ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে সামাজিক আন্দোলন চাই ॥ নাসিম

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ২৫ মার্চ ২০১৫

যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে  সামাজিক আন্দোলন  চাই ॥ নাসিম

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যক্ষ্মা নিয়ে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করার আহ্বান জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। তিনি বলেন, যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে ব্যাপক সফলতা দেখিয়েছে বাংলাদেশ। নিয়মিত চিকিৎসায় যক্ষ্মা রোগ শতভাগ নিরাময়যোগ্য। সরকারী ও বেসরকারী উদ্যোগে এ সফলতা এসেছে। জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচীর মাধ্যমে শনাক্তকৃৃত কফে যক্ষ্মা জীবাণুযুক্ত রোগীর চিকিৎসার সাফল্যের হার ৯৪ ভাগ। রোগ শনাক্তকরণ ও আরোগ্যের বর্তমান হার ধরে রাখতে পারলে ২০১৫ সালে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব হবে। তবে দেশের কিছু কিছু এলাকায় যক্ষ্মা রোগ ও রোগী নিয়ে কুসংস্কার বিদ্যমান রয়েছে। সমাজে বিদ্যমান যক্ষ্মাভীতি, কুসংস্কার, রোগীর প্রতি নেতিবাচক মনোভাব, রোগ গোপন করার প্রবণতার সমস্যাগুলো নিরসনে সংবাদকর্মীদের ভূমিকা রাখতে হবে। বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার মহাখালীর ব্র্যাক সেন্টারে যক্ষ্মা বিষয়ক সাংবাদিকতায় ‘ব্র্যাক মিডিয়া এ্যাওয়ার্ড- ২০১৫’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ আহ্বান জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। ব্র্যাকের ভাইস চেয়ারম্যান ডাঃ এ মুশতাক আর চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ দীন মোঃ নূরুল হক বক্তব্য রাখেন। দরিদ্রদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে সরকারকে সহযোগিতা করার জন্য গণমাধ্যমকে আরও অগ্রণী ভূমিকা রাখার আহ্বান জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, দেশে গরিব ও মধ্যবিত্তের চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। ১৬ কোটি মানুষের দেশে সরকারের একার পক্ষে সকল সুযোগ-সুবিধা দিয়ে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে বিত্তবানদের এগিয়ে আসতে হবে। দুস্থ ও বঞ্চিত মানুষের চিকিৎসার জন্য আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সমৃদ্ধ হাসপাতাল গড়ে তোলার জন্য দেশের শিল্পপতিদের অবদান রাখতে হবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দেশে যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে সরকার নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। পাশাপাশি বেসরকারী সংস্থাগুলোর সহায়তায় যথপোযুক্ত পদ্ধতিতে ঘরে ঘরে চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যক্ষ্মা একটি সংক্রামক রোগ, ফুসফুসের যক্ষ্মা রোগীর হাঁচি-কাশি থেকে বাতাসের মাধ্যমে একজন থেকে আরেকজনে ছড়ায়। তাই যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে সফলতা পেতে হলে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সামাজিক প্রতিরোধ বা আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। বিশেষ করে দেশের ভাসমান জনগোষ্ঠীর সংখ্যা অনেক। তাদের মধ্যে যক্ষ্মা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য গণমাধ্যমসহ সংশ্লিষ্ট সকলের বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে হবে। অধ্যাপক ডাঃ দীন মোঃ নূরুল হক বলেন, দেশে ২০১৪ সালে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচীর মাধ্যমে ১ লাখ ৯১ হাজার ১৫৫ জন যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। ২০১৩ সালে কফে যক্ষ্মা জীবাণুযুক্ত রোগীর চিকিৎসার ক্ষেত্রে সাফল্যের হার ৯৪ শতাংশ। যক্ষ্মা চিকিৎসায় সরকারের সাফল্য আশাব্যঞ্জক হলেও ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা বা এমডিআর নিয়ন্ত্রণ এখনও বড় চ্যালেঞ্জ। দেশে শিশু যক্ষ্মা রোগী শনাক্ত হয়েছে ৬৩১৮ জন। তাছাড়া ২০১৪ সাল পর্যন্ত ৩৬৯৯ জন এমডিআর রোগীকে চিকিৎসার আওতায় আনা হয়েছে। যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্য আশাব্যঞ্জক হলেও এ রোগ এখনও পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব হয়নি। এর কারণ, অপুষ্টি, দারিদ্র্য ও ঘনবসতির সঙ্গে যক্ষ্মার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। এখনও প্রতি লাখে নতুন যক্ষ্মারোগী ২২৪ জন। নতুন ও পুরাতন সমন্বয়ে এ সংখ্যা ৪০২ জন। দেশে যক্ষ্মার কারণে প্রতি লাখে মৃত্যুর হার ৫১ জন। এ সংখ্যা কমিয়ে আনতে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারী সংগঠন জনসচেতনতামূলক বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে বলে জানান অধ্যাপক ডা. দীন মোঃ নূরুল। এদিকে, যক্ষ্মা সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিতে সম্পৃক্ততা বাড়াতে ব্র্যাক গত ২০০৮ সাল থেকে ঢাকাসহ ৭ বিভাগের প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের সাংবাদিকদের সম্মাননা প্রদান করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় এবারের আয়োজন ‘যক্ষ্মা বিষয়ক সাংবাদিকতায় : ব্র্যাক মিডিয়া এ্যাওয়ার্ড- ২০১৫’। এবার প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও অনলাইন মিডিয়ার ২৩ জন সাংবাদিক এবং তিনটি গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানকে এ সম্মাননা দেয়া হয়।
×