ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সরওয়ার আহমদ

আপনি আচরি ধর্ম অপরে শিখাও

প্রকাশিত: ০৪:১৪, ২ এপ্রিল ২০১৫

আপনি আচরি ধর্ম অপরে শিখাও

প্রায় তিন মাস ধরে ঘোষিত হরতাল এবং হরতালের নামে যানবাহন ভাংচুর, নিরীহ মানুষ পোড়ানো এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদের বিনাশসাধনসহ ককটেল এবং পেট্রোলবোমার পরিকল্পিত নর্তন দ্বারা জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির কাপালিক উল্লাসের তেজ ক্রমশ নিষ্প্রভ হয়ে আসলেও আর কতদিন তা অব্যাহত থাকবে- এ প্রশ্ন এখন সবার। সহজিয়া ভাবধারার সরল মানুষের এ প্রশ্ন উত্তরহীনভাবে ঘুরপাক খাচ্ছে দেশের প্রতিটি প্রান্তে। আন্দোলনের নামে সন্ত্রাস এবং নৈরাজ্যের ধারাবাহিকতা দিয়ে রাষ্ট্রকে যারা স্থবির করে ফেলার ছক কষেছিলেন, আম পাবলিক সেই ছকের বাইরে অবস্থান নিয়ে নির্বিঘেœ জানান দিয়েছেÑ আমরা তোমাদের আজ্ঞাবহ নই। আন্দোলনের নামে অচলায়তন রচনা কিংবা স্যাবোটাজ প্রক্রিয়া কতদিন চলবে? আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, এ দুর্বিপাক একটি পরিকল্পিত ছকের ফসল। এ ছকের মধ্যে বহুমাত্রিক কারুকাজের সমন্বয় আছে। গণতন্ত্রকে বিনাশ করার জন্য গণতান্ত্রিক উপকরণকে অপব্যবহারের মাধ্যমে সামরিক তন্ত্র কায়েমের নজির এদেশে নতুন কিছু নয়। গণআন্দোলন হচ্ছে গণতান্ত্রিক অধিকারের অংশবিশেষ। কিন্তু এ আন্দোলনের নামে যদি অস্বাভাবিক প্রেক্ষাপট তৈরি করা হয় তখন নিয়মতন্ত্র এবং সংবিধানকে তুড়ি মেরে অসংবিধানিক শক্তির অধিষ্ঠান ঘটে। কিন্তু নাট্যমঞ্চে কি একই নাটক বার বার মঞ্চস্থ হয়? কৃষি শিল্প শিক্ষাসহ সামাজিক বিভিন্ন সূচকে বাংলাদেশ যে এগিয়ে যাচ্ছে সেটি আন্তর্জাতিক মহলও স্বীকার করে নিচ্ছে। লোয়ার ডেভেলপিং কান্ট্রির ভূষণ ছেড়ে বাংলাদেশ একটি স্বনির্ভর এবং আত্মমর্যাদাসম্পন্ন দেশে উন্নীত হওয়াকে আমাদের আন্তর্জাতিক চিরবৈরী মহল মেনে নিতে পারছে না। এ অগ্রাযাত্রাকে চেপে রাখতে এই জাতশত্রুর নখর ছোবল তাই দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে। এই দেশে বসবাস করেও দেশীয় স্বাধীন বাস্তবতাকে যারা মেনে নিতে পারেনি সেই মুসলিম লীগ ও জামায়াতে ইসলামীর ঔরসজাত এবং রক্ত সম্পর্কীয়রা তাদের সাবেক প্রভুর ইঙ্গিতে ও পৃষ্ঠপোষকতায় একাট্টা হয়ে আন্দোলনের মোড়কে দেশবিনাশী তৎপরতায় মেতে উঠেছে। এক একটি রাজনৈতিক ক্রান্তিকাল দেশের মানুষকে নবতর উপলব্ধির বাতাবরণ দিয়ে যায়। এ দেশের গণআন্দোলন এবং রাজনৈতিক ব্যক্তি চরিত্রের ব্যাপারে দেশীয় জনমানুষের উপলব্ধি এবং অভিজ্ঞতা বড় কম হয়নি। যার ফলে সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ এখন রাজনৈতিক আন্দোলন থেকে সমান্তরাল দূরত্বে অবস্থান করছে। একইভাবে রাজনৈতিক নেতৃত্বের ব্যাপারেও আস্থাহীনতার বলয় ঘনীভূত হতে চলছে। গত ২০১৩ সালের আন্দোলনে কোথায় গাছ কেটে ব্যারিকেড সৃষ্টি করা হবে, কোথায় পেট্রোলবোমা মেরে মানুষ বা গরু পুড়িয়ে দেয়া হবে, সে খবর আগেভাগে জানান দেয়া হতো সাংবাদিকদের। আগাম তথ্য জেনে সাংবাদিকরা বাক্স পেটরা নিয়ে অকুস্থলে পৌঁছার পর পরই ঘটনা ঘটত। এবারের হরতাল-অবরোধ পালনকালে স্থানে স্থানে জনগণ স্বপ্রণোদিত হয়ে ককটেল ও বোমা নিক্ষেপকারীদের যখন গণপিটুনি দিতে শুরু করেছিল, তখন এক পত্রিকার শিরোনাম ছিল- বেগম জিয়ার শত দুঃসংবাদের মধ্যে একটি সুসংবাদ আছে। আর সে সুসংবাদটি হচ্ছে জনগণ আস্তে আস্তে আন্দোলনে সম্পৃক্ত হচ্ছে। বিভিন্ন পেশার মানুষ হরতাল-অবরোধে লবেজান হওয়ার পর যখন খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয় অবরোধে উদ্যত তখন এক পত্রিকায় ছাপা হলো ভিন্ন প্রতিবেদন। প্রতিবেদনে বলা হলো ম্যাডাম জিয়া আন্দোলনের শেষ নিকাশ না দেখে থামছেন না। উপসর্গকে দমিত রাখার পরিবর্তে উজ্জীবিত করাই যদি মিডিয়া এবং মিডিয়াম্যানদের উপজীব্য হয়ে থাকে, তাহলে বলার কিছু নাই। তবে জনগণকে বেকুব ঠাওরানোর কোন সুযোগ নেই। জনগণের আস্থার পাল্লায় তথাকথিত মিডিয়া এবং মিডিয়াম্যানদের ওজন বড় হাল্কা হয়ে যাচ্ছে। গত ২০১৩ সালের সন্ত্রাসী কর্মকা- যখন তুঙ্গে এবং নির্বিচারে বৃক্ষনিধনসহ মানুষ ও পশু পুড়িয়ে মারার তাণ্ডব চলছিল তখন কিছু বিতর্কিত বাক্যবাগীশ বলেছিলেন- এ সরকার আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সম্পূর্ণ ব্যর্থ। আভাসে ইঙ্গিতে তারা এই সরকারের পরিবর্তে আরও কঠোর সরকার (সামরিক শাসন) এর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরতে চেয়েছিলেন। এবারও যখন মানুষ পোড়ানোসহ জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির মহাযজ্ঞ শুরু হলো এবং সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ নিল, তখন এই বাক্যবাগীশদের মুখে এলো ভিন্ন রা। এনকাউন্টারে যখন বোমাবাজরা ধরাশয়ী হচ্ছে তখন মানবাধিকার লঙ্ঘনের অজুহাতে তাদের মায়াকান্না উথলে উঠে। পেট্রোলবোমায় নিহত মানুষের চাইতে বোমাবাজদের প্রতি তাদের দরদ উথলে উঠে। এ সমস্ত বুদ্ধিজীবীর মতলবটা কি তা হাল আমলের শিশু-কিশোররাও বুঝে নিতে পারে। সংলাপের নামে তারা টকশোতে বসে যে গলাবাজি করেন সেটিওতো সংলাপ। এই সংলাপের সঙ্গে প্রলাপের মিশেল দিয়ে তারা কি ঐকমত্যে পৌঁছতে পারেন? সহিহ্ বাক্য আছে- আপনি আচরি ধর্ম অপরকে শিখাও। লেখক : প্রাবন্ধিক
×