ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ভোলার চরফ্যাশনে তরমুজ চাষ

বাম্পার ফলন, কৃষকের মুখে হাসি- চাঙ্গা গ্রামীণ অর্থনীতি

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ৩১ মার্চ ২০১৫

বাম্পার ফলন, কৃষকের মুখে হাসি- চাঙ্গা গ্রামীণ অর্থনীতি

এআরএম মামুন ॥ তরমুজ। গ্রীষ্মকালীন রসালো ফল। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ পানি ও ভিটামিন ডি। গত ১০ শতকে ভারতবর্ষে এটির চাষ শুরু হয়। বহুদিন আগে থেকে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় তরমুজের চাষ হয়ে আসছে। দেশের অন্যান্য জেলার মতো বর্তমানে দ্বীপ জেলা ভোলার চরফ্যাশন উপজেলাও তরমুজ চাষে পিছিয়ে নেই। এখানকার তরমুজ আকারে বেশ। স্বাদেও অতুলনীয়। এখানে উৎপাদিত তরমুজ স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হচ্ছে। চরফ্যাশনের মাটি তরমুজ চাষের উপযোগী হওয়ায় সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এখানকার কৃষকরা আরও ব্যাপকহারে এ ফল চাষ করতে পারেন যা বিদেশে রফতানির মাধ্যমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব। চরফ্যাশনে এখন গ্রামের পর গ্রাম শুধুই তরমুজের সবুজ ক্ষেত। ফলন নিয়ে চলছে কৃষক পরিবারে উৎসবমুখর পরিবেশ। কেউ সেচ, কেউ কীটপতঙ্গের আক্রমণ থেকে রেহাই পেতে ওষুধ ছিটাচ্ছে। কেউ কাঁচি হাতে কাটছে তরমুজ। অনেকে ক্ষেতের ধারে তরমুজ স্তূপ করে রেখেছে। কারও ব্যস্ততা যানবাহনে ওঠানো নিয়ে, নদী ও খালের পাড়ে লোড করছে কার্গো ও ট্রলার। কেউ ব্যস্ত মহাজনের সঙ্গে দরকষাকষিতে। তরমুজ নিয়ে এ মহাব্যস্ততা দেখা গেল উপজেলার নজরুল নগর, মুজিবনগর, চরকলমী, আহাম্মদপুর, নুরাবাদ ও আবুবকরপুর ইউনিয়নের গ্রামগুলোতে। চলতি সপ্তাহ থেকে এখানে তরমুজ কাটার ধুম লেগেছে।বরিশাল, ঢাকা, চট্টগ্রাম, চাঁদপুর ও কুমিল্লা থেকে আসা ফঁড়িয়া ও পাইকাররা ভিড় করেছে গ্রামগুলোতে। অনুকূল আবহাওয়া। বাম্পার ফলন। প্রত্যাশিত বিকিকিনি। সবমিলে কৃষকের মুখেও হাসির ঝিলিক। উপজেলা কৃষি অফিস জানায়, এ বছর চরফ্যাশনে তরমুজ চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১০ হাজার ৮০০ হেক্টর জমি। কিন্তু ভাল লাভ আর অনুকূল আবহাওয়ার কারণে আবাদ হয়েছে ১১ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে। আবুবকরপুর গ্রামের তরমুজ চাষী শাহ আলম জানান, আকারভেদে একটি কার্গো ট্রলার ৪ হাজার থেকে ২০ হাজার তরমুজ বহন করতে পারে। ট্রলারগুলো বরিশালের জন্য তরমুজ প্রতি ৪ টাকা, ঢাকার জন্য তরমুজ প্রতি ১৫ টাকা ভাড়া নিচ্ছে। ট্রাকগুলো ঠিকা হিসেবে পরিবহন করছে। ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার তরমুজ নিয়ে একটি ট্রাক ৬০ হাজার টাকায় ঢাকা এবং ৬৫ হাজার টাকায় চট্টগ্রাম যাচ্ছে। ভাড়ার এ পরিমাণ গত মৌসুমের দ্বিগুণ বলে জানায় কৃষকরা। বাম্পার ফলন ও একই সঙ্গে তরমুজ কাটার ধুম পড়ায় পরিবহন মালিকরা সুযোগ নিচ্ছে। বাড়িয়ে দিচ্ছে ভাড়া। এর প্রতিকার চান স্থানীয় কৃষকরা। মুজিবনগর গ্রামের তরমুজ চাষী নুর ইসলাম জানান, ৩ কানি জমির তরমুজ ঠিকায় ৫ লাখ টাকা বিক্রি করেছেন তিনি। ঢাকা বা চট্টগ্রামের মতো বাজারে সরাসরি এই তরমুজ বিক্রি করলে ৯ থেকে ১০ লাখ টাকা বিক্রি করা যেত। এজন্য পরিবহন খরচ ও মধ্যস্বত্বভোগীর দৌরাত্ম্য কমানোর আহ্বান তার। আদর্শ চাষী উন্নয়ন সমিতির সাধারণ সম্পাদক সোলাইমান পান্নু বলেন- প্রসেসিং, হিমাগারের ব্যবস্থা, পথে পথে চাঁদা দেয়া ও প্রতারণা থেকে কৃষককে রক্ষা করা গেলে তরমুজ চাষ আরও বাড়বে। কৃষকের দাবি, এ এলাকার তরমুজ বিদেশে রফতানির ব্যবস্থা করা হলে বৈদেশিক মুদ্রা আয় সম্ভব হবে। উপজেলা কৃষি বিভাগের উদ্ভিদ সংরক্ষণ কর্মকর্তা সানাউল্লাহ আজম ও উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ঠাকুর কৃষ্ণ দাস বলেন, চরফ্যাশনের তরমুজ ৩/৪ বছর যাবত সুনাম কুড়িয়ে আসছে।প্রতিবছর চাষ বাড়ছে, ফলনও ভাল হচ্ছে। এটি এ অঞ্চলের কৃষিতে নতুন বিপ্লব।
×