ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সেমির মহারণে আজ অস্ট্রেলিয়া-ভারত

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২৬ মার্চ ২০১৫

সেমির মহারণে আজ অস্ট্রেলিয়া-ভারত

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ ‘ক্যাপ্টেন কুল’ মহেন্দ্র সিং ধোনির ধুরন্ধর নেতৃত্ব, না মাইকেল ক্লার্কের ‘সুপার ক্লাস’। স্বাগতিক অসিদের ‘দুর্ধর্ষ’ পেস আক্রমণ, না বিশ্বসেরা ব্যাটিংয়ের সঙ্গে ভারতীয় পেস-স্পিনের ‘দুরন্ত’ কম্বিনেশন। ব্যাটিং-ব্যাকরণে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো গ্লেন ম্যাক্সওয়েল-ঝড়, না ‘ক্রেজি’ বিরাট কোহলির উইলোর শ্বাসন। রেকর্ড পঞ্চম শিরোপার পথে অসিদের আরও এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া, না টানা দ্বিতীয়বার ‘মোড়লিপণার’ মঞ্চে ছড়ি ঘোরাতে আরও একবার ভারতীয়দের উল্লাস? ঐতিহাসিক সিডনি ক্রিকেট গ্রাউন্ডের বাইশ গজে সাড়ে সাত ঘণ্টার ক্রিকেটীয় যুদ্ধে তারই ফয়সাল আজ। পারদ চড়ানো উন্মানার দ্বিতীয় সেমিতে মুখোমুখি দুই পরাশক্তি অস্ট্রেলিয়া ও ভারত। ১৯৮০ থেকে দু’দল এ পর্যন্ত ওয়ানডে খেলেছে ১১৭। অস্ট্রেলিয়ার ৬৭-এর বিপরীতে ভারতের জয় মাত্র ৪০। ২০১২-এর ফেব্রুয়ারি থেকে গত জানুয়ারি পর্যন্তই দু’দল মুখোমুখি হয়েছে ‘দশ’ বার। ১৮ জানুয়ারি ‘কার্লটন মিড’ মেলবোর্নে ত্রিদেশীয় সিরিজে শেষ দেখায় অসিদের জয় ৪ উইকেটে। তাছাড়া বিশ্বকাপের গত দশ আসরে ছয়বার সেমিতে উঠে কখনই হারেনি অস্ট্রেলিয়া, সব বারই খেলেছে ফাইনালে! টানা তিনবারসহ শিরোপা জিতেছে রেকর্ড চারবারÑ ১৯৮৭, ১৯৯৯, ২০০৩ ও ২০০৭। ভারতের সাফল্য দুইবার (১৯৮৩ ও ২০১১)। তার ওপর এবার ঘরের মাটিতে খেলছে মাইকেল ক্লার্কের দল। তাহলে আজকের সেমিতে এগিয়ে কে? Ñ উত্তর, পরিসংখ্যান একটা গাধা, বিশ্লেষকরা অন্তত তাই বলেন! অতীত পরিসংখ্যান দিয়ে কখনও ক্রিকেট হয় না। নির্দিষ্ট দিনে মাঠের শক্তিই আসল। যদি তাই হতো, তবে ভারতের এতদূর আসার কথা ছিল না! ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন হওয়া সত্ত্বেও বিশ্বকাপের আগে মহেন্দ্র সিং ধোনিদের অনেকেই গোনায় ধরেননি। শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখার আগে টেস্ট-ত্রিদেশীয় ওয়ানডে দুই সিরিজেই চরম ভরাডুবি হয় ক্রিকেট মোড়লদের। দীর্ঘ সাড়ে তিন মাসের সফরে এক প্রস্তুতি ম্যাচে দুর্বল আফগানিস্তান ম্যাচটি বাইরে রাখলে ব্যর্থতার গহব্বরে ঢুকে পড়েছিল ভারত। অথচ আসর শুরু হতেই কেমন ‘ভোজ বাজির’ মতো বদলে গেল দৃশ্যপট। নিউজিল্যান্ডের পর দ্বিতীয় অপরাজিত দল হিসেবে আজ ১১তম বিশ্বকাপের সেমিতে ধোনি বাহিনী! পুল ‘বি’ এ চিরশত্রু পাকিস্তানকে ৭৬ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়ে মিশন শুরু করে ভারত। ১৩০ রানের বিশাল জয়ের পথে দুর্ধর্ষ দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে তো ছেলে খেলাই করে তারা! আমিরাতকে ৯ ও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারায় ৪ উইকেটে। গ্রুপের শেষ দুই ম্যাচে দুর্বল আয়ারল্যান্ডকে ৮ ও জিম্বাবুইয়েকে ৬ উইকেটে উড়িয়ে দিয়ে শতভাগ সাফল্য নিয়ে কোয়ার্টার নিশ্চিত করে ধোনির দল। এই পর্যন্ত ঠিকই ছিল। বাংলাদেশের বিপক্ষে কোয়ার্টারে জিতেও বিশ্বকাপ ইতিহাসের বড় কলঙ্কে নাম লেখায় তারা! অনেকটা ‘পাতানো’ ম্যাচের আদলে আম্পায়রদের সহায়তায় ১০৯ রানের জয় নিয়ে শেষ চারে উঠে আসে ক্রিকেটের মোড়লরা। উপমহদেশীয় ক্রিকেটপ্রেমীদের কাছে এই একটি ম্যাচের জন্য আমৃত্যু জবাবদীহিতার সামনে পড়তে হবে আম্পায়ার, আইসিসি তথা ভারতকে! দুধের বাচ্চাও জানেন, এখন ‘আইসিসি’ মানে ‘ইন্ডিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল!’ তাতে বড় ক্ষতিটা হয়েছে উপমহাদেশীয় ক্রিকেটেরই। আজীবন সমর্থকরা যেখানে ভারত-পাকিস্তান বলতে অজ্ঞান ছিলেন, আজ তারা মনেপ্রাণে অস্ট্রেলিয়ার জয় কামনা করবেন! এটা হারের আগে ভারতের আরেক হার নয় তো কী? অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ফাইনালের টিকেট পেতে মোড়ল ভারতের জন্য মাঠের বাইরে ‘অশুভ’ চাপ হয়ে থাকবে এটিও। মাঠে ভারতের মূল শক্তি ব্যাটিং। যেখানে বড় নাম বিরাট কোহলি। যদিও ৬১ গড়ে ৩৬০ রানের পথে আসরে একটি মাত্র সেঞ্চুরি পেয়েছেন তিনি। যেখানে কুমার সাঙ্গাকারা সেঞ্চুরি ৪, ২টি করে সেঞ্চুরি আছে পাঁচ ব্যাটসম্যানের। সুতরাং আজ ‘ক্রেজি’ কোহলির কাছ থেকে বাড়তি কিছু চাইবে তার দেশ। ২ সেঞ্চুরি ও ১ হাফসেঞ্চুরির সাহায্যে ৩৬৭ রান করা শিখর ধাওয়ান আছে দুর্দন্ত ফর্মে। বাংলাদেশের বিপক্ষে সেঞ্চুরি পেয়েছেন ওপেনিংয়ে তার সঙ্গী রোহিত শর্মাও। আছেন ওয়ানডেতে দ্রুত রান তুলতে পারঙ্গম ধোনি-সুরেশ রায়না। সঙ্গে প্রতিভাবান অজিঙ্কা রাহানে। প্রয়োজনে ব্যাট হাতে কম যাবেন না অলরাউন্ডার রবিন্দ্র জাদেজা ও রবিচন্দ্রন অশ্বিন। সুতরাং ভারতের ব্যাটিংটাই হবে অস্ট্রেলিয়ার জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। টস জিতে আগে ব্যাটিং করলে অনায়াসে তিন-সাড়ে তিন শ’ রান করে বসতে পারে চ্যাম্পিয়নরা। অবিশ্বাস্য বোলিং করছেন ৬ ম্যাচে তৃতীয় সর্বাধিক ১৭ উইকেট শিকারি মোহাম্মদ শামি। ১১ উইকেট নিয়ে মোহিত শর্মাও ছন্দে। সঙ্গে ধোনির ঠা-া মাথার নেতৃত্ব ম্যাচে পার্থক্য গড়ে দিতে পারে বলেও বিশ্লেষকদের ধারণা। বল হাতে ভারতের শক্তিশালী ব্যাটিংলাইন থামানোর সামর্থ্য রয়েছে অস্ট্রেলিয়ান বোলারদের। যেখানে আক্রমণের পুরোধা হয়ে থাকবেন মিচেল স্টার্ক। বছর খানেক আগেও যাকে সেভাবে কেউ চিনত না, সেই স্টার্কই এবারের বিশ্বকাপে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর নাম। নিউজিল্যান্ডের ট্রেন্ট বোল্টের পর দ্বিতীয় সর্বাধিক ১৮ উইকেট তার, তাও ৬ ইনিংসে। যেখানে বল হাতে তার সঙ্গী প্রধান স্ট্রাইকার মিচেল জনসন পেয়েছেন ১০ উইকেট। তবে সর্বোপরি বিচারে চমৎকার ভারসাম্যপূর্ণ দল অস্ট্রেলিয়া। বিশেষ করে জেমস ফকনার, গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের মানের অলরাউন্ডার ভারতীয়দের জন্য বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারেন। ১ সেঞ্চুরি ও ২ হাফ সেঞ্চুরিতে ব্যাট হাতেও ভয়ঙ্কর ম্যাক্সওয়েল। বাংলাদেশের সঙ্গে বৃষ্টিতে প- ম্যাচের পয়েন্ট ভাগাভাগি ও নিউজিল্যান্ডের কাছে একমাত্র ম্যাচে হারা অসিরা পুল ‘এ’ এর দ্বিতীয় দল হিসেবে কোয়ার্টারে উঠে আসে। সেখানে পাকিস্তানকে ৬ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়ে আজ সেমিতে তারা। তবে টপঅর্ডার ব্যাটিংয়ে কিছুটা ব্যাকফুটে স্বাগতিকরা। ঠিক নিজেদের মতো ছন্দে নেই ওপেনার এ্যারন ফিঞ্চ-ডেভিড ওয়ার্নার, অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্করা। সেটি পুষিয়ে দিচ্ছেন স্টিভেন স্মিথ, ম্যাক্সওয়েল, ফকনার ব্র্যাড হ্যাডিনরা। গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে আজ ফিঞ্চ-ওয়ার্নার জ্বলে উঠবেন বলে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন পঞ্চম শিরোপার স্বপ্নে বিভোর ক্লার্ক। বিশ্বকাপে এ পর্যন্ত দু’দল মোট ১০ বার মুখোমুখি হয়েছে। যেখানে অস্ট্রেলিয়ার জয় ৭ ও ভারতের ৩টিতে। অবশ্য বিশ্বকাপের সেমিতে এই প্রথম মুখোমুখি হচ্ছে দুই পরাশক্তি। গতবার কোয়ার্টার ফাইনালে অস্ট্রেলিয়াকে সহজেই হারিয়ে ছিল ভারত।
×