ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কৃষিবান্ধব কর্মসূচীর কারণে উৎপাদন বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ২৯ মার্চ ২০১৫

কৃষিবান্ধব কর্মসূচীর কারণে উৎপাদন বাড়ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কৃষিবিষয়ক এক কর্মশালায় বক্তারা বলেন, কৃষকেরা এখন নিজেদের দাবী তোলে ধরার ক্ষমতা অর্জন করেছে। তারা মাটি পরীক্ষা করে জৈব সার ব্যবহারে মনোযোগী হয়েছেন। গ্রুপভিত্তিক কৃষক সমিতি গঠন করে নিজেদের সমস্যা নিজেরাই মেটানোর চেষ্টা করেছে। কৃষির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কৃষকেরা সহজেই কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন। সরকারী বেসরকারী নানামুখী কৃষিবান্ধব কর্মসূচীর প্রভাবেই দেশে দিন দিন কৃষি পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্তমান সরকার কৃষিবান্ধব সরকার, তাই তারা প্রতিনিয়তই নতুন নতুন সেবা বৃদ্ধি করে চলছে। ইতোমধ্যেই দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। এখন ভেজালমুক্ত খাদ্য উৎপাদন নিশ্চিত করাই আমাদের প্রধান লক্ষ্য। শনিবার রাজধানীর আইডিবি ভবনের অডিটরিয়াম কক্ষে কৃষিবিষয়ক আপন ‘প্রকল্প সমাপ্ত উপলক্ষে চূড়ান্ত কর্মশালা’য় বক্তারা এসব কথা বলেন। বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলে ২০১২ সালের এপ্রিলে শুরু হওয়া আপন প্রজেক্ট ওই অনুষ্ঠানে সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়। ওই প্রকল্পে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করে ইউকেএইড, ট্রেডক্রাফট, এনজিও সংস্থা গ্রামাউস, আরডিএস এবং ডেভেলপমেন্ট হোইল (ডিউ)। ট্রেডক্রাফটের কান্ট্রি ডিরেক্টর শাহেদ ফেরদৌস স্বাগত বক্তব্যে বলেন, আজ থেকে ৩ বছর আগে আপন প্রজেক্ট একটি লক্ষ্য নিয়ে যাত্রা শুরু করে। আজ এখানে এই প্রকল্পের পরিসমাপ্তি টানতে হচ্ছে। যারা এই প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তাঁরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পেরেছেন। আমরা যে যাই করি না কেন নিজের অবস্থান থেকেই দেশের দরিদ্রতা দূর করতে পারি। আপন প্রজেক্ট তার জলন্ত উদাহরণ। যে কৃষকেরা এই প্রকল্পের সঙ্গে জড়িত ছিলেন তাঁরা আরও বলীয়ান হয়ে উঠবেন এটাই আমাদের প্রত্যাশা। ইনোভেশন কনসাল্টিং প্রাইভেট লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোঃ সাদরুদ্দিন ইমরান আপন প্রজেক্টের চূড়ান্ত প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে বলেন, আমরা বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে কাজ করি। এটি আমার দেখা সার্বিকভাবে সফল একটি প্রকল্প। এই প্রকল্পের সহায়তায় কৃষকেরা টাকা জমানোর চেষ্টা করেছে। নিজেদের দাবি তোলে ধরার ক্ষমতা অর্জন করেছে। মাটি পরীক্ষা করে জৈব সার ব্যবহারে মনোযোগ দিয়েছে। গ্রুপভিত্তিক কৃষক সমিতি গঠন করার ফলে নিজেদের সমস্যা নিজেরাই মেটানোর চেষ্টা করেছে। কৃষির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কৃষকেরা সহজেই কৃষি কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পেরেছে। মূলত তাদের সচেতন করাই ছিল এই প্রকল্পের অন্যতম লক্ষ্য। আর এক্ষেত্রে এই প্রকল্প অত্যন্ত সফল। কৃষি মেলা, মাঠ দিবস, কর্মকর্তাদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের ফলে মাঠ পর্যায়ে উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পরিচালক (প্রশিক্ষণ) বণিক রাম কৃষ্ণ প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, আশা করি এই ধরনের প্রকল্প দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে পড়বে। বর্তমান সরকার কৃষিবান্ধব সরকার। কৃষকদের জন্যে সরকার সার্বক্ষণিকভাবে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে। সবার মিলিত চেষ্টায় দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। বাংলাদেশের নাম চাল রফতানিকারক দেশের তালিকায়ও উঠে এসেছে। তিনি আরও বলেন, এখন আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে পুষ্টিতে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা। নিজেদের জন্যেই ভেজালমুক্ত খাবার নিশ্চিত করতে হবে। তাই কীটনাশক ব্যবহার কমিয়ে দিতে হবে। অন্যান্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিষমুক্ত খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে। সরকারী নানা কর্মসূচীর সঙ্গে বেসরকারীভবেও আপন প্রকল্পের মতো অন্যদেরকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই। একজন আদিবাসী নারী শ্রমিক প্রকল্পের সফলতা প্রসঙ্গে বলেন, আমরা অবহেলিত ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী। আপন প্রকল্প আমাদের জাগ্রত করেছে। এই প্রকল্পে বাঙালী ও আদিবাসীদের মধ্যে কোন পার্থক্য করা হয়নি। আমরা ১১ সদস্য বিশিষ্ট দল গঠন করে সঞ্চয়ে মনোভাব পোষণ করি, যাতে অনুপ্রেরণা দিয়েছে আপন। গবাদি পশু, মাটি পরীক্ষা, গুটি ইউরিয়া প্রয়োগ, শাকসবজি চাষ করার প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ নিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। ওই অনুষ্ঠানে তিথি ক্লারা পাল্মার সঞ্চালনায় অন্যান্যের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন প্রাণী সম্পদ অধিদফতরের পরিচালক বিশ্বজিৎ ভট্টাচার্য, ডেভেলপমেন্ট হোইলের নির্বাহী পরিচালক শাহ আবদুস সালাম প্রমুখ। বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলে পরিচালিত কৃষি বিষয়ক প্রকল্প ‘আপন প্রজেক্ট’ এর মাধ্যমে প্রান্তিক পর্যায়ে কৃষকের উৎপাদন বৃদ্ধি ও সঞ্চয়ের মনোভাব সৃষ্টি করা হয়। ময়মনসিংহ ও শেরপুরের দুটি জেলার ৬টি উপজেলায় ২৬২টি কৃষি গ্রুপ গঠন করে মোট ৮১৩০ জন কৃষি শ্রমিককে এই প্রকল্পের অধীনে নানা রকম সেবা দেয়া হয়েছে। উপজেলাগুলো হচ্ছে ময়মনসিংহের দুবাউরা, ফুলপুর, হালুয়াঘাট এবং শেরপুর জেলার শেরপুর, জিনাইগাতী ও নকলা। সমাপ্তি ঘোষণার অনুষ্ঠানে মোট ১২টি আঞ্চলিক উৎপাদন সমিতিকে পুরস্কৃত করা হয়।
×