ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিশ্বকাপ ফাইনাল

প্রকাশিত: ০৬:১৪, ৩১ মার্চ ২০১৫

বিশ্বকাপ ফাইনাল

১৯৮৭, ১৯৯৯, ২০০৩ ও ২০০৭ সালের পর এবারও বিশ্বকাপ শিরোপা জিতেছে অস্ট্রেলিয়া। বিশ্ব ক্রিকেটের অন্যতম পরাশক্তি অস্ট্রেলিয়া টুর্নামেন্টের শ্রেষ্ঠ দল হিসেবেই এই সাফল্য ঘরে তুলল। বলা চলে প্রতিবেশী প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ডকে এক রকম উড়িয়ে দিয়ে নিজেদের পঞ্চমবারের শিরোপা জিতে তারা। এর আগে ছয়বার বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলে চারটিতে জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ ফাইনালে ওঠা নিউজিল্যান্ডের শিরোপা জয়ের স্বপ্ন অধরাই রয়ে গেল। রবিবার শিরোপা নির্ধারণী এই ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে ১৮৩ রানে গুটিয়ে দিয়ে ৭ উইকেটে জয় তুলে নেয় মাইকেল ক্লার্কের দল। আট-আটটি ম্যাচ টানা জিতে বিশ্বকাপের একাদশ আসরের ফাইনালে পা রাখে নিউজিল্যান্ড। সবাই ভেবেছিল, এবার শিরোপাটা তাদের ঘরেই যাবে। কিন্তু ফাইনালে খুঁজে পাওয়া যায়নি প্রত্যাশিত সেই নিউজিল্যান্ডকে। তবে ফাইনাল ম্যাচ বাদ দিলে সামগ্রিকভাবে নিউজিল্যান্ডকেই সেরা দল বলা যায়। পুরো টুর্নামেন্টে তারা অসাধারণ খেলেছে। বিশেষ করে ঘরের মাঠে গ্রুপপর্ব থেকে সেমিফাইনাল পর্যন্ত প্রতিটি ম্যাচেই রাজত্ব করেছে নিউজিল্যান্ড। কিন্তু ঘর থেকে বাইরে এসে সে রাজত্ব ধরে রাখতে পারল না তারা। ক্রিকেট বিশ্বের ১৪টি দেশ নিয়ে ১৪ ফেব্রুয়ারি শুরু হয় বিশ্বকাপের এই আসর। নিউজিল্যান্ড-শ্রীলঙ্কার ম্যাচের মধ্য দিয়ে পর্দা ওঠে ২০১৫ বিশ্বকাপ ক্রিকেটের। ২৯ মার্চ নিউজিল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া ফাইনাল ম্যাচের মধ্য দিয়ে পর্দা নামে এই ক্রিকেট মহাযজ্ঞের। নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার ১৩টি ভেন্যুতে এবারের এই বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়। এই বিশ্বকাপে বেশ কিছু বিশ্বরেকর্ড হয়েছে। এর মধ্যে ব্যাট হাতে নিউজিল্যান্ডের মার্টিন গাপটিলের অপরাজিত ২৩৭ রান বিশ্বকাপের এক ইনিংসে সর্বোচ্চ রান সংগ্রহের রেকর্ড। অবশ্য জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ২১৫ রান করে বিশ্বকাপে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিস গেইল। শ্রীলঙ্কার সাঙ্গাকারা টানা চার ম্যাচে সেঞ্চুরি করে গড়েন নতুন বিশ্বরেকর্ড। বাংলাদেশের মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ টানা দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি করে ১৯৯৬ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার মার্ক ওয়াহর রেকর্ড স্পর্শ করেন। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৪১৭ রান তুলে অস্ট্রেলিয়া বিশ্বকাপে দলীয় সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড গড়ে। এবার পুরো টুর্নামেন্টে ৩৮টি সেঞ্চুরি হয়েছে। যা যে কোন বিশ্বকাপে সর্বাধিক সেঞ্চুরি। শুধু রেকর্ডই নয়, এই বিশ্বকাপে ছিল কিছু বিতর্কও। গ্রুপপর্বে অস্ট্রেলিয়া-ইংল্যান্ডের মধ্যকার ম্যাচে জেমস এ্যান্ডারসনকে রান আউটের সিদ্ধান্ত দেয়ার পরপরই খেলার সমাপ্তি ঘটে। বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যকার দ্বিতীয় কোয়ার্টার ফাইনালে রুবেল হোসেনের ফুল টস বলে রোহিত শর্মা স্কয়ার লেগে ক্যাচ দেন। আম্পায়ার নো বল সঙ্কেত দিলে অপরাজিত থাকেন তিনি অথচ রিপ্লেতে এটি সন্দেহাতীত আউট ছিল। একই ম্যাচে সুরেশ রায়নার একটি আউটও আম্পায়াররা নাকচ করে দেন এবং বাংলাদেশের মাহমুদউল্লাহকে বিতর্কিত আউট দেন। ফাইনালে ট্রফি বিতরণ অনুষ্ঠানে আইসিসি সভাপতিকে মঞ্চে না ডেকে নতুন বিতর্কের জন্ম দেয়া হয়েছেÑ যা কোনভাবেই প্রত্যাশিত নয়। সার্বিক বিচারে বলা যায়, এই লড়াইটা কেবল শিরোপারই নয়, মর্যাদার এবং শ্রেষ্ঠত্বেরও। কারণ দলের সঙ্গে জড়িয়ে থাকে দেশের সম্মান। এ লড়াইয়ে কোন ছাড় নেই। ব্যাট-বলের ক্রিকেটযুদ্ধে জয়ই শেষ কথা। বোলিং আর ব্যাটিংয়ের নান্দনিকতায় জমে ওঠে ক্রিকেটীয় যুদ্ধ। যুদ্ধ শেষে বিজয়ী দল জিতে নেয় ট্রফি। যে ট্রফি দেশের মুখ উজ্জ্বল করে, অর্জন করে পুরো বিশ্বের সম্মান। চার বছরের জন্য ক্রিকেটের বিশ্ব শাসন করার অধিকার পায় বিজয়ী দল। বাংলাদেশ ক্রিকেট খেলা নিয়ে যথেষ্ট উজ্জীবিত। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার যোগ্যতা অর্জন করি আমরা। এ সাফল্যের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে হলে ক্রিকেট নিয়ে আরও ভাবতে হবে। দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নেয়া দরকার। ক্রিকেটের বিষয়ে আরও দায়িত্বশীল হওয়া দরকার। দেশবাসী বিশ্বাস করে ক্রিকেট বোর্ড ও সংশ্লিষ্টরা এ ব্যাপারে সর্বাত্মক উদ্যোগ গ্রহণ করবে।
×