ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

খানজাহান আলীর ভিটা খনন, সুলতানী যুগের প্রত্নসম্পদ আবিষ্কৃত

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ২৮ মার্চ ২০১৫

খানজাহান আলীর ভিটা খনন, সুলতানী যুগের প্রত্নসম্পদ আবিষ্কৃত

বাবুল সরদার, বাগেরহাট থেকে ॥ হযরত খানজাহান আলীর (র) বসতভিটা ঐতিহাসিক নগর খলিফাতাবাদ খননে অমূল্য প্রতœসম্পদ পাওয়া গেছে। প্রাপ্ত প্রতœসম্পদের আলোকে প্রত্নতত্ত্ববিদরা ধারণা করছেন, তাঁরা মধ্যযুগের সুলতানী আমলের খানজাহানের ঐতিহাসিক নগর খলিফাতাবাদের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার করতে পেরেছেন। খননে চুন ও বালি মিশ্রিত করার ব্যতিক্রমধর্মী একটি আঁধার পাওয়া গেছে। এছাড়া স্থাপত্য কাঠামো ধ্বংসাবশেষের মধ্যে একটি সেপটিক ট্যাংকসহ পাকা শৌচাগার, পানি সরবরাহের কাজে ব্যবহৃত ১৭ মিটার পোড়া মাটির তৈরি পাইপ, পানি নিষ্কাশন নালা ও ইটের তৈরি কাভার্ড নালা। সুলতানী যুগে ব্যবহৃত অলংকৃত বিভিন্ন ধরনের রঙিন টালি, ফুলের নক্সা ও লতাপাতা অলংকৃত ইট রয়েছে। প্রাপ্ত এ সকল নিদর্শন সামগ্রী সপ্তাহব্যাপী সর্ব সাধারণের জন্য ষাটগম্বুজ মসজিদ প্রাঙ্গণে প্রদর্শন করা হচ্ছে। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে ১৩ লাখ টাকা ব্যয়ে মধ্যযুগের স্বীকৃত প্রতœস্থান হিসেবে সুলতানী আমলের হযরত খানজাহানের বসতভিটার খনন স্থান থেকে এ বছর সুলতানী যুগের ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরনের সৌখিন তৈজসপত্র, মৃৎশিল্প, চুন দিয়ে তৈরি স্টোন ওয়্যার, পলিক্রম ওয়্যার, স্লিপযুক্ত ওয়্যার, সেলাডন, চাইনিজ পোরসেলিন ও এগ শেল মৃৎপাত্র পাওয়া গেছে। প্রায় তিন মাস ধরে চলা এ খনন কাজে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতœতত্ত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোকাম্মেল হোসেন ভুইয়াসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪০ শিক্ষার্থী অংশ নেন। চলতি বছরে খনন কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ করেছে প্রতœতত্ত্ব অধিদফতর। নিদর্শন সামগ্রী সপ্তাহব্যপী প্রদর্শন উপলক্ষে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আলহাজ এ্যাডভোকেট মীর শওকাত আলী বাদশা এমপি। প্রতœতত্ত্ব বিভাগের ষাটগম্বুজ মসজিদের কাস্টোডিয়ান গোলাম ফেরদৌসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন প্রতœতত্ত্ব অধিদফতর খুলনার আঞ্চলিক পরিচালক মোঃ আমিরুজ্জামান, সহকারী পরিচালক একেএম সাইফুর রহমান, অধ্যক্ষ মোঃ সইফ উদ্দিন, ষাটগম্বুজ ইউপি চেয়ারম্যান শেখ আকতারুজ্জামান বাচ্চু প্রমুখ। এখান থেকে পাওয়া প্রতœসম্পদের আলোকে প্রতœতত্ত্ববিদরা ধারণা করছেন, তারা মধ্যযুগের সুলতানী আমলের খানজাহানের ঐতিহাসিক নগর খলিফাতাবাদের ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কার করতে পেরেছেন। খননের সময়ে ব্যতিক্রমধর্মী চুন-বালি মিশ্রিত করার একটি