ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের নারী শিক্ষককে হয়রানির অভিযোগ ॥ গবর্নিং বডি সভাপতির অস্বীকার

মতিঝিল মডেলে ভর্তি ও শিক্ষক নিয়োগে বাণিজ্য

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ২৮ মার্চ ২০১৫

মতিঝিল মডেলে ভর্তি ও শিক্ষক নিয়োগে বাণিজ্য

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর মতিঝিল মডেল হাই স্কুল এ্যান্ড কলেজ গবর্নিং বডির বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে অবৈধভাবে দুই শতাধিক শিক্ষার্থী ভর্তির অভিযোগ উঠেছে। দুই বছরে জনপ্রতি চার থেকে পাঁচ লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে বিভিন্ন শ্রেণীতে নিয়োগ দেয়া হয়েছে অর্ধ শতাধিক শিক্ষক। কেবল তাই নয়, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠানের একজন সহকারী প্রধান শিক্ষককে দায়িত্ব পালনে বাধা দেয়ার মতো গুরুতর অভিযোগও উঠেছে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী এ নারী শিক্ষক একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। যার পুরো পরিবার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকলেও হয়রানি থেকে রেহাই পাচ্ছে না। তার কাছে খোদ গবর্নিং বডির সভাপতি চেয়েছেন ১৫ লাখ টাকা। ভর্তি বাণিজ্য, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে হয়রানিসহ নানা ঘটনা সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেছেন ভুক্তভোগীরা। ঘটনার জন্য গবর্নিং বডির সভাপতি আওয়ামী লীগ নেতা আওলাদ হোসেনকে দায়ী করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়, শিক্ষা অধিদফতর এমনকি দলের শীর্ষ নেতাদের কাছে অভিযোগ দাখিল করেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষক ও তাঁর পরিবার। ভুক্তভোগী নারী শিক্ষকের ভাই রমনা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল মনির চৌধুরী গবর্নিং বডির সভাপতির বিরুদ্ধে দলের ক্ষতি করে জামায়াতপন্থীদের ক্ষমতাশালী করার অভিযোগ এনে বলেছেন, আমার বোনকে অবৈধভাবে সরিয়ে দিয়ে সেখানে জামায়াতের লোককে বসিয়েছেন সভাপতি। আমার বোনের পদে অবৈধভাবে যাকে বসানো হয়েছে তিনি এক সময় জামায়াতের লিফলেট বিলি করতে গিয়ে ধরাও পড়েছিলেন। আমার পরিবারের কথা জেনেও সভাপতি ১৫ লাখ টাকা চেয়েছেন। ইচ্ছামতো শিক্ষকদের সরিয়ে দিয়ে তিনি তাদের প্রস্তাব দেন, টাকা দেন তাহলে চাকরিতে ফিরিয়ে আনা হবে। টাকা না দিয়ে আদালতের নির্দেশ এমনকি প্রধানমন্ত্রী বললেও কাজ হবে না বলে হুমকি দেয়া হয়েছে। এছাড়া স্থায়ীভাবে প্রধান শিক্ষক, অধ্যক্ষ নিয়োগ না দিয়ে দুই বছর করে পালাক্রমে পছন্দের শিক্ষককে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দিয়ে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করা হচ্ছে। সবমিলিয়ে স্বনামধন্য এই প্রতিষ্ঠানে চলছে কর্তৃপক্ষের লাগামহীন স্বেচ্ছাচারিতা ও তহবিল তছরুপ। শিক্ষা বিস্তারের নামে প্রতিষ্ঠানটিকে ব্যবসায়িক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন স্থানীয় অভিভাবকরা। প্রতিষ্ঠানটির গবর্নিং বডির সভাপতি ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন। জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভর্তি নীতিমালা অনুযায়ী মতিঝিল মডেল স্কুল এ্যান্ড কলেজে ২০১৫ শিক্ষাবর্ষে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তির লটারি অনুষ্ঠিত হয় গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর। পরবর্তীতে ডিসেম্বরের শেষের দিক থেকে জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহেই ভর্তির পুরো কার্যক্রম শেষ হয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে চলতি বছর ২৪ ফেব্রুয়ারি বিভিন্ন শ্রেণীতে কমপক্ষে পাঁচ শ’ ছাত্রছাত্রী কোন লিখিত পরীক্ষা ছাড়াই ভর্তি করা হয়েছে। কয়েকজন শিক্ষার্থীর ভর্তির সিøপ এই প্রতিবেদকের কাছে রয়েছে। অভিযোগ পাওয়া গেছে, অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় ভর্তি হওয়া ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে ১ থেকে ২ লাখ টাকা নেয়া হয়েছে। ২০১০ সালের মে মাসে মতিঝিল মডেল স্কুল এ্যান্ড কলেজে শূন্যপদে (ইনডেস্কধারী) লিখিত পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান শাহনাজ আক্তার, যার বাবা শহীদ মুক্তিযোদ্ধা ও বড় ভাই রমনা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। এছাড়া স্বামীসহ পুরো পরিবার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। নিয়োগ পাওয়ার পর ওই শিক্ষিকার কাছে এককালীন টাকা চাওয়া হয়। কিন্তু নিয়োগের বিনিময়ে টাকা প্রদানে অস্বীকার করায় তাকে নানাভাবে হয়রানি করার পাশাপাশি এক পর্যায়ে বাধ্যতামূলক ছুটি, পরবর্তীতে বরখাস্ত করা হয়। এর প্রতিবাদে ওই শিক্ষিকা মামলা করলে গত ১ ডিসেম্বর উচ্চ আদালত তাকে চাকরিতে বহালের নির্দেশ দেয়। কিন্তু প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ আদালতের নির্দেশনা আমলে নিচ্ছে না। এদিকে আওয়ামী পরিবার ও মুক্তিযোদ্ধার সন্তানকে হয়রানি, ঘুষ চাওয়া, ভর্তি বাণিজ্যের বিষয়টি অবশ্য মিথ্যা বলে দাবি করেছেন সভাপতি আওলাদ হোসেন।
×