ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জেএমবির কাছ থেকে আর্জেস গ্রেনেড উদ্ধারে চাঞ্চল্য

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ২৯ মার্চ ২০১৫

জেএমবির কাছ থেকে আর্জেস গ্রেনেড উদ্ধারে চাঞ্চল্য

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আর্জেস গ্রেনেড ও বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরকসহ খোদ রাজধানী থেকে জেএমবির চার সদস্য গ্রেফতারের ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছে গোয়েন্দারা। বিশেষ করে দীর্ঘ সময় পর জেএমবির কাছ থেকে আর্জেস গ্রেনেড উদ্ধারের ঘটনাটি রীতিমতো চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। গ্রেফতারকৃত জেএমবি সদস্যদের রাজধানীর দক্ষিণখান থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দায়েরকৃত মামলায় ৬ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। উদ্ধারকৃত গ্রেনেডটি চট্টগ্রাম দশট্রাক অস্ত্রের চালানের নাকি বিডিআর বিদ্রোহের সময় খোয়া যাওয়া গ্রেনেডের একটি সে বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। গ্রেনেডের উৎস জানতে প্রয়োজনে তাদের টিএফআই সেলে জিজ্ঞাসাবাদ করা হতে পারে। গত ২৬ মার্চ বৃহস্পতিবার রাত তিনটার দিকে রাজধানীর উত্তরার দক্ষিণখান থানাধীন কসাইবাড়ির পূর্ব মোল্লারটেকের প্রেমবাগান এলাকার একটি টিনশেড বাড়ি থেকে জেএমবির চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আমির এবং এহসার সদস্য আঃ রাজ্জাক হায়দার ওরফে মামুন (৩৫), নওগাঁ জেলার আমির এবং গায়েরে এহসার সদস্য জিয়াউল বারী ওরফে ডালিম (৩২), দিনাজপুর জেলার আমির ও এহসার সদস্য মোঃ কোরবান আলী ওরফে মোহাম্মদ আলী ওরফে হাঞ্জালা (৫৫) ও গায়েরে এহসার সদস্য ও জেএমবির রংপুর জেলার অর্থ সম্পাদক মোঃ মোফাজ্জল হোসেন (২২) গ্রেফতার হয়। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয় একটি আর্জেস গ্রেনেড, ৩৪টি নন-ইলেকট্রিক ডেটোনেটর, ১৪টি ইলেকট্রিক ডেটোনেটর, ৩০ মিটার করডেক্স, আড়াই কেজি বোমায় ব্যবহারের স্পিøন্টার, আধা কেজি গান পাউডার, এক কেজি পটাশিয়াম এক্সপ্লোসিভ, ৬টি বড় ককটেল, ২৪টি ছোট ককটেল, ১২টি পেট্রোলবোমা, আনুমানিক দুই কেজি কাঁচের মার্বেল, আধা কেজি সালফিউরিক এ্যাসিড, একটি ডেটোনেটর বক্স, এক বান্ডিল ইলেক্ট্রনিক তারসহ অস্ত্র প্রশিক্ষণের প্রেসি ও নাম সংবলিত বিপুল পরিমাণ জিহাদী বই। র‌্যাব সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, টিনশেড বাড়িটির মালিক বাংলাদেশ বিমানের সাবেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা আব্দুর রউফ। যদিও তিনি স্ত্রী হোসনে আরা বেগম ও তিন ছেলে-মেয়ে নিয়ে পাশেই একই ধরনের একটি আধাপাকা বাড়িতে বসবাস করেন। মাসখানেক আগে ভুয়া নাম ঠিকানা ব্যবহার করে বাসাটি ভাড়া নেয় গ্রেফতারকৃতরা। দুই কক্ষের বাসাটির একটি চৌকির নিচে উদ্ধারকৃত বিস্ফোরকগুলো ছিল। র‌্যাবের লিগ্যাল এ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান জানান, ঢাকায় জেএমবির গোপন তৎপরতা আছে। গ্রেফতারকৃতরা জেএমবির সক্রিয় সদস্য। তারা জেএমবির সাথীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। সদস্যদের কাছ থেকে সংগৃহীত চাঁদার টাকায় জেএমবি নতুন করে তৎপরতা চালাচ্ছে। রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগে ঢাকায় বড় ধরনের নাশকতা চালিয়ে জেএমবি নিজেদের ক্ষমতা জানান