আঁধার পাওয়া গেছে। এছাড়া স্থাপত্য কাঠামো ধ্বংসাবশেষের মধ্যে একটি সেপটিক ট্যাংকসহ পাকা শৌচাগার, পানি সরবরাহের কাজে ব্যবহৃত ১৭ মিটার পোড়া মাটির তৈরি পাইপ, পানি নিষ্কাশন নালা ও ইটের তৈরি কাভার্ড নালা। সুলতানী যুগে ব্যবহৃত অলংকৃত বিভিন্ন ধরনের রঙিন টালি, ফুলের নক্সা ও লতাপাতা অলংকৃত ইট রয়েছে। প্রধান অতিথি বলেন প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরের এ খনন কাজের মধ্য দিয়ে আধুনিক খলিফাতাবাদ নগরী যেমন আবিষ্কৃত হয়েছে, তেমনি প্রায় ছয় শ’ বছরের ইতিহাস ঐতিহ্যের পাশাপাশি মহামূল্যবান অনেক প্রতœসম্পদ পাওয়া গেছে। বর্তমান সরকারের আমলে মধ্যযুগের সুলতানী আমলের বাগেরহাটে হযরত খানজাহানের ঐতিহাসিক খলিফাতাবাদ নগরের সব খনন কাজ শেষ হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এ খনন কাজের নেতৃত্বে থাকা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতœতত্ত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মোকাম্মেল হোসেন ভুইয়া জানান, প্রতœতাত্ত্বিক খনন ও অনুসন্ধান কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় ঐতিহাসিক ষাটগম্বুজ সংলগ্ন খানজাহান (র)-এর বসতভিটা প্রতœঢিবি ও ঢিবি সংলগ্ন রাস্তায় প্রতœতাত্ত্বিক বাস্তব খনন ও অনুসন্ধানে বাগেরহাট জেলায় অবস্থিত সুলতানী যুগের বিশেষ করে পনের শতকের নির্মিত বিভিন্ন স্থাপত্যিক অবকাঠামোর ধ্বংসাবশেষ ও ব্যবহার্য জিনিসপত্রাদি উদ্ধার করা হয়। যেমন- দেয়াল, মেঝে, শৌচাগার, কালভার্ট ও রাস্তা বিশেষভাবে উল্লেখ করার মতো। সুলতানী আমলের ইট দ্বারা তৈরি এসব স্থাপনা। তৈরিতে কাদামাটি ও চুন ব্যবহার করা হয়েছে। এ অর্থবছরে খননে প্রাপ্ত শৌচাগারটি খুবই নিখুঁত ও সুসজ্জিত স্থাপত্যিক কাজের নিদর্শন। স্বাস্থ্যসম্মত এ শৌচাগারটি মধ্যযুগে বাগেরহাট অঞ্চলের মানুষের উন্নত স্বাস্থ্যচিন্তার পরিচয় বহন করে। খানজাহান (র) বসতভিটা সংযুক্ত প্রাচীন রাস্তাটি উদ্ধার হওয়ায় এ অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার ঐতিহাসিক ধারণা উন্মোচিত হয়েছে। রাস্তার সঙ্গে প্রাপ্ত কালভার্টটি উন্নতমানের, যা পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য ব্যবহৃত হতো। খননে প্রাপ্ত ইটের তৈরি দেয়াল ও চুন-সুরকি দিয়ে তৈরি মেঝেগুলো খানজাহান (র)-এর সময়, তৎপূর্ব এবং পরের সময়ের উন্নত জনপথের এক স্মারক নিদর্শন বলা যায়। এ প্রতœতাত্ত্বিক খনন ও অনুসন্ধানের মাধ্যমে পোড়া মাটির তৈরি ব্যবহার্য জিনিসপত্র যেমন-থালা-বাসন, কলস, তৈল প্রদীপ, পানির ঘট, ফুলদানি, গেজড টাইলস, কালির দোয়াত, পাতিল, খেলনা প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ প্রতœসম্পদ উন্মোচিত হয়। এ উদ্ধার হওয়া তৈজসপত্রের মধ্যে কিছু কিছু জিনিসপত্র চীনা মাটির তৈরি। উদ্ধার হওয়া এসব জিনিসপত্র মধ্যযুগীয় বিশেষ করে খানজাহান (র) সময়কার ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক বলা যায়।
×