ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

মাশরাফিদের সংবর্ধনা এপ্রিলে

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ২৬ মার্চ ২০১৫

মাশরাফিদের সংবর্ধনা এপ্রিলে

মিথুন আশরাফ ॥ বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) কাছে একের পর এক প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি আবদার রাখছেন। কেন? প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠা ক্রিকেটারদের সংবর্ধনা দিতে চান। কিন্তু কোন আবদারই কী রাখতে পারবে বিসিবি? যতদূর জানা গেছে, তা বোধ হয় সম্ভব নয়। এত আবদার কী রাখা সম্ভব? বীরদের জন্য তাই একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের ব্যবস্থাই করা হবে। আর সেটি হবে, গণসংবর্ধনা, রাষ্ট্রীয সংবর্ধনা। এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে যেটি হতে পারে। ৬-৭ এপ্রিল হতে পারে। গণসংবর্ধনা কেন? তার পক্ষেও আছে যুক্তি। ক্রিকেটাররা যার যার জেলায়, এলাকায় সংবর্ধনা পাচ্ছেনই। এর সঙ্গে ক্রিকেটপ্রেমীরা এখনও ক্রিকেটারদের সরাসরি দেখতে পারেননি। রবিবার যখন দেশে ফিরলেন ক্রিকেটাররা, তখন ক্রিকেটপ্রেমীরা বিমানবন্দরের রাস্তায় সেই বিকেল থেকে দাঁড়িয়ে থেকেও ক্রিকেটারদের এক পলক দেখতে পারেননি। অন্যপথ দিয়েই ক্রিকেটারদের বাড়িতে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাই ভক্ত-সমর্থকরা প্রিয় ক্রিকেটারদের সংবর্ধনা দিতে পারেননি। জানাতে পারেননি শুভেচ্ছা। তাই এমন এক আয়োজন হবে, যেখানে ক্রিকেটারদের সংবর্ধনাও দেয়া হলো, ক্রিকেটপ্রেমীরাও তাতে শামিল থাকলেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সেই সংবর্ধনা দেবে কারা, সরকার না বিসিবি? সংবর্ধনা বিসিবির সঙ্গে জড়িত থেকে মূলত সরকারই দেবে। আর সেটি হয়ে যাবে রাষ্ট্রীয় সংবর্ধনা। সেই সংবর্ধনার স্থান এখনও নির্ধারিত না হলেও ঢাকাতেই, বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামেই তা হওয়ার সম্ভাবনা জোরালো। অবশ্য কোন কিছুই এখনও চূড়ান্ত হয়নি। বিসিবির অধিকসংখ্যক পরিচালক এখনও অস্ট্রেলিয়াতেই আছেন। ২৯ মার্চ ফাইনাল খেলা শেষেই দেশে ফিরবেন। সেই ফাইনালে থাকবেন বিসিবির সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনও। সবাই ফিরলে বিসিবিতে বসেই সংবর্ধনার তারিখ ও স্থান চূড়ান্ত হবে। বিসিবির মিডিয়া কমিটির চেয়ারম্যান জালাল ইউনুস শুধু বললেন, ‘এখনও কোন কিছুই চূড়ান্ত হয়নি। বিশ্বকাপ শেষে ২-৩ এপ্রিলের দিকে সব চূড়ান্ত হতে পারে। তবে গণসংবর্ধনা দেয়া হতে পারে। কারণ, ক্রিকেটারদের সামনে যেন ক্রিকেটপ্রেমীরাও থাকতে পারেন, ভক্ত-সমর্থকরাও থাকেন, সংবর্ধনায় শামিল হতে পারেন; সেই ভাবনাই করা হচ্ছে। সংবর্ধনা সরকার থেকেই হতে পারে। বিসিবি তো তাতে শামিল থাকবেই।’ বিসিবির একটি সূত্র মতে, ঢাকাতে যে গণসংবর্ধনা দেয়া হবে, সেটিই শেষ। কিন্তু শোনা যাচ্ছে, শুধু ঢাকাতেই নয়; মাশরাফিদের চট্টগ্রামেও সংবর্ধনা দেয়া হতে পারে। সেই সংবর্ধনার দিন তারিখও চূড়ান্ত। ১০ এপ্রিল দেয়া হবে তা। বিসিবির সাবেক পরিচালক সিরাজউদ্দিন মোহাম্মদ আলমগীরই তা নিশ্চিত করেছেন। বলেছেন, ‘হ্যাঁ, সব চূড়ান্ত। বিসিবির কাছ থেকে অনুমতিও নেয়া হয়েছে। আগামী ১০ এপ্রিল নগরীর আউটার স্টেডিয়ামে এ সংবর্ধনার আয়োজন হচ্ছে। বাংলাদেশ জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠক পরিষদ এ আয়োজন করছে। সংবর্ধনা অনুষ্ঠান নিয়ে ইতোমধ্যেই বিসিবির সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের সঙ্গেও চূড়ান্ত আলোচনা হয়েছে। সরকারী দল আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ ক্রীড়াঙ্গনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকেই এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হবে। আর বিসিবির পরিচালক, কমকর্তারা তো থাকবেনই।’ প্রশ্ন হচ্ছে, যদি ১০ তারিখ সংবর্ধনা দেয়া হয় তাহলে ক্রিকেটাররা যে এর মধ্যেই পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের জন্য প্রস্তুতি নেয়া শুরু করে দেবেন, তাতে কোন সমস্যা হবে না? আলমগীর শুধু এতটুকু বললেন, ‘এ জন্যই শুক্রবার দিনটি রাখা হয়েছে।’ ক্রিকেটারদের কোন সমস্যা না হওয়ার বিষয়টিও তুলে ধরলেন এভাবে, ‘ঢাকা থেকে বিমানে চড়ে ক্রিকেটাররা আসবেন চট্টগ্রামে। চট্টগ্রাম বিমানবন্দর থেকে সরাসরি ক্রিকেটাররা যোগ দেবেন সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে। অনুষ্ঠান শেষে রাতের খাবার খাবেন। এরপরই বিমানে চড়েই তারা ফিরে যাবেন ঢাকায়।’ প্রশ্ন হচ্ছে, চট্টগ্রামে যদি সংবর্ধনা দেয়া হয় তাহলে আন্তর্জাতিক ম্যাচ হওয়া খুলনাতেও তো একটি সংবর্ধনা ক্রিকেটারদের প্রাপ্যই। এভাবে করে সব স্থানে সংবর্ধনা দেয়া হলে, ক্রিকেটাররা পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের জন্য কখন প্রস্তুতি নেবেন? ১৫ এপ্রিল পাকিস্তান দল এসে পড়বে ঢাকায়। বিশ্বকাপে এত ভাল নৈপুণ্যের পর পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজে আরও ভাল কিছুর আশাই করছেন ক্রিকেট ভক্তরা। কিন্তু সংবর্ধনা আর সংবর্ধনায় যদি ভাসতে থাকেন মাশরাফি, সাকিব, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ ও রুবেলরা, তাহলে না আবার মূল ট্র্যাক থেকেই সরে যান ক্রিকেটাররা। চট্টগ্রামে সংবর্ধনা দেয়া হলে মেয়র পদে নির্বাচন করতে যাওয়া বিসিবির পরিচালক আজম নাসিরউদ্দিনের জন্য সুবিধাই অবশ্য হবে। ক্রিকেটারদের সংবর্ধনা দেয়ার সঙ্গে প্রচারও হয়ে যাবে ভালই। এ জন্যই কী তাহলে চট্টগ্রামে সংবর্ধনা দেয়ার ব্যবস্থা জোরশোরেই করা হচ্ছে? আলমগীর বললেন, ‘নাসির ভাই বিসিবির পরিচালক। তিনি তো থাকবেনই। এমনকি বিসিবির সব পরিচালকই থাকবেন।’ এখন দেখার বিষয়, সংবর্ধনার পর সংবর্ধনা পেতে থাকেন ক্রিকেটাররা; নাকি একটি গণসংবর্ধনা, রাষ্ট্রীয় সংবর্ধনা মিলে। যে সংবর্ধনায় উজ্জীবিত হয়েই ক্রিকেটাররা পাকিস্তানকে আবারও অন্তত একটি ওয়ানডেতে হারানোর প্রত্যয় নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বেন।
×