ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের স্বাধীনতা উৎসব শুরু আজ

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ২৪ মার্চ ২০১৫

সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের স্বাধীনতা উৎসব শুরু আজ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ চলছে স্বাধীনতার অগ্নিঝরা মার্চ মাস। বাঙালীর মুক্তির বার্তাবহ মাসটি উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার থেকে শুরু হচ্ছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের স্বাধীনতা উৎসব। এবারের উৎসব সেøাগান ‘সন্ত্রাস নাশকতা-রুখে দাঁড়াও বাংলাদেশ’। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে তিন দিনের আয়োজনটি একযোগে চলবে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও ধানম-ির রবীন্দ্র সরোবর মঞ্চে। আজ মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে চারটায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে উৎসবের উদ্বোধন করা হবে। সম্মিলিতভাবে উৎসব উদ্বোধন করবেন একাত্তরের পঁচিশে মার্চ রাতে রাজারবাগে পাকবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিরোধ গড়ে তোলা পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আলোচনাসভায় বক্তব্য রাখবেন জোটভুক্ত বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। উদ্বোধনী পর্বে আলোচনা ছাড়াও রয়েছে জাতীয় সঙ্গীতের পরিবেশনা, উদ্বোধনী নৃত্য, মুক্ত আকাশে বর্ণিল বেলুন উড়িয়ে দেয়া এবং মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানমালার অংশ হিসেবে ২৫ মার্চ সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত রাজারবাগ স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে প্রদীপ প্রজ্বলনসহ সাংস্কৃতিক পরিবেশনার আয়োজন করা হয়েছে। এছাড়া মঙ্গল থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত শহীদ মিনার ও রবীন্দ্র সরোবরের অনুষ্ঠান শুরু হবে সাড়ে চারটায়। শেষ হবে রাত নয়টায়। স্বাধীনতা উৎসব প্রসঙ্গে জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ জনকণ্ঠকে বলেন, চলমান সন্ত্রাস ও নাশকতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী প্রকাশ থাকবে এবারের উৎসবে। গানের সুরে কিংবা কবিতার ছন্দে জানানো হবে সহিংসতাবিরোধী প্রতিবাদ। এছাড়া উৎসবে পরিবেশিত কয়েকটি পথনাটকেও থাকবে নৃশংসতা ও সন্ত্রাসবিরোধী বার্তা। নজরুল নাট্যোৎসবে মঞ্চস্থ ‘সেতুবন্ধ’ ও ‘শিল্পী’ কাজী নজরুল ইসলামকে নব আঙ্গিকে অনুরাগীদের কাছে উপস্থাপনের প্রয়াস নিয়েছে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। সেই সূত্রে জাতীয় কবির পাঁচটি নাটক নিয়ে একাডেমির নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগের ব্যবস্থাপনায় চলছে তিন দিনব্যাপী প্রথম নজরুল নাট্যোৎসব। একাডেমির এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার হলে চলমান উৎসবের দ্বিতীয় দিন ছিল সোমবার। এদিন সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টা ও সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় দুটি নাটকের প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার এ্যান্ড পারফরমেন্স স্টাডিস বিভাগ পরিবেশন করে ‘সেতুবন্ধ’। এছাড়া মঞ্চস্থ হয় লোকনাট্যদল সিদ্ধেশ্বরীর নাটক ‘শিল্পী’। সেতুবন্ধ নাটকটির নির্দেশনায় ছিলেন আল জাবির এবং শিল্পী প্রযোজনাটির পরিচালনায় ছিলেন ফরহাদ জামান পলাশ। সেতুবন্ধ নাটকে মানব শক্তি ও প্রকৃতির মধ্যে দ্বন্দ্ব উপস্থাপনের মাধ্যমে অভিনবত্বের সৃষ্টি করেছেন নাট্যকার। প্রযোজনাটির কুশীলবগণ হল মেঘ, বৃষ্টিধারা, তরঙ্গ, পদ্মা, জলদেবী, মীনাকুমারী, ঝড়, বজ্রশিখা, ইট, কাঠ, পাথর, লোহা, যন্ত্র ইত্যাদি। এরা প্রাণহীন, বাকশক্তি রহিত। কিন্তু প্রাকৃতিক এবং যান্ত্রিক এই বস্তুসমূহকে কবি সজীবতা দান করেছেন, তাদের মধ্যে প্রাণ সঞ্চার করে এক একটিকে জীবন্ত চরিত্ররূপে উপস্থাপিত করেছেন। নাটকে পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের সমাহারে গঠিত মানুষ যা করে, এই চরিত্রগুলো তাই করেছে। তারাও জল্পনা-কল্পনা করেছে। আবেগে উজ্জ্বল হয়েছে, হয়েছে উচ্ছল। ক্রোধে উন্মত্ত এবং সংগ্রামে সঙ্কল্প কঠোর। এভাবে ব্যক্তিত্বের সঞ্চার করা এবং তাদের দিয়ে আপনাপন ভূমিকায় অভিনয় করিয়ে নেয়া সম্ভবত ইতোপূর্বে বাংলা নাটকে দেখা যায়নি। জড় চরিত্রাবলীর মাধ্যমে একটি সম্পূর্ণ একাঙ্কিকা সৃষ্টির দৃষ্টান্ত বর্তমান কালেও দুর্লভ। প্রযোজনাটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন পান্না, তুষার, শুভ, ছোটন, তনিমা, রুমানা, অপরূপ, শামীম, কবিতা প্রমুখ। তিনটি দৃশ্য সংবলিত কাব্যিক দর্শনে সমৃদ্ধ একাঙ্ক নাটিকা ‘শিল্পী’। রূপক সাঙ্কেতিক গড়নের হলেও কাহিনীর মধ্যে কোন কোন জায়গায় বাস্তবিকতার ছায়া থাকায় নাটিকাটিকে বাস্তব সাঙ্কেতিক মনে করেন অনেকে। সিরাজ শিল্পী, চির সুন্দরের উপাসক বলে সাধারণ অনুভূতির বন্ধন স্বীকার করতে চায় না। কিন্তু তার স্ত্রী লায়লী তাকে সাধারণ অনুভূতিসম্পন্ন মানুষ হিসেবে পাওয়ার জন্য ব্যাকুল। প্রথম দৃশ্যে সিরাজের কথায় উভয়ের জীবন ও ভাবনার এই দ্বন্দ্ব পরিস্ফুট হয়েছে। উভয়ের টানাপড়েনের গল্প নিয়ে এগিয়েছে নাটকের কাহিনী। প্রযোজনাটির বিভিন্ন চরিত্রে রূপ দিয়েছেন মাস্উদ সুমন, সূচিতা, শবনম ও খাদিজা মোস্তারী মাহিন। আজ মঙ্গলবার উৎসবের শেষ দিন। সমাপনী দিনে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ‘রতিআরতির কাব্য’ এবং সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় প্রাঙ্গণেমোরের নাটক ‘দ্রোহ প্রেম নারী’ মঞ্চস্থ হবে। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের স্বাধীনতা উৎসব মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের আয়োজনে একইসঙ্গে চলছে উনবিংশতম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও স্বাধীনতা উৎসব। রবিবার থেকে শুরু হওয়া সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠানমালার দ্বিতীয় দিন ছিল রবিবার। একক ও দলীয় সঙ্গীত, বৃন্দ আবৃত্তি ও পথনাটকে সাজানো ছিল এদিনের আয়োজন। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি স্থপতি ও কবি রবিউল হুসাইনের স্বাগত বক্তব্যের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এরপর দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন স্বরচিত্র আবৃত্তি চর্চা ও বিকাশ কেন্দ্র এবং স্বরশ্রুতি। একক কণ্ঠে গান শোনান বিমান চন্দ্র বিশ্বাস। নৃত্য-গীতের সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশ নেয় লেকসার্কাস বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় এবং আজিমপুর গবর্নমেন্ট গার্লস স্কুল এ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীরা। সমবেত সঙ্গীত পরিবেশন করে ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠী ও আনন্দন। পথনাটক উপস্থাপন করে নাট্যভূমি।
×