ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বগুড়ায় মিল্ক ভিটায় দুধ কেনা বন্ধ, খামারিরা বিপাকে

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ২৪ মার্চ ২০১৫

বগুড়ায় মিল্ক ভিটায় দুধ কেনা বন্ধ, খামারিরা বিপাকে

সমুদ্র হক ॥ দেশের বৃহৎ দুধ উৎপাদনকারী সমবায় ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠান মিল্ক ভিটার বগুড়ার ৫০টি সংগ্রহ কেন্দ্র থেকে সরাসরি দুই বেলা দুধ কেনা প্রায় ২ মাস ধরে বন্ধ। কোন রকমে সপ্তাহের অর্ধেক দিন সকাল বেলা সংগ্রহের চাহিদার মাত্র ৫ ভাগের এক ভাগ দুধ কেনা হচ্ছে। মিল্ক ভিটার আওতাভুক্ত সকল খামারি মাথায় হাত দিয়ে বসেছে। মিল্ক ভিটায় দুধ দিতে না পারায় খামারিদের ওপর সুযোগটি নিচ্ছে শহরের মিষ্টি ও দই উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের এক শ্রেণীর মালিক। তারা মাঠ পর্যায়ে ফড়িয়া দালাল চক্র নামিয়ে দিয়ে কম দামে দুধ কিনে নিচ্ছে। এই অবস্থায় অনেক খামারি লোকসান গুনে গরু পালন করতে না পেরে পানির দরে গরু বেচেও দিচ্ছে। এই বিষয়ে মিল্ক ভিটার এক সূত্র জানায়, দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে মিল্কভিটার পণ্য উৎপাদন এবং বাজারজাতকরণ প্রক্রিয়া বিঘœ ঘটায় খামারিদের কাছ থেকে খুবই সীমিতভাবে দুধ কেনা হচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সকালে ও বিকেলে দুই বেলায় দুধ কেনা হবে। গাবতলীর মাঠ পর্যায়ে খোঁজখবর করে জানা যায়, খামারিরা সকালে গাইয়ের দুধ দুইয়ে মিল্ক ভিটায় নিয়ে যায়। তবে সকল খামরি দুধ দিতে পারে না। আগে মিল্ক ভিটা প্রতিদিন দুই বেলায় গড়ে ৬ হাজার লিটার দুধ কিনত। মাস দুয়েক দুধ কেনা বন্ধ রাখার পর বর্তমানে গড়ে প্রতিদিন সকালে ২ হাজার লিটার করে দুধ কিনছে। মিল্ক ভিটা খামারিদের কাছ থেকে প্রতি লিটার দুধ কেনে ৪২ টাকা থেকে ৪৫ টাকা লিটার দরে। মিল্ক ভিটা নির্দিষ্ট পরিমাণ দুধ কেনার পর যে সব খামারি দুধ বেচতে পারে না তারা ব্যর্থ হয়ে এলাকার হাটে-বাজারে ও কেউ শহরে গিয়ে পাড়া-মহল্লায় ঘুরে দুধ বিক্রি করে। শহরের ফড়িয়ারা এসব দুধ কম দামে কিনে তারা আবার মুফতে বাড়তি কিছু কামাই করে নেয়। সবচেয়ে বেশি লাভবান হয় শহর ও উপজেলার মিষ্টি ও দইয়ের দোকানীরা। মিল্ক ভিটা যখন নিয়মিত দুধ কিনতো তখন মিষ্টির দোকানীরাও প্রায় একই দামে দুধ কিনতো। বর্তমানে এইসব দোকানীরা কম দামে দুধ কিনে কার্যত খামারিদের ঠকাচ্ছে। গাবতলীর আকন্দপাড়ার ঘোষপাড়ায় দেখা যায় ভরা বালতি দুধ নিয়ে নারী শ্রমিকরা মিল্ক ভিটার দিকে যাচ্ছে। সকাল ৮টার মধ্যে মিল্ক ভিটার দুধ কেনা শেষ হলে তারা ফিরে যায়। আকন্দপাড়া দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতির ব্যবস্থাপক দিবাকর ঘোষ জানালেন দুধ বেচতে না পারায় গত দুই মাসে তাকে অন্তত ৪০ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে। প্রতিদিন তিনি মিল্ক ভিটায় দুধ সরবরাহ করতেন গড়ে ৭শ’ লিটার। সেখানে তা নেমে এসেছে গড়ে ২শ’ লিটারে। এই অবস্থায় গাভী লালন পালন করা কঠিন হয়ে পড়েছে। দিবাকর ঘোষের মতো একই অবস্থা ওই এলাকার সকল খামারির। কয়েক খামারি অর্ধেক দামে গাভী বিক্রি করে দিয়েছেন। মিল্ক ভিটা সূত্র জানায় বগুড়া কেন্দ্রের ৫০টি সমিতির প্রায় ৩ হাজার খামারির কাছ থেকে প্রতিদিন গড়ে ৬ হাজার লিটার দুধ সংগ্রহ হতো। বর্তমানে এই পরিমাণ দুধ কেনা সম্ভব হচ্ছে না। উর্ধতন কর্মকর্তার নির্দেশ পেলে পুনরায় এই পরিমাণ দুধ কেনা হবে। সমবায় সমিতির সদস্য খামারিরা জানায় গাভী লালন করে যে পরিমাণ দুধ মিলছে তা বেচতে গিয়েই হোঁচট খেতে হচ্ছে।
×