে প্রবেশ করে। এ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে সিভিল এ্যাভিয়েশনের পরিচালক (ফ্লাটই সেফটি ) গ্রুপ ক্যাপ্টেন নাজমুল আনাম রাতে জনকণ্ঠকে জানান, ৫ সদস্য বিশিষ্ট এক তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তের আগে আনুমানিক কিছু বলা যাবে না। তবে ওই প্রশিক্ষণ জাহাজটি পুরোপুরিই বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। ইঞ্জিনের আগুন থেকেই এ ধরনের ক্র্যাশ হয়ে থাকে সাধারণত। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ফ্লাইং একাডেমির সভাপতি ক্যাপ্টেন মফিদুল ইসলাম খান ও সাধারণ সম্পাদক ক্যাপ্টেন আহমেদ ফজলুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, দুনিয়াব্যাপী এ জাতীয় সেসনা দিয়েই পাইলট তৈরি করা হয়। এসব ফ্লাইট যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি। এর গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন করা যাবে না। এটা স্রেফ দুর্ভাগ্যজনিত দুর্ঘটনা। কারণ ওটার প্রশিক্ষক লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সাঈদ কামাল খুবই দক্ষ। তার রয়েছে ৫ হাজার ঘণ্টা প্রশিক্ষণ উড্ডয়ন অভিজ্ঞতা। আর তামান্নার প্রশিক্ষণ প্রায় শেষ পর্যায়ে ছিল। তিনি এর আগের দিন মঙ্গলবারও ওই একই ফ্লাইট নিয়ে একাই আকাশে উড়েছেন। কাজেই এটা তারও জন্য একটা দুর্ভাগ্য ছাড়া আর কিছুই নয়। এদিকে অগ্নিদগ্ধ প্রশিক্ষক ক্যাপ্টেন শাহেদ কামালকে ঢাকায় আনা হয়। তার শরীরের ৬০ ভাগ দগ্ধ হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। বিকেল সোয়া ৫টার দিকে শাহেদকে ইয়াংওয়ানের মালিকানাধীন সেসনা-২০৮ নামের একটি প্রাইভেট প্লেনে ঢাকায় আনা হয়। পরে তাকে ঢাকা সেনানিবাসে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রসঙ্গত, এর আগে ২০১৩ সালের ২৫শে এপ্রিল বাংলাদেশ ফ্লাইং একাডেমির দুই সিটের একটি চেস্নœা ১৫২ (ঝ২-অইও) উড্ডয়ন প্রশিক্ষণ বিমান রাজশাহী বিমান বন্দরে জরুরি অবতরণ করে। অবতরণের সময় বিমানটি উল্টে প্রশিক্ষক এবং শিক্ষানবিস বিমান-চালক (পাইলট) উভয়ই সামান্য আহত হয়ে বেঁচে আসেন।
×