ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে তথ্য

আইএসের সঙ্গে জেএমবি জঙ্গীদের যোগাযোগ ॥ নাশকতার ছক

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ৩০ মার্চ ২০১৫

আইএসের সঙ্গে জেএমবি জঙ্গীদের যোগাযোগ ॥ নাশকতার ছক

শংকর কুমার দে ॥ ভয়ঙ্কর আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠন ইসলামিক স্টেটের (আইএস) সঙ্গে যোগাযোগ করছে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) জঙ্গীরা। সিরিয়া থেকে আইএসের জঙ্গী নেতা বাংলাদেশে প্রবেশ করে থাকতে পারে বলে এমন তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। জেএমবির ৪ জঙ্গীকে রাজধানীর দক্ষিণখান থেকে গ্রেফতার করে ৬ দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে এ ধরনের তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা। চট্টগ্রামে গ্রেফতার করা জেএমবি কমান্ডার এরশাদ হোসেন মামুনকে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার টিএফআই সেলে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন টিএফআই সেলের কর্মকর্তারা। সীমান্ত অতিক্রম করে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে বর্ধমান খাগড়াগড় বিস্ফোরণের মোস্ট ওয়ান্টেড জেএমবির ৯ জঙ্গী। জেএমবির জঙ্গীরা আবার নতুন করে বড় ধরনের নাশকতার ছক তৈরি করেছে বলে জানতে পেরেছে গোয়েন্দারা। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্র এ খবর দিয়েছে। গোয়েন্দা সূত্র জানান, রাজধানীর দক্ষিণখান থেকে জেএমবির চার জঙ্গীকে গ্রেফতারের পর শনিবার ছয় দিনের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করছে গোয়েন্দারা। মাসখানেক আগে বিমানবন্দরের অদূরে দক্ষিণখানে বাসা ভাড়া নিয়ে পরীক্ষিত সদস্যদের একত্রিত করার তৎপরতা চালানোর সময়ে গ্রেনেড ও বিস্ফোরকসহ গ্রেফতার হয় জেএমবির এহসার সদস্য আঃ রাজ্জাক হায়দার ওরফে মামুন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের পর দেয়া তথ্যানুযায়ী গ্রেফতার করা হয় তার তিন সহযোগী জেএমবির সদস্যকে। মামুন ছাড়া গ্রেফতার হওয়া অপর তিনজন হলেন- জেএমবির নওগাঁ জেলার আমির ও গায়েরে এহসার সদস্য জিয়াউল বারী ওরফে ডালিম, জেএমবির দিনাজপুর জেলার আমির ও এহসার সদস্য মোঃ কোরবান আলী ওরফে মোহাম্মদ আলী ওরফে হাঞ্জালা, জেএমবির রংপুর জেলার অর্থ সম্পাদক ও গায়েরে এহসার সদস্য মোঃ মোফাজ্জল হোসেন। গ্রেফতারকৃত জেএমবির সদস্যদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জেএমবির নাশকতার এই পরিকল্পনার কথা জানতে পারে র‌্যাব। তারপর রিমান্ডে আনা হয় চার জঙ্গীকে। জিজ্ঞাসাবাদে জেএমবির জঙ্গীরা জানায়, তারা বিমানবন্দরসহ স্পর্শকাতর স্থাপনায় হামলা এবং গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের হত্যায় গোপন তৎপরতা শুরু করতে নতুন করে সংগঠিত হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদে তারা আরও জানায়, সিরিয়ার আইএস জঙ্গী সংগঠনের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছে জেএমবির জঙ্গী নেতারা। গোয়েন্দা সূত্র জানান, চট্টগ্রাম অঞ্চলের জেএমবির কমান্ডার এরশাদ হোসেন মামুনকে চট্ট্রগ্রামে গ্রেফতারের পর ঢাকায় এনে টিএফআই সেলে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জেএমবির জঙ্গী নেতা মামুনের কাছ থেকে ডায়েরিসহ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য উদ্ধার এবং আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠন আইএসের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। সিরিয়া থেকে আইএস জঙ্গী নেতাদের কেউ কেউ বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে বলেও তথ্য দিয়েছে জেএমবির এই জঙ্গী নেতা। সিরিয়া থেকে আইএস এর কোন নেতা এখানে এসেছে এবং কোথায় অবস্থান করছে, এ তথ্য উদ্ধারের চেষ্টা করে যাচ্ছে গোয়েন্দারা। তবে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে জেএমবি যে নতুন করে সংগঠিত হয়ে বড় ধরনের নাশকতা ঘটানোর ছক তৈরি করেছে জিজ্ঞাসাবাদে তা জানা গেছে। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, বাংলাদেশ থেকে জেএমবির যেসব জঙ্গী ভারতে প্রবেশ করেছিল তারা আবার সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। বাংলাদেশের গোয়েন্দাদের এ ধরনের তথ্য দিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এনআইএ। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান খাগড়াগড়ের বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় সেখানকার জেএমবির মোস্ট ওয়ান্টেড জঙ্গীদের মধ্যে ইতোমধ্যেই অন্তত ৯ জঙ্গী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। জেএমবির যেসব জঙ্গী বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে তাদের নাম পরিচয়সহ সুনির্দিষ্ট তথ্য দেয়া হয়েছে এবং জেএমবির এসব জঙ্গীদের গ্রেফতারের জন্যও অনুরোধ জানানো হয়েছে। জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, জেএমবির জঙ্গীরা নতুন করে সংগঠিত হয়ে বড় ধরনের নাশকতার ছক তৈরি করছে বলে গ্রেফতারকৃত জঙ্গীদের জবানবন্দীতে উল্লেখ করার তথ্য পাওয়া গেছে। তবে আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠন আইএসের সঙ্গে জেএমবির যোগাযোগ থাকার এবং সিরিয়া থেকে আইএসের জঙ্গী নেতা বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে এ ধরনের তথ্য পাওয়া যাওয়ার পর সত্যতা যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। তবে জেএমবিসহ জঙ্গী সংগঠনগুলোর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যেভাবে প্রকাশ্যে ও অপ্রকাশ্যে তৎপরতা চালাচ্ছে সেভাবে বাংলাদেশে জঙ্গী তৎপরতা নেই। জঙ্গী সংগঠনগুলোর মেরুদ- ভেঙ্গে দেয়া হয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগে মাঝেমধ্যে জঙ্গীরা তৎপরতার চেষ্টা করলেও বড় ধরনের কোন নাশকতা চালাতে পারবে বলে মনে হয় না।
×