ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঝুঁকিতে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বপাড়

প্রকাশিত: ০৬:৩৪, ২৪ মার্চ ২০১৫

ঝুঁকিতে বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বপাড়

নিজস্ব সংবাদদাতা, টাঙ্গাইল, ২৩ মার্চ ॥ বঙ্গবন্ধু সেতুর পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এমসিসিসি-এসইএল-ইউডিসি ও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের মৌখিক অনুমতি নিয়ে সেতুর পূর্বপাড়ে অবৈধভাবে ৮টি ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবাধে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে করে দেশের বৃহত্তর স্থাপনার পূর্বপাড় কালিহাতী অংশে মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। সেতুর প্রায় ৩শ’ গজ দক্ষিণে কালিহাতী উপজেলার বেলটিয়া, শামশৈল, চরসিঙ্গুলী ও আলীপুর মৌজায় ৮টি ড্রেজার মেশিন বসিয়ে আড়াই মাস যাবত অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। উত্তোলন করা বালুভর্তি ট্রাকগুলো সেতু সংলগ্ন গ্যাস ফিল্ডের ওপর দিয়ে যাতায়াত করছে। এতে দুর্ঘটনার আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে। জানা যায়, স্থানীয় বালু উত্তোলনকারীরা অবৈধভাবে ৮টি ড্রেজার দিয়ে দিনরাত অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করছে। পুরোদমে সিন্ডিকেট করে তারা নিয়মিত অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু সেতুর পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রধান প্রকৌশলী মোজাম্মেল হক ও বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের এ সাইটের প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদের মৌখিক অনুমতি নিয়েই বালু উত্তোলন করা হচ্ছে বলে দাবি করেছে ড্রেজার মালিকরা। এদিকে গত বছর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বাধীন ভ্রাম্যমাণ আদালত বালু সরবরাহের থানাঘাট নামক স্থানে ‘টিনশেড’ বেড়া দেয়া হয়। গত ৩-৪ মাস আগে কে বা কারা রাতের আঁধারে ওই বেড়া সরিয়ে ফেলে এবং বালু সরবরাহের রাস্তা খুলে যায়। ওই হাঁটা রাস্তাটি গ্যাস ফিল্ডের ওপর দিয়ে গেছে। মাটির নিচে রয়েছে গ্যাস লাইনের পাইপ। ওই পাইপের ওপর দিয়ে অবাধে ভারি ও সেমি-ভারি যানবাহন চলাচলে রয়েছে কঠোর নিষেধাজ্ঞা। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে গ্যাস লাইনের পাইপের ওপর দিয়ে প্রতিদিন ৪ শতাধিক ভারি ট্রাক দিয়ে বালু সরবরাহ করা হচ্ছে। বালু সরবরাহ করতে ব্যবসায়ীরা সরকারের অগ্রাধিকার ভিত্তিক ‘বুড়িগঙ্গা পুনঃখনন’ প্রকল্পের মুখ বেলটিয়া মৌজায় ধলেশ্বরী নদীতে বাঁধ নির্মাণ করেছে। এতে ধলেশ্বরী নদীর উত্তর-দক্ষিণে ভাগ হয়ে পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেছে। বর্ষা মৌসুমে নদীর মুখে চর পড়ায় প্রায় ১ হাজার ১শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়নাধীন ‘বুড়িগঙ্গা পুনঃখনন’ প্রকল্প ভেস্তে যাওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে। একাধিক ড্রেজার মালিক জানান, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের (বিবিএ) অধিগ্রহণ করা জায়গায় সাইট অফিসের প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ নগদ সাড়ে ৬ লাখ টাকার বিনিময়ে মৌখিকভাবে স্থানীয় প্রভাবশালী দুই নেতাকে ২টি ড্রেজার চালানোর অনুমতি দেয়। বাকি ৬টি ড্রেজার ব্যক্তি মালিকানা জায়গায় বসানো হয়েছে বলে দাবি করেন তারা। ড্রেজার মালিক ওবায়দুল তালুকদার জানান, বিবিএর বাইরে নদীতে ব্যক্তি মালিকানাধীন নিমজ্জিত ভূমি থেকে টাঙ্গাইল জেলা প্রশাসকের ‘এলআর ফান্ডে’ টাকা দিয়ে মৌখিক অনুমতি নিয়ে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। কিন্তু ৮টি ড্রেজারই বিবিএর জায়গায় বসানো হয়েছে। এ বিষয়ে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক মাহবুব হোসেন জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বালু উত্তোলনের কোন প্রকার অনুমতি দেয়া হয়নি। সেতু কর্তৃপক্ষ থানাঘাট ইজারা দেয়ায় ‘টিনশেড’ বেড়া সরিয়ে নেয়া হয়েছে। সেতু কর্তৃপক্ষের কারণেই অবৈধ বালু উত্তোলনকারীরা সুযোগের সদ্বব্যবহার করছে। বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের (বিবিএ) এ সাইটের প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ জানান, বালু উত্তোলন বা সরবরাহের কোন অনুমতি তারা দেননি। সেতুর পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে সেতুর যাতে ক্ষতি না হয় সেজন্য তারা সেতুর ১.২ কিলোমিটার দূরে ড্রেজার সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। থানাঘাট নামক এলাকার রাস্তাটি পায়ে হাটার রাস্তা, ভারি ট্রাক চলাচল করলে গ্যাস পাইপ লাইনের ক্ষতি হতে পারে বলে তিনি স্বীকার করেন। টাকা নিয়ে মৌখিক অনুমতি দেয়ার কথা অস্বীকার করেন তিনি।
×