ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রাজনৈতিক সঙ্কট কেটে গেছে বলে তাঁরা মনে করেন

কূটনীতিকদের ধারণা সংলাপের আর প্রয়োজন নেই

প্রকাশিত: ০৫:২৩, ৩০ মার্চ ২০১৫

কূটনীতিকদের ধারণা সংলাপের আর প্রয়োজন নেই

তৌহিদুর রহমান ॥ দেশের চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে একাধিকবার সংলাপের আহ্বান জানালেও বিদেশী কূটনীতিকরা তা থেকে সরে এসে এখন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। বিশেষ করে এই নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করে কি-না, সেটাই দেখার অপেক্ষায় তারা। আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সকল পক্ষের অংশগ্রহণের মাধ্যমে রাজনৈতিক সঙ্কট থেকে উত্তরণ সম্ভব বলেও মনে করছেন কোন কোন কূটনীতিক। তারা আশা প্রকাশ করেছেন, স্থানীয় সরকার শক্তিশালী করার লক্ষ্যে সকল পক্ষেরই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা প্রয়োজন। ঢাকায় নিযুক্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত পিয়েরে মায়াদো গণমাধ্যমকে বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখন বাংলাদেশের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের বিষয়ে পর্যবেক্ষণ করছেন। এই নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করে কি-না সেটাও তাদের পর্যবেক্ষণে রয়েছে। এছাড়া বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির পটপরিবর্তন হতে পারে বলেও তিনি মন্তব্য করেছেন। দেশের চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে কূটনীতিকরা সরকারকে সংলাপের আহ্বান জানিয়ে আসছিলেন। এছাড়া ঢাকায় অবস্থান করা ১৬ টি দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনার রাজনৈতিক সঙ্কট উত্তরণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার কাছে চিঠি দেন। তারা ওই চিঠিতে সংলাপের আহ্বান জানান। অপরদিকে কূটনীতিকদের সামনে সরকার তার অবস্থান ব্যাখ্যা করার জন্য কয়েক দফায় বৈঠক করেন। সরকারের পক্ষ থেকে সহিংসতার নিরসন ও কূটনীতিকদের নিরাপত্তা প্রদানের জন্য আশ্বাস দেয়া হয়। এরই মধ্যে গত ১৮ মার্চ নির্বাচন কমিশন থেকে দেশের তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়। সে অনুযায়ী আগামী ২৮ এপ্রিল ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচন তফসিল ঘোষণার পরে রাজনীতিতে নতুন হাওয়া বইতে শুরু করে। সে কারণে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, রাজধানী ঢাকা ও বাণিজ্যিক নগরী চট্টগ্রামের এই সিটি নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে কোন পক্ষেরই এই নির্বাচন উপেক্ষা করা সম্ভব নয়। এসব বিবেচনায় নিয়ে কূটনীতিকরাও এখন এই নির্বাচন পর্যবেক্ষণে রয়েছেন। কূটনৈতিক সূত্র জানায়, প্রশাসন বিকেন্দ্রীকরণ ও স্থানীয় সরকার শক্তিশালী করতে বিভিন্ন দেশ বাংলাদেশের সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে একযোগে কাজ করছে। আর স্থানীয় সরকার শক্তিশালী করার সঙ্গে সিটি কর্পোরেশনের কার্যক্রম ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সে কারণে মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন না হওয়ায় দাতাগোষ্ঠী হতাশায় ছিল। এখন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন দাতা দেশের কূটনীতিকদের মধ্যে প্রচ- আগ্রহ তৈরি হয়েছে। এই নির্বাচনে সকল পক্ষ অংশগ্রহণ করবে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন কূটনীতিরা। সূত্র জানায়, ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের বর্ষপূর্তিকে কেন্দ্র করে বিএনপি-জামায়াত জোটের টানা হরতাল-অবরোধ কর্মসূচীতে সাধারণ জনগণের সাড়া মেলেনি। এছাড়া এই কর্মসূচী চলাকালে প্রায় ১৩০ নিরীহ জনগণ মারা যাওয়ায় দেশে-বিদেশে ইতোমধ্যেই তা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। সে কারণে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নিয়ে কর্মসূচী প্রত্যাহারের সুযোগ গ্রহণ করাটাই এখন বিএনপির জন্য একটি বড় সুযোগ বলেও মনে করেন কূটনীতিকরা। একাধিক কূটনৈতিক সূত্র জানায়, বিএনপি থেকে নতুন করে জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানালেও তাদের এই দাবির সঙ্গে একমত নন কূটনীতিকরা। সে কারণে কোন কূটনীতিকই এখন পর্যন্ত জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে সরকারকে কোন পরামর্শ দেননি। তবে সঙ্কট উত্তরণের লক্ষ্যে সংলাপের আহ্বান জানিয়ে আসছিলেন তারা। এছাড়া বর্তমান সরকারের প্রতি তাদের আস্থা রয়েছে বলেও কূটনীতিকরা জানিয়েছেন। সিটি কর্পোরেশনের তফসিল ঘোষণার পরে বর্তমানে সকলেই এই নির্বাচনের দিকে মনোনিবেশ করেছেন। এ প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট ধীরে ধীরে কেটে যাচ্ছে বলে মনে করছেন কূটনীতিকরা। বিশেষ করে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেন্স ব্লুম বার্নিকাট বলেছেন, চলতি বছরের শুরুতে বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক সঙ্কট দেখা দিয়েছিল তা ধীরে ধীরে কেটে উঠছে। এছাড়া মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল বাংলাদেশের আর্থ-সামজিক অগ্রগতির কথা তুলে ধরে বলেছেন, নিজেদের মেধা ও যোগ্যতায় বাংলাদেশ সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে চলছে। মার্কিন সরকারের শীর্ষ কূটনীতিকদের এমন মনোভাব প্রকাশের পরে সরকার অনেকটাই এখন সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে বলে জানা গেছে।
×