দেয়ার চেষ্টা করছিল। এমন পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই চলতি ১ মার্চ থেকে জব্দকৃত বিস্ফোরকগুলো সেখানে মজুদ করা হচ্ছিল। বিস্ফোরকগুলো চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আনা হয়। গ্রেনেডের উৎস জানার চেষ্টা চলছে। গ্রেফতারকৃতদের দক্ষিণখান থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। দক্ষিণখান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শামীম-অর-রশিদ মামুন জনকণ্ঠকে বলেন, গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবিরোধী আইন-২০০৯ এর ৩০১৩ সালের সংশোধনী আইনে মামলা দায়ের হয়েছে। তাদের প্রত্যেককে ১০ দিনের করে রিমান্ডের আবেদন করে ঢাকার সিএমএম আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা থানাটির উপপরিদর্শক আকতার হোসেন জনকণ্ঠকে বলেন, আসামিদের ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে ঢাকার সিএমএম আদালত। রিমান্ডে উদ্ধারকৃত বিস্ফোরক, আর্জেস গ্রেনেড ও তাদের তৎপরতা সম্পর্কে বিস্তারিত জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। প্রসঙ্গত, ২০১০ সালের ২৪ মে রাজধানীর কদমতলী থানাধীন ধনিয়া এলাকা থেকে জেএমবির আমির মাওলানা সাইদুর রহমান জাফর তিন সহযোগীসহ গ্রেফতার হয়। অভিযানে জেএমবির বোমা হামলায় ৯ পুলিশ আহত হয়। উদ্ধার হয় বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক, বোমা, গ্রেনেড। পরবর্তীতে জামায়াতের এই শীর্ষ নেতা গোয়েন্দাদের জানায়, জেএমবি মূলত জামায়াত নিয়ন্ত্রিত। জামায়াতের নির্দেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করতেই ঢাকার চারদিকে জেএমবি শক্ত ঘাঁটি গড়ে তুলছে। তিনিও দলের নির্দেশে সে কাজটিই করে যাচ্ছিলেন। সাইদুর রহমান গ্রেফতারের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তরফ থেকে জেএমবি সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ার দাবি করা হয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি ময়মনসিংহের ত্রিশালে পুলিশ হত্যা করে জেএমবির তিন জঙ্গীকে পুলিশের প্রিজনভ্যান থেকে ছিনতাই এবং পশ্চিমবঙ্গের খাগড়াগড়ে বাংলাদেশী জেএমবির সদস্যদের বোমা তৈরির কারখানায় বিস্ফোরণে হতাহতের ঘটনায় নতুন করে আলোচনায় চলে আসে জেএমবি। বাংলাদেশ ও ভারতে জেএমবির তৎপরতা থাকার বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে যায়। সর্বশেষ আর্জেস গ্রেনেড ও বিস্ফোরকসহ খোদ রাজধানী থেকেই জেএমবি সদস্য গ্রেফতারের ঘটনা রীতিমতো হইচই ফেলে দিয়েছে। স্পষ্ট হয়ে গেছে জেএমবির তৎপরতা থাকার বিষয়টি। যদিও গত বছরের ৩০ জুলাই ঢাকা থেকে জেএমবির শীর্ষ নেতা শামিন মাহফুজ ওরফে সুমন ওরফে ম্যানরিং মুরং (ছদ্মনাম) (৩৮), জাহিদুর রহমান (৩৩) ও ইসমাইল হোসেন (৩৯) তৈরিকৃত বোমা, বোমা তৈরির সরঞ্জাম ও বোমা তৈরির কলাকৌশল সমৃদ্ধ একটি ল্যাপটপসহ গ্রেফতারের পর জেএমবির তৎপরতা থাকার বিষয়টি প্রকাশ পায়। বাংলাদেশের ৪ ব্যবসায়ী জেএমবিকে অর্থায়ন করছে বলেও তারা জানায়। ইতোপূর্বে বান্দরবনের থানচীতে র‌্যাব কর্তৃক ১৫ একর জায়গার ওপর জেএমবির যে ট্রেনিং ক্যাম্পটি আবিষ্কৃত হয়, সেই ট্রেনিং ক্যাম্পের জায়গা লিজ নেয়ার টাকার যোগান দেয় চার ব্যবসায়ী। শামিন মাহফুজের মাধ্যমে থানচীতে ট্রেনিংপ্রাপ্ত প্রায় ২শ’ জঙ্গী বর্তমানে পাকিস্তান ও আফগানিস্তানে বিভিন্ন অপারেশনে আলকায়েদা ও তালেবান জঙ্গীদের সঙ্গে কাজ করছে।